বৃহস্পতিবার, ৪ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » ভারতে কন্যা শিশুরা বড় অনাকাঙ্ক্ষিত? সামান্য অর্থে শিশু বিক্রি করছে বাবা-মায়েরা !
ভারতে কন্যা শিশুরা বড় অনাকাঙ্ক্ষিত? সামান্য অর্থে শিশু বিক্রি করছে বাবা-মায়েরা !
বিবিসি২৪নিউজ,রমেস চন্দ্র দাস,ভারত থেকে : করোনা ভাইরাসের কারনে লকডাউনে এর মধ্যেই ভারতে বেকার সোয়া বারো কোটি মানুষ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এক দম্পতির তাদের আড়াই মাসের কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছে । ওই সদ্যোজাত শিশুর বাবা আর মা দুজনেই লকডাউনের কারণে কাজ হারিয়েছেন, রোজগার বন্ধ। এইরকম এক সময়ে সামান্য অর্থের বিনিময়ে এক নিঃসন্তান দম্পতির হাতে মেয়েকে তুলে দিয়েছিলেন শিশুটির বাবা-মা। পুলিশ ওই শিশুটিকে উদ্ধার করেছে।পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ঘাটালের বাসিন্দা বাপন ধাড়ার স্ত্রী সওয়া দুমাস আগে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। মি. ধাড়া মুম্বাই, হায়দ্রাবাদের মতো নানা শহরে ঘুরে শ্রমিকের কাজ করেন, আর তার স্ত্রী পরিচারিকার কাজ করতেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে দুজনেরই সব রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
কদিন আগে হাওড়ার এক দম্পতির কাছে মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছে ধাড়া পরিবার, এমন খবর পেয়ে তার বাড়িতে গিয়েছিলেন জেলা চাইল্ড লাইনের কোঅর্ডিনেটর বিশ্বনাথ সামন্ত। তিনি বলছিলেন, “এরা সত্যিই খুব দরিদ্র। ঘরে কোথাও ত্রিপল টাঙ্গানো, কোথাও টালি লাগানো। আমরা যখন জানতে চাই যে কেন সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন, তখন ভদ্রলোক বলেন বিক্রি নয়, সন্তানকে লালন-পালন করার জন্য এক দম্পতিকে দিয়েছেন। আমরা চেপে ধরি, তাহলে টাকা নিলেন কেন? মাত্র আড়াই হাজার টাকার জন্য মেয়েকে বিক্রি করলেন?”
“জবাবে তিনি আবারও সেই কথাই বলতে থাকেন। তবে আমাদের কাছে স্পষ্ট যে তিনি টাকা নিয়েই মেয়েকে বিক্রি করেছিলেন। ওই শিশুকে হাওড়া জেলা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে,” জানাচ্ছিলেন জেলা চাইল্ড লাইনের কোঅর্ডিনেটর বিশ্বনাথ সামন্ত।
এক মেয়ে সহ শিশুটির মা নিখোঁজ। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি মামলা রুজু করেছে, আর শিশুটির বাবাকে জেরা করা হচ্ছে।
“পরিবারটি দরিদ্র ঠিকই। কিন্তু শিশুটি যদি পুত্র হত, তাহলে কিন্তু তিনি লালন পালন বলুন আর বিক্রি বলুন - সেটা করতেন না। আমাদের কাছে তিনি স্পষ্টই বলেছেন এটা। মেয়েকে বড় করা, বিয়ে দেওয়া এসব দায়িত্ব পালন করতে এখনও বহু পরিবার দুশ্চিন্তায় পড়ে। মাঝে মাঝে নিজেদেরই দোষী মনে হয় যে আমরাই বোধহয় সচেতন করতে পারি নি মানুষকে,” বলছিলেন বিশ্বনাথ সামন্ত।
কন্যাসন্তানকে বড় করার জন্য নানা সরকারি প্রকল্প থাকলেও সব স্তরের মানুষ যেমন সেই প্রকল্পের সুযোগ নিতে পারছেন না, আবার প্রকল্পগুলির ব্যাপারে প্রচারও সবার কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়া যায় নি।
তবে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী চ্যাটার্জী বলছিলেন, যতই প্রকল্প থাকুক, সেগুলিরও সীমাবদ্ধতা আছে।
“এই যে কন্যা শিশু, সে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আসবে ১৩ বছর বয়সে। তার আগে আরও একটা মাসোহারার ব্যবস্থা আছে -মাসিক দুহাজার টাকা করে দেওয়া হয় জেলাশাসকের মাধ্যমে। কিন্তু তাও তিন বছরের জন্য। এখন আমরা এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তাতে যতই নানা প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হোক, এরকম ঘটনা আরও দেখার জন্য বোধহয় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে,” বলছিলেন মিজ. চ্যাটার্জী।
শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সনের ব্যাখ্যা, একদিকে মহামারি, অন্যদিকে আম্পানের তান্ডব - এই দুইয়ের জোড়া আক্রমণে পশ্চিমবঙ্গে এরকম ঘটনা যে আরও হতে পারে, সেই আশঙ্কা তাদের ছিলই।
তার কথায়, “ওই পরিবারটি খুবই গরীব, সেটা মেনে নিলেও কেউ অভুক্ত থাকছেন, এমন কিন্তু নয়। সকলেই সরকারি রেশন পাচ্ছেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণ, রোজগার হারানো এসব তো চলছিলই, তারই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় এসে সব তছনছ করে দিয়েছে। জোড়া ধাক্কা আমাদের রাজ্যের জন্য।”
অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনই বলছে পশ্চিমবঙ্গের যে কয়েকটি অঞ্চল নারী আর শিশু পাচারের সর্বভারতীয় ভরকেন্দ্র বলে পরিচিত হয়ে গেছে, সেই সব এলাকাতেই করোনা সংক্রমণের মধ্যেই আম্পান বয়ে গেছে। তাই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নারী আর শিশু পাচারকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে সচেতন মহল।