বুধবার, ১ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » এক উজ্জল নক্ষত্র লতিফুর রহমানের বিদায়
এক উজ্জল নক্ষত্র লতিফুর রহমানের বিদায়
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক,ঢাকা: বিশিষ্ট শিল্পপতি ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের চিওড়া ইউনিয়নের চিওড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তার জন্ম ১৯৪৫ সালের ২৮ আগস্ট ভারতের জলপাইগুড়িতে। লতিফুর রহমান দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার মালিক। এছাড়া আন্তর্জাতিক ফুড চেইন পিৎজা হাট ও কেএফসি, পেপসি এবং ফিলিপসের বাংলাদেশে ফ্রাঞ্চাইজির মালিক ছিলেন তিনি।
দীর্ঘ চার বছর পর বুধবার ছিল আদরের নাতি ফারাজ আইয়াজ হোসেনের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। এ দিনই মৃত্যুবরণ করেন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান। দীর্ঘ দুই বছর ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। বেশির ভাগ সময় তিনি গ্রামের বাড়িতেই থাকতেন বলে নিশ্চিত করেছেন বাড়ির কেয়ারটেকার মো. হুমায়ুন।
তিনি ২০১২ সালে মর্যাদাপূর্ণ বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন।বর্তমানে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক গ্রুপের অন্যতম একটি হলো ‘ট্রান্সকম গ্রুপ’। দেশের ব্যবসা খাতে বিশাল অবদান রাখা গ্রুপটির উত্থান খুব একটা মসৃণ ছিল না। দেশ স্বাধীনের মাত্র এক বছর পর ১৯৭২ সালে প্রায় শূন্য হাতে যাত্রা শুরু করেছিলেন গ্রুপটির কর্ণধার লতিফুর রহমান। শুরুটা চা চাষের মাধ্যমে। তাও আবার ৫০ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে। এরপর পরিশ্রম ও ব্যবসায়িক দক্ষতার মাধ্যমে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপে পরিণত হয়। চা চাষের মাধ্যমে শুরু করা ট্রান্সকম গ্রুপের আওতায় এখন ১৬টি কোম্পানি। বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি।
ছোট প্রতিষ্ঠানটিকে ধীরে ধীরে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপে রূপান্তরিত করেছেন লতিফুর রহমান। ব্যবসায় নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১২ সালে বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার পান। ২০০৯ সাল থেকে ব্যবসাখাতে স্বীকৃতিস্বরূপ এ পদক দেয়া হচ্ছে।
সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুল দিয়ে লতিফুর রহমানের পড়াশোনা শুরু হয়েছিল। সেখান থেকে চলে যান হলিক্রস স্কুলে। সে সময় হলিক্রসে ছেলেরাও পড়ত। ১৯৫৬ সালে যান শিলংয়ে এবং সেন্ট এডমন্ডস স্কুলে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে যান।
১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা, এসব কারণে ঢাকায় ফিরে আসেন লতিফুর রহমান। এসে পাটের ব্যবসায় ঢুকে যান। তার বাবা তখন চাঁদপুরে গড়ে তুলেছেন ডব্লিউ রহমান জুট মিল। ১৯৬৩ সালে কাজ শুরু হলেও উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬৬ সালে।
সেখানে ট্রেইনি হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি ১৯৬৬ সালে। দেড় বছর কাজ শেখার পর নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন। লতিফুর রহমান ১৯৭২ সালে যখন সবকিছু নতুন করে শুরু করেছিলেন, তখন তার সঙ্গে কাজ করতেন মাত্র পাঁচজন। চট্টগ্রামে ছিল একটা অফিস।
ট্রান্সকম গ্রুপের যাত্রা শুরু চা চাষের মাধ্যমে। ১৯৭৪ সালে নেদারল্যান্ডসের রটারডামভিত্তিক ভ্যান রিস কোম্পানির কাছ থেকে চা সরবরাহের অর্ডার পায় তার কোম্পানি। তখন বিশ্বে চা সরবরাহকারীদের মধ্যে সেরা কোম্পানি ছিল রটারডামভিত্তিক ভ্যান রিস।
বিশ্বের নামকরা প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কাজ পেয়ে উত্তরা ব্যাংক থেকে ৫০ লাখ টাকার ঋণ নেন লতিফুর রহমান। বাবার পাটকলের একটা হিসাব ব্যাংকটিতে থাকায় ঋণের ব্যবস্থা করেন উত্তরা ব্যাংকের তৎকালীন মুখ্য ব্যবস্থাপক মেজবাহ উদ্দীন।
এখন বাংলাদেশের অন্যতম একটি বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান, যার রয়েছে ১৬টি কোম্পানি। ১০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে এ গ্রুপ। গ্রুপটির বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ এখন সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি।
লতিফুর রহমান নেসলে বাংলাদেশ, হোলসিম বাংলাদেশ এবং ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স ও ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি লিন্ডে বাংলাদেশ এবং ব্র্যাকের গভর্নিং বোর্ডের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি আইসিসি বাংলাদেশের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন তিনি। শেষ সময়গুলোর বেশিরভাগ সময়ই তিনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাড়িতেই থেকেছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল এ মানুষটি বাংলাদেশে অতিপরিচিত এক নাম। লতিফুর রহমান জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো পরিচালনাকারী মিডিয়া স্টার এবং ডেইলি স্টার পরিচালনাকারী মিডিয়াওয়ার্ল্ড লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বাংলাদেশের বাজারে আন্তর্জাতিক ফাস্টফুড চেইন পিৎজা হাট ও কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন (কেএফসি) প্রচলনের জন্য সমাধিক পরিচিত বিশিষ্ট এই ব্যবসায়ী।
ব্যবসায় নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১২ সালে বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার পান। ২০০৯ সাল থেকে ব্যবসাখাতে স্বীকৃতিস্বরূপ এ পদক দেয়া হচ্ছে।
লতিফুর রহমান পড়াশোনা শুরু করেন সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলে। সেখান থেকে চলে যান হলিক্রস স্কুলে। সে সময় হলিক্রসে ছেলেরাও পড়ত। ১৯৫৬ সালে যান শিলংয়ে এবং সেন্ট এডমন্ডস স্কুলে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে যান।
সেখানে ট্রেইনি হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি ১৯৬৬ সালে। দেড় বছর কাজ শেখার পর একজন নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন। লতিফুর রহমান ১৯৭২ সালে যখন সবকিছু নতুন করে শুরু করেছিলেন, তখন তার সঙ্গে কাজ করতেন মাত্র পাঁচজন।
লতিফুর রহমানের ট্রান্সকম গ্রুপের উৎপত্তি হয়েছিল চা চাষের মাধ্যমে, এখন বাংলাদেশের অন্যতম একটি বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান এটি; যার রয়েছে ১৬টি কোম্পানি। ১০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান করেছে এ গ্রুপ।