মঙ্গলবার, ৭ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » নিম্ন আয়ের ৬০ শতাংশ মানুষের ঘরে খাবার নেই, ধারদেনায় চলছেন জীবন-জীবিকা
নিম্ন আয়ের ৬০ শতাংশ মানুষের ঘরে খাবার নেই, ধারদেনায় চলছেন জীবন-জীবিকা
বিবিসি২৪নিউজ,নুরুল ইসলাম খান,ঢাকা: করোনাভাইরাসে নিম্ন আয়ের ৬০ শতাংশ মানুষের ঘরে খাবার নেই: ধারদেনায় চলছেন জীবন-জীবিকা এই পরিস্থিতিতে চরম দারিদ্র্যের হার আগের তুলনায় বেড়ে গেছে ৬০ শতাংশ। নিম্ন আয়ের মানুষের আয় অনেক কমে গেছে।দেশের ৬৪ জেলায় ২ হাজার ৬৭৫ জন নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে পরিচালিত বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের চালানো এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের পদক্ষেপের ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ জীবিকার দিক থেকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জরিপের ফলাফল থেকে বেরিয়ে আসে।
সেখানে বলা হয়, “এর ফলে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৯% চরম দরিদ্রে পরিণত হয়েছেন অর্থাৎ দারিদ্র্যরেখার নিম্নসীমার নিচে নেমে গেছেন। করোনাভাইরাসের পূর্বে আয়ের ভিত্তিতে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২৪% শতাংশ ছিলেন দারিদ্র্যরেখার নিম্নসীমার নিচে এবং ৩৫% শতাংশ ছিলেন দারিদ্র্যরেখার ঊর্ধ্বসীমার নিচে। এতে বোঝা যায় চরমদারিদ্র্য আগের তুলনায় বর্তমানে ৬০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
করোনা মহামারির আগে জরিপে অংশ নেয়া ২,৬৭৫ জনের গড় আয় ছিল ১৪,৫৯৯ টাকা। যাদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ জানিয়েছে এই করোনা প্রাদুর্ভাবের পর তাদের আয় কমেছে। মার্চ ২০২০ এ এসে তাদের গড় আয় দাঁড়িয়েছে ৩,৭৪২ টাকায়, অর্থাৎ তাদের পারিবারিক আয় ৭৫ শতাংশের মতো কমে এসেছে। চট্টগ্রাম (৮৪%), রংপুর (৮১%) এবং সিলেট বিভাগের (৮০%) মানুষের আয় কমেছে সবচেয়ে বেশি।”
সরকারি ছুটি বা সামাজিক দূরত্বের কারণে ৭২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন অথবা তাদের কাজ কমে গেছে বলে জরিপের ফলাফলে বেরিয়ে আসে। ৮ শতাংশ মানুষের কাজ থাকলেও এখনও বেতন পাননি বলে ব্র্যাকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
করোনার সংক্রমণ শুরু হলে রাজধানীর স্বল্প বা নিম্ন আয়ের অনেকে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। প্রায় তিন মাস কাটিয়েছেন গ্রামেই। ঘরবন্দী সময়ে সঞ্চয়ের সবটুকু শেষ হলে প্রায় সবাই নিকটজনদের কাছ থেকে ধার করে চলেছেন। তাঁরা কেউ ফুটপাতের ফল বিক্রেতা, দরজি, রেস্তোরাঁকর্মী, সেলুনকর্মী, কেউবা ঝালমুড়ি বিক্রেতা। তাঁদের রাজধানীতে কারও কেটেছে ৪ বছর, কারও ৪৫ বছর। তবে করোনাভাইরাসের এই সময়ে সবার কাছেই ঢাকা হয়ে উঠেছে অচেনা।
করোনাকালে তাঁদের জীবন ও জীবিকা সম্পর্কে জানা যায়: জুন মাসের শুরুতে সরকার সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু ও অফিস খুলে দিলে তাঁরা ফিরেছেন নিয়মিত পেশায়। কিন্তু ‘নতুন স্বাভাবিক’ জীবন তাঁরা ফিরে পাননি।ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার ঋণও নিয়েছেন কেউ কেউ বা যাঁরা স্বল্প পুঁজিতে রাজধানীর ফুটপাতে ব্যবসা করেন, তাঁরা বলছেন, আগের মতো আয় হচ্ছে না। যাঁরা দৈনিক মজুরিতে কাজ করতেন, তাঁদের অনেকে কাজ হারিয়ে বিকল্প পথ বেছে নিয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে সাইকেলে করে যাঁরা খাবার ও পণ্য সরবরাহ করেন, তাঁরা বলছেন, ঝুঁকি থাকলেও খেয়ে-পরে ভালো আছেন। একই কথা বলেছেন সবজি বিক্রেতারাও।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিমেকারস কনসালটিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার স্বনন শাহরিয়ার বলেন, ‘এসইসি বা আর্থসামাজিক শ্রেণিবিভাগে ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা বিবেচনা করে পুরো সমাজের রোজগেরে মানুষদের পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। এসইসি গ্রিডের ‘ডি’ শ্রেণিভুক্ত নিম্ন আয়ের এই মানুষেরা আমাদের সমাজের প্রায় ৩০ শতাংশ। যাঁরা পেশায় শিক্ষিত কৃষক, হাতের কাজে দক্ষ, খুচরা ব্যবসায়ী, অশিক্ষিত পেশাজীবী বা স্বল্পশিক্ষিত বিক্রয়কর্মী। করোনার সময়ে বেশি ভুগছেন এই শ্রেণির মানুষ।’
প্রায় সবাই রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও করোনাকালীন সরকারি উদ্যোগ সম্পর্কে অবগত। এলাকার সচ্ছল মানুষের সহযোগিতা কেউ কেউ পেলেও সরকারি অনুদান পাননি কেউই। বাবুল বিশ্বাস তাই আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘সরকাররে ভাই দোষ দেই না, সরকার তো ঠিকই গরিব মানুষের জন্য দেয়, মেরে খায় তো এলাকার নেতারা।’
খেটে খাওয়া এই মানুষেরা ক্রান্তিকালে কষ্ট করে দিন কাটিয়েছেন, এখনো ঠিকমতো আয় করতে পারছেন না, কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, সে নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। তবু প্রত্যেকেই মনে করেন, এই অসময় কেটে যাবে, তাঁরাও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেন, আয়ও বাড়বে, পরিশোধ করতে পারবেন ধারদেনা।