শুক্রবার, ২৬ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | শিরোনাম | সাবলিড » বিতর্কিত লাদাখে গালওয়ান উপত্যকা- চীনের নতুন স্থাপনা’ নির্মাণ?
বিতর্কিত লাদাখে গালওয়ান উপত্যকা- চীনের নতুন স্থাপনা’ নির্মাণ?
বিবিসি২৪নিউজ,অমিত ঘোষ,দিল্লি থেকে: মাক্সার নামে মহাকাশ প্রযুক্তি সংস্থার নতুন উপগ্রহ চিত্রে প্রকাশ পেয়েছে যে হিমালয় পর্বতে চীন ভারত সীমান্তে যেখানে দুই সেনা বাহিনীর মধ্যে হাতাহাতি সংঘর্ষে ২০জন ভারতীয় সেনা এমাসের গোড়ায় মারা গেছে, তার কাছেই চীন নতুন স্থাপনা তৈরি করেছে। গত মাসে যে জায়গায় কিছুই ছিল না সেখানে এখন দেখা যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার, তাঁবু এবং সামরিক সরঞ্জাম মজুত করার ইউনিট।
দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে বিতর্কিত এলাকা নিয়ে নতুন সংঘর্ষে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘর্ষে চীনের পক্ষেও হতাহতের কথা বলা হচ্ছে যদিও চীন এ খবর নিশ্চিত করেনি।
দুই পক্ষ এই উত্তেজনা প্রশমনের জন্য যখন আলোচনা চালাচ্ছে তখন সর্বসাম্প্রতিক এই ছবিগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।
নতুন এই ছবিগুলোতে তারিখ রয়েছে ২২শে জুন। মাক্সার নামে মহাকাশ প্রযুক্তি সংস্থা এই ছবিগুলো তুলেছে। সীমান্তে গালওয়ান নদীর পাশে চীন যে স্থাপনাগুলো গড়ে তুলেছে বলে মনে করা হচ্ছে, রয়টার্স সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হচ্ছে, জুন মাসের গোড়ায় আকাশ থেকে তোলা ছবিতে সেগুলোর কোন অস্তিত্ব ছিল না।
লাদাখে গালওয়ান উপত্যকায় বিরোধপূর্ণ সীমান্তে দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটে ১৫ই জুন। এর কয়েক সপ্তাহ আগেই দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের সামরিক কমান্ডাররা “দু দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলো মেনে সীমান্ত এলাকায় কোনরকম বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি” করতে সম্মত হয়েছিলেন।
সংঘাতের পর, এবং সংঘাত পরবর্তী পাল্টাপাল্টি দোষারোপের পর দুই দেশই প্রকাশ্যে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করছেন।
বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, ভারতের বিদেশ মন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর এবং চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রী হি ওয়াং ই “পুনরায় এই বলে আশ্বস্ত করেন যে ৬ই জুন দুই দেশের সিনিয়র কমান্ডারদের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমন ও বিরোধ অবসান নিয়ে যে সমঝোতা হয়েছে তা তারা আন্তরিকতার সাথে বাস্তবায়ন করবেন।”
ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অজয় শুক্লা এj টুইট বার্তায় বলেছেন “গালওয়ান উপত্যকায় এলএসি-তে (প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায়) ভারতের অংশে দেড় কিলোমিটার ভেতরে একটি বড় চীনা শিবির দেখা যাচ্ছে।”
ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমও ভারতীয় সেনাবাহিনীকে উদ্ধৃত করে বলছে ১৫ই জুনের সংঘাত এবং তার আগে অনুষ্ঠিত দুই দেশের কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের মাঝখানে কোন একটা সময়ে চীন এই স্থাপনা তৈরি করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিরোধপূর্ণ যে এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছিল সেখানে মে মাসে তোলা স্যাটেলাইট ছবিতে এই স্থাপনাগুলো ছিল না।
সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক এবং লাদাখ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পি স্টবডান বিবিসিকে বলেছেন এই নির্মাণ “উদ্বেগজনক”।
“ভারত সরকার কোন ছবি প্রকাশ করেনি বা এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি। কাজেই গোটা বিষয়টার মূল্যায়ন করা কঠিন। তবে বেসরকারি একটি সংস্থার প্রকাশ করা এই ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে যে চীন অবকাঠামো তৈরি করেছে এবং পেছু হঠেনি।”
বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন:
এই ছবি থেকে বলা হচ্ছে দুই দেশের সেনা অধিনায়কদের মধ্যে বৈঠকের পর গালওয়ান উপত্যকায় চীন এই নির্মাণকাজ চালিয়েছে।
গালওয়ান উপত্যকা এলাকায় প্রায় ১৪ হাজর ফুট (৪,৩০০ মিটার) উচ্চতায় দুর্গম পাহাড়ী চূড়ায় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রায় গালওয়ান নদীত পড়ে ২০জন ভারতীয় সৈন্যের নিহত হবার খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
আরও অন্তত ৭৬জন ভারতীয় সেনার আহত হবার খবরও দেয়া হয়। চীনের পক্ষে হতাহত সম্পর্কে কোন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
দুই দেশের সেনারা এই সংঘর্ষে কোন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি, কারণ ১৯৯৬ সালের এক চুক্তিতে ওই এলাকায় বন্দুক বা কোন আগ্নেয়াস্ত্র বা বিস্ফোরক ব্যবহার না করার ব্যাপারে দুই দেশ একমত হয়েছিল।
চীন ও ভারতের মধ্যে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকা যা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা হিসাবে পরিচিত সেখানে সীমান্ত স্পষ্টভাবে চিহ্ণিত নয়। সেখানে নদী, হ্রদ ও বরফঢাকা পাহাড় থাকার কারণে এই নিয়ন্ত্রণ রেখা সুনির্দিষ্ট থাকে না, তাতে বদল ঘটতে পারে।
পৃথিবীর দুটি সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনী সীমান্তের একাধিক জায়গায় বিভিন্ন সময়ে মুখোমুখি সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। ভারতের অভিযোগ চীন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় হাজার হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে এবং তাদের অভিযোগ চীন সেখানে ভারতের ৩৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার (১৪,৭০০ বর্গ মাইল) এলাকা অধিকার করে রেখেছে। এই সীমান্ত নিয়ে দুদেশের মধ্যে গত তিন দশক ধরে চলা বিরোধের বহু দফা আলোচনার পর এখনও সমাধান হয়নি।
তবে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে একটাই - ১৯৬২ সালে- যে যুদ্ধে শোচনীয় পরাজয় মেনে নিতে হয় ভারতকে।
উত্তর পূর্বে সিকিম রাজ্যের সীমান্তে মে মাসে ভারতীয় ও চীনা সৈন্যদের মধ্যে শারীরিক সংঘর্ষ হয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালে ডোকলামে সীমান্তবর্তী সড়ক নিয়ে বিরোধে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত হয়েছে।
বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময়ে দুদেশের মধ্যে যখনই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে দুটি দেশ উস্কানি ও প্ররোচনা সৃষ্টির জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করেছে।
ভারত লাদাখে এলএসি বরাবর এই প্রত্যন্ত ও স্পর্শকাতর এলাকায় যে সড়ক নির্মাণ করেছে বিশেষজ্ঞরা বলছে সেটাই উত্তেজনায় নতুন করে ইন্ধন জুগিয়েছে।
কোনরকম সংঘাত তৈরি হলে এই সড়ক ভারতকে দ্রুত সামরিক সরঞ্জাম ও সেনা নিয়ে যেতে বড়ধরনের সুযোগ করে দেবে। বিশ্লেষকরা বলছেন ভারতের এই সড়ক তৈরির সিদ্ধান্তই চীনকে ক্ষুব্ধ করেছে।