সোমবার, ২২ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশে কর ফাঁকিবাজদের ব্যাংকের ঋণ নয়
বাংলাদেশে কর ফাঁকিবাজদের ব্যাংকের ঋণ নয়
বিবিসি২৪নিউজ,অর্থনীতিক প্রতিবেদক,ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছেন,কোনো ব্যক্তির আয়কর রিটার্ন দাখিলে প্রদর্শিত সম্পত্তির সঙ্গে বার্ষিক আর্থিক বিবরণী বা অডিট রিপোর্টের সম্পত্তির মাধ্যে যদি কোনো গরমিল থাকে তাহলে তিনি ব্যাংক ঋণের জন্য বিবেচিত হবেন না। আর এ তথ্যে গরমিল পাওয়ার পরেও যদি কোনো ব্যাংক কর্মকর্তা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে না জানায় তাহলে ওই ব্যাংক কর্মকর্তাও দায়ী হবেন।
কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণ প্রস্তাব বিবেচনাকালে বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহ তাদের নির্ধারিত যাচাই বাছাই কার্যক্রমের অতিরিক্ত হিসাবে মূসক দফতর কর্তৃক গৃহীত দাখিলপত্রে প্রদর্শিত টার্নওভার পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে গত ১৬ জুন বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। করদাতা কর্তৃক ব্যাংকে দাখিলকৃত বার্ষিক বিবরণী বা অডিট রিপোর্ট যাচাই করে দাখিলপত্রে প্রদর্শিত টার্নওভারের মধ্যে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া গেলে তা তাৎক্ষণিকভাবে অধিদফতরকে জানাতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে তারা। মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন যোগ্য। কোনো ব্যক্তির অডিট রিপোর্ট ও দাখিলপত্রে প্রদর্শিত টার্নওভারের মধ্যে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া গেলে তার ঋণও মঞ্জুর হবে না এমনটি জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চিঠিতে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমান বলেন, ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর বিধান মতে করদাতাগণ তাদের প্রতি কর মেয়াদের ক্রয়-বিক্রয় ও আর্থিক লেনদেনের বিবরণ দাখিলের (রিটার্ন) মাধ্যমে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) দফতরে দাখিল করে থাকেন। ওই দাখিলপত্রের মাধ্যমেই সব করদাতার বিবরণ ও কর পরিশোধের তথ্য মূসক দফতর তথা সরকার অবহিত হয়ে থাকে। তাই দাখিলপত্র মূসক আইনে একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল এবং দাখিলপত্রে প্রদর্শিত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে করদাতার বার্ষিক আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষা প্রতিবেদন সংগতিপূর্ণ হওয়া বাঞ্চনীয়।’
‘কিন্তু মূসক দফতরসমূহ কর্তৃক বিভিন্ন করদাতাদের বাণিজ্যিক কর্যক্রমের নিরীক্ষা পরিচালনা কালে প্রায়শই দাখিলপত্রে প্রদর্শিত বিক্রয় বা টার্নওভারের সঙ্গে বার্ষিক আর্থিক বিবরণী বা অডিট রিপোর্টে প্রদর্শিত বিক্রয় বা টার্নওভারের তথ্যের গরমিল পাওয়া যায়। করদাতার এ ধরনের কার্যক্রমের ফলে তার ব্যবসায়ের প্রকৃত টার্নওভার অপ্রদর্শিত থেকে যাচ্ছে। তাই সরকার প্রকৃত রাজস্ব হতে বঞ্চিত হচ্ছে। যা অনভিপ্রেত। এ ধরনের কর্মকাণ্ড মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ এর পাশাপশি ফাইন্যাশিয়াল রিপোর্টিং আইন ২০১৫ এরও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
‘এ পরিস্থিতিতে কোনো করদাতার (১০০ শতাংশ রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যতীত) অনুকূলে ঋণ প্রস্তাব বিবেচনাকালে বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহ তাদের নির্ধারিত যাচাই বাছাই কার্যক্রমের অতিরিক্ত হিসাবে মূসক দফতর কর্তৃক গৃহীত দাখিলপত্রে প্রদর্শিত টার্নওভার পরীক্ষা এবং করদাতা কর্তৃক ব্যাংকে দাখিলকৃত বার্ষিক বিবরণী বা অডিট রিপোর্ট যাচাই করে দাখিলপত্রে প্রদর্শিত টার্নওভারের মধ্যে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া গেলে তা তাৎক্ষণিকভাবে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে অবহিত করা আবশ্যক। অন্যথায় পরবর্তীতে ব্যাংকে দাখিলকৃত আর্থিক প্রতিবেদনের সঙ্গে মূসক দফতরে দাখিলকৃত রিটার্নের অসংগতি পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাও দায়ী থাকবেন।’
‘এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব তফসিলি ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা প্রদানের জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো। জাতীয় রাজস্বের স্বার্থে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর ধারা ৮২ অনুযায়ী এ বিষয়ে সহায়তা একান্ত কাম্য।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, একজন গ্রাহকের ঋণ মঞ্জুরে অনেক কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। সেই সঙ্গে দাখিলপত্রও যাচাই করা সম্ভব। আর এক্ষেত্রে দুই প্রতিবেদনে গরমিল দেখা গেলে স্বাভাবিকভাবেই ওই ঋণ স্থগিত হয়ে যাবে। এটি বাস্তবায়ন হলে কর ফাঁকি কমবে। দেশের রাজস্ব বাড়বে।