রবিবার, ৭ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » আসছে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ঘাটতির বাজেট !
আসছে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ঘাটতির বাজেট !
বিবিসি২৪নিউজ,আশরাফ আলী,বিশেষ প্রতিবেদক,ঢাকা: বাংলাদেশে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মধ্যেই আগামী ১১ জুন ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মোট ব্যয় ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা মোট আয় ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা মোট ঘাটতি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।
আয়-ব্যয়ের বিশাল ফারাকে ঘাটতি পূরণই হবে এবারের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ। কারণ করোনার আগেই সরকারের আয়ের পরিমাণ ছিল কম। সেই সঙ্গে বেড়েছিল ব্যয়। করোনাকালীন এই দুঃসময়ে আয়ের মূল উৎস রাজস্ব আদায় তলানিতে ঠেকলেও বেড়েছে ব্যয়ের খাতও।
এমন পরিস্থিতি সত্ত্বেও এবার বাজেটের আকার তথা মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ন্যায় বাজেটের জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ।
আসছে বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া করবহির্ভূত অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা।
মোট ঘাটতির পরিমাণ এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। আয় ও ব্যয়ের এ বিশাল ফারাকে এবারই প্রথম দেশের ইতিহাসে মোট বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর আগের বছরগুলোতে সাধারণত জিডিপির ৫ শতাংশ হারে ঘাটতি ধরে বাজেট প্রণয়ন করা হতো।
এদিকে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) যে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে তা অর্জন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে তিনি বিষয়টি জানান। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিভিন্ন সূচক বিবেচনায় নিয়ে গবেষণা ও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে জানা যায় যে, চলতি অর্থবছরের শেষে সর্বমোট দুই লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব অহরিত হতে পারে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘পূর্ববর্তী গড় প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশ হিসাবে আগামী অর্থবছরের সর্বমোট রাজস্ব আহরণ দুই লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি হবে না। অর্থনীতিবিদরাও বলেছেন, রাজস্ব আদায়ের এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।’
এবারের বাজেটে সরকার মোট পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। চলতি বাজেটে যা ছিল পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে সেটি কমিয়ে করা হয় পাঁচ লাখ এক হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
আগামী বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয়বাবদ খরচ ধরা হচ্ছে তিন লাখ ৬২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেতন-ভাতাবাবদ ব্যয় রাখা হচ্ছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সরবরাহ ও সেবাবাবদ ব্যয়ে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ঋণের সুদ পরিশোধবাবদ রাখা হচ্ছে ৬৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। সরকারি প্রণোদনা, ভর্তুকি ও অনুদানবাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ থাকছে দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।
সরকারের মূল আয় আসে রাজস্ব আহরণের মধ্য দিয়ে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এটি আহরণ করে। এনবিআরবহির্ভূত কিছু আয়ও হয়। আসছে বাজেটে সরকারের মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরবহির্ভূত অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে আসবে ৪৮ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে চলমান করোনাভাইরাসে সৃষ্ট অচলাবস্থার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আহরণে। চলতি অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২০ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা কাটছাঁট করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে সংশোধিত আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর আহরণ করবে তিন লাখ ১৩ হাজার ৭০ কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত উৎস থেকে আসবে ৪৪ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা।
ইতিহাসে এবারই প্রথম জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি
আয় ও ব্যয়ের এ বিশাল ফারাকে আসছে বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৬ শতাংশ। এটা ঠিক থাকলে দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশ দাঁড়াচ্ছে। এর আগের বছরগুলোতে সাধারণত জিডিপির ৫ শতাংশ হারে ঘাটতি ধরে বাজেট প্রণয়ন করা হতো।
এ বিশাল ঘাটতি পূরণে সরকার কোন খাত থেকে কত টাকা ঋণ নেবে তারও একটি ছক তৈরি করেছে। ছক অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের ঘাটতি পূরণে সরকার বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করবে, অংকে যা ৮৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা আছে ৬৭ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক অনুদান ধরা হচ্ছে চার হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা রয়েছে তিন হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা।
এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎস অর্থাৎ ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতির বড় একটি অংশ পূরণ করতে চায় সরকার। ব্যাংক খাত থেকে ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা ছিল ৭২ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের জন্য সরকার সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নিতে চায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে (সংশোধিত) যা ছিল ১৪ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা।
বিপুল অংকের অর্থের ঘাটতি এবং তা পূরণে সরকারের পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রাজস্ব আহরণের গতিপ্রকৃতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ভালো ছিল না। করোনা আসার পর তা বেশি খারাপ হয়েছে। এছাড়া প্রতি বছর কোনো ধরনের সংস্কার ছাড়াই এনবিআরের জন্য বড় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে। এক লাফে অর্থাৎ এক বছরে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশের বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরা বাস্তবসম্মত নয়।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বছরই আমাদের দেশে এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ের একটা অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে। যা কোনোদিনও বাস্তবায়নযোগ্য নয়।এসব লক্ষ্যমাত্রা কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকবে। অর্জন আদৌ সম্ভব নয়। বাজেটে রাজস্ব আহরণের একটা সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা উচিত।