বুধবার, ২০ মে ২০২০
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করছে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’
বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করছে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’। খুলনা, সাতক্ষীরা, মোংলা ও সুন্দরবনের একাংশ দিয়ে এটি বাংলাদেশে ঢুকছে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের ওপর আম্পানের চোখ রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এটি বুধবার (২০ মে) রাত ৮টার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের পূর্ব পাশ দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্য দিয়ে দুই দেশের উপকূল অতিক্রম করবে। ইতোমধ্যে ঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অংশেও ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোও ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। আর মোংলা ও পায়রা বন্দরে আগের মতোই ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, আম্পানের ব্যাস প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। কেন্দ্রের ব্যাস প্রায় ১০০-১৫০ কিলোমিটার। সেহেতু উপকূল অতিক্রমের সময় আম্পানের প্রভাব দুই দেশেই পড়বে সমানভাবে।
তিনি আরও জানান, বাতাসের গতিবেগ এখন ঘণ্টায় ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার। তবে উপকূলে আছড়ে পড়ার পর সেখানে কিছু সময় অবস্থান করবে এবং ঝড়টি কিছুটা শক্তি হারাবে। সে সময় গতিবেগ হতে পারে ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ১৫-২০ ফুট জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, যতই এই ঝড় উপকূল থেকে উপরের দিকে এগিয়ে যাবে ততই শক্তি কমে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
আম্পানের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেতে মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে নিরাপদ অবস্থানে জেলেরা
আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান জানান, সন্ধ্যায় উপকূলে আঘাত হানবে আম্পান। এটি এখন উপকূলের একেবারে কাছে চলে এসেছে। ভারতের সাগরদ্বীপের একেবারেই কাছে এখন আম্পানের চোখ। ফলে বলা যায় সেখান দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে আম্পান। এ কারণে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে এখন আম্পানের ঝড়ো বাতাস বইতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে ঝড়টি দুই দেশের উপকূল অতিক্রম করবে।
সাগরদ্বীপ হল বঙ্গোপসাগরের একটি দ্বীপ। এটি কলকাতা থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। দ্বীপটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার শাসিত। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় জনিত জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় এবং দ্বিতীয় পক্ষের চাঁদের সময়ের শেষ দিনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে থেকে ১০ থেকে ১৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঝড়ো হাওয়ার সতর্কতায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলতে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
জেলেদের জন্য সতর্কতায় বলা হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে ভারতের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়, গতি বাড়িয়ে বাংলার আরও কাছে চলে এসেছে ‘অতি মারাত্মক’ ঘূর্ণিঝড় আম্পান। বেলা ১টায় আম্পানের অবস্থান ছিল দিঘা থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরে। সে সময় সাগরদ্বীপ থেকে ৯০ কিমি এবং পারাদ্বীপ থেকে ১৫০ কিমি দূরে ছিল এই ঘূর্ণিঝড়।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানায়, ‘সুপার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ থেকে আম্পান এখন ‘এক্সট্রিমলি সিভিয়র সাইক্লোনিক স্টর্ম’-এ পরিণত হয়েছে। কিছুটা শক্তি হারালেও এখন ‘অতি মারাত্মক’ চেহারা নিয়েই দিঘা থেকে বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মধ্যবর্তী কোনও অঞ্চলে আজ সন্ধ্যার মধ্যে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।আবহাওয়াবিদদের ধারনা, সাগরদ্বীপ হয়ে সুন্দরবনে আছড়ে পড়তে পারে আম্পান।