বুধবার, ১ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশে করোনা জুন মাসে এক লাখ আক্রান্ত
বাংলাদেশে করোনা জুন মাসে এক লাখ আক্রান্ত
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা : বাংলাদেশে ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৫৮ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত ৯৯ হাজার ৭২০ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা মোট আক্রান্তের ৬৬ দশমিক ৮১ ভাগ। নতুন করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যত রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে, তার অধিকাংশ ঘটেছে গত জুন মাসে।
বুধবার পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ৮৮৮ জন। গত এক মাসেই মারা গেছেন ১ হাজার ২১৬ জন, যা মোট মৃত্যুর ৬৪ দশমিক ৪১ শতাংশ।
করোনাভাইরাসে বিস্তার ঠেকাতে গত মার্চের শেষ দিকে জারি করা ‘লকডাউন’ এক মাস আগেই তুলে নেওয়া হয়েছিল। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ মোকাবেলায় কার্যক্রমে ধীরগতি, লকডাউন শিথিল করায় দ্রুত বাড়ছে এই সংক্রমণ। এখন লাগাম না টানলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর এ সংখ্যা আরও বাড়বে।
বিশ্বে মহামারী রূপ নেওয়া কোভিড-১৯ রোগী বাংলাদেশে প্রথম ধরা পড়েছিল গত ৮ মার্চ, ওই ব্যক্তি ইতালি থেকে এসেছিলেন।
এরপর ১ এপ্রিল পর্যন্ত ২৩ দিনে ৫৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে। পরবর্তীতে ১ মে সংখ্যাটি ৮ হাজার ছাড়ায়। ১ জুন পর্যন্ত শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ৫৩৮ জন।
এ বছরের ১৮ মার্চ প্রথম একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে আইইডিসিআর। ১ এপ্রিল পর্যন্ত ২৩ দিনে মারা যায় ৬ জন। এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত ১৭০ জন, ১ জুন পর্যন্ত ৬৭২ জন মারা যায়।
গত ৩১ মে সাধারণ ছুটি তুলে দেওয়ার সঙ্গে বিভিন্ন বিধিনিষেধ অনেকটাই শিথিল করেছে সরকার। তাতে মানুষের বিচরণ অনেক বেড়েছে, যে ঝুঁকির কথা বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলেন।
হাতিরঝিলে মানুষের এই ভিড় দেখে বোঝার উপায় নেই সারা দেশে অতি সংক্রামক রোগ করোনাভাইরাস মহামারী চলছে। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
হাতিরঝিলে মানুষের এই ভিড় দেখে বোঝার উপায় নেই সারা দেশে অতি সংক্রামক রোগ করোনাভাইরাস মহামারী চলছে।
সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে মানুষের উদাসীনতা সংক্রমণ বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করেন আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক ডা. মুশতাক হোসেন।
তিনি বুধবার বলেন, “ঈদের পর সব বিষয়ে শৈথিল্য দেখা গেছে। মানুষ মাস্ক পরছে না, পরলেও কথা বলার সময় খুলে ফেলছে, থুতনির নিচে রাখছে।
“এসব কারণে সংক্রমণের হার বেড়ে গেছে। যারা ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ তাদের কাছে সংক্রমণ পৌঁছে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে।”
তিনি বলেন, নতুন করে সব এলাকায় একই সঙ্গে লকডাউন করা। সংক্রমিত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে তাকে আইসোলেশন করলে সংক্রমণ কিছুটা রোধ করা সম্ভব হবে।”
পরীক্ষার উপর জোর দিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, “সক্রিয়ভাবে কেইস শনাক্ত করার ক্ষেত্রেও আমাদের দুর্বলতা রয়ে গেছে। নিজেদের উদ্যোগে যারা আসছে, তাদের পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দরকার ঘরে ঘরে গিয়ে যাদের লক্ষণ আছে, তাদের খুঁজে বের করে টেস্ট করতে পারুক বা না পারক, তাদের আলাদা করে ফেলা।
“বাসায় আইসোলেশন করতে পারলে ভালো। না পারলে আইসোলেশন কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। এই কাজগুলো করতে না পারলে এটা অব্যাহত থাকবে। মৃত্যুর সংখ্যাও কিন্তু বাড়ছে।”
ঢাকার মিরপুরে সরকারী ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহের আগে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
ঢাকার মিরপুরে সরকারী ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহের আগে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে আগামী ১৫ দিনে তা দুই লাখ ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহমেদ।
তিনি বলেন, “এখন যেভাবে বাড়ছে তাতে,আগামী ১৫ দিনে দেখবেন যে আরও এক লাখ বেড়ে গেছে। এক লাখ হতে যেমন ১ এক মাস লেগেছে, সামনের এক মাসে আমরা হয়ত দুই লাখ পাব।”
সংক্রমণের বিস্তার রোধে নেওয়ার সরকারের কার্যক্রম সঠিকভাবে চললে এক মাসেই এক লাখ লোক শনাক্ত হত না বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক এই মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, রেড জোন চিহ্নিত করে লকডাউন দেওয়ার পদ্ধতি কার্যকর প্রমাণিত হলেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে ধীরগতিতে।
“লাল, সবুজ, হলুদ কার্যক্রম যেটা হওয়ার কথা সেটাও হচ্ছে না। এক মাস আগে থেকে এটা নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি জায়গায় করে সফল হয়েছি। কিন্তু এরকম একটা সফল বিষয়ও যদি আমরা কাজে না লাগাই তাহলে কিভাবে হবে?”
ডা. বেনজীর বলেন, “সংক্রমণ ঠেকাতে আমাদের কার্যক্রম যে সঠিক পথে যাচ্ছে না, তা বোঝা যায় সংক্রমিত দেশগুলোর তালিকা দেখলে। এক সময় বাংলাদেশ ১১৭তম ছিল, এখন ১৭ তে। দুয়েকদিনের মধ্যে হয়ত আরও একটা দেশকে অতিক্রম করব। ঠিকমতো কার্যক্রম চললে এই পর্যায়ে আসত না।”