বুধবার, ১৭ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » বাংলাদেশের ভিআইপিরা কেন সরকারি হাসপাতালে ওপর ভরসা করতে পারছে না !
বাংলাদেশের ভিআইপিরা কেন সরকারি হাসপাতালে ওপর ভরসা করতে পারছে না !
বিবিসি২৪নিউজ,এম ডি জালাল,ঢাকা: বাংলাদেশে বিত্তবান, প্রভাবশালী,মন্ত্রী, এমপির,পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা কোনোভাবেই সরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভর করতে পারছেন না। আগে থেকেই তারা দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে পছন্দ করতেন৷ কিন্তু করোনার কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ এবং চিকিৎসা না থাকায় আর বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকায় এবার দেশেই থাকতে হচ্ছে ৷ করোনায় ভিআইপিরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন না ৷ দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় তারা বেসরকারি হাসপাতালে,অথবা সুযোগ পেলে সিএমএইচকে বেছে নিচ্ছেন৷ কেন এমন হচ্ছে?
ধনীরা বেসরকারি হাসপাতালকেই বেছে নিচ্ছেন, এর বাইরে তাদের পছন্দ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)৷ কিন্তু সেখানে বিশেষ অনুমোদন ছাড়া কেউ সুযোগ পাচ্ছেন না৷ কারণ এটা সামরিক বাহিনীর বর্তমান এবং সাবেক সদস্যদের জন্য৷ তবে যারা সুযোগ পাচ্ছেন তারা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছেন৷
ভিআইপিদের জন্য অবশ্য আলাদা কোভিড হাসপাতালের প্রস্তাব থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা সমালোচনার মুখে হয়নি৷ প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে ভিআইপি ব্যবস্থা আছে৷ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বড় বড় হাসপাতালেও ভিআইপি কেবিন আছে৷ আর বিভিন্ন পেশাজীবী আর কর্পোরেট গ্রুপ বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালের সাথে করোনা চিকিৎসার জন্য চুক্তি করে রেখেছে৷ সাধারণ মানুষের আশ্রয় সরকারি হাসপাতালই৷
মন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য, শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কেউ কেউ এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ মারাও গেছেন কেউ কেউ৷ তবে তাদের বলতে গেলে কেউই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেননি বা নিচ্ছেন না৷ জানা গেছে ভিআইপিদের বড় অংশটিই আছেন সিএমএইচে৷ তাদের মধ্যে এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যও আছেন৷ আর প্রভাশালীদের কাউকে কাউকে দ্রুত হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলেও সাধারণ মানুষের জন্য এই সুযোগ নেই৷
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক মনে করেন ভিআইপিরা যে সরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা নিচ্ছেন না এটা তাদের ‘মানসিক সমস্যা’৷
তার মতে, ‘‘মন্ত্রী-এমপিরা যার যার এলাকার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে হাসপাতালগুলোর অবস্থা জানতে পারতেন এবং সেগুলোর উন্নতি করতে পারতেন৷ কিন্তু তা হয়নি৷ তারা আসলে জানেনই না যে বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালের অবস্থা কী৷ তাদের আস্থাও নেই৷ এখন করোনার চিকিৎসায় দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় তারা প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন৷ সুযোগ থাকলে তারা বিদেশে চলে যেতেন৷ দুই-একজন চার্টার্ড বিমানে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন৷’’
বিত্তবানেরা চিকিৎসা ব্যবস্থা ছাড়াও হাসপাতালে আরো অনেক সুবিধা চান৷ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘ভিআইপিরা হাসপাতালে একটু আরাম আয়েশে থাকতে চান৷ তাদের টাকা আছে তারা খরচ করছেন৷ বাংলাদেশে কোনো কোনো হাসাপাতালে তো পাঁচতারা হোটেলের সুযোগ সুবিধা আছে৷’’ তবে মন্ত্রী, এমপি বা সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা না নেয়া সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি এক ‘এক ধরনের আস্থাহীনতা’ বলে তিনি মনে করেন৷
সাধারণ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে চিকিৎসার জন্য যান তাদের মধ্যে তিন ধরনের রোগী আছে৷ ১. যারা বিত্তশালী এবং ক্ষমতাবান৷ ২. যারা ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাস করেন এবং ৩. যাদের চিকিৎসার ব্যাপারে এখানকার চিকিৎসকেরা আশা ছেড়ে দেন৷
এদের বড় অংশটি যান ভারতে৷ আর ভারতে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্যই বেশি রোগী যান৷ এর বাইরে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে যান বিত্তবানরা৷ ভারত সরকারের হিসাব অনুযায়ী ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে দুই লাখ ২১ হাজার ৫২১ জন বাংলাদেশি চিকিৎসা ভিসায় দেশটিতে গিয়েছেন৷ এর এটা প্রতিবছর কমপক্ষে শতকরা পাঁচ ভাগ হারে বাড়ে৷
বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) তাদের এক পর্যবেক্ষণে জানায় ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা বাবদ দেশের বাইরে গেছে ২০৪ কোটি ডলার৷ তবে বিভিন্ন পর্যায়ে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি হবে বলে জানা গেছে ৷