মঙ্গলবার, ১২ মে ২০২০
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলোচিত জানাজার পর কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার সন্ধান মিলেনি,পরিস্থিতি এখন কেমন?
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলোচিত জানাজার পর কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার সন্ধান মিলেনি,পরিস্থিতি এখন কেমন?
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক,বাংলাদেশে গত ১৮ই এপ্রিল সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে জনসমাগম নিষিদ্ধের মধ্যেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক ধর্মীয় বক্তার শেষকৃত্যে বিপুল জনসমাগম হয়। তার জানাজায় ওই সমাগমের জের ধরে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারও করেছিলো সরকার। ঘটনার পরপরই করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ রোধে জেলার সরাইলের পাঁচটি, আশুগঞ্জ উপজেলার দুটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার একটি গ্রামকে লকডাউন করে দেয়া হয়।জনসমাগমের পর পেরিয়েছে তিন সপ্তাহের বেশি সময়।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার ঝড় তুলেছিলো এবং ঠাঁই করে নিয়েছিলো আন্তর্জাতিক নানা গণমাধ্যমেও। এরপর দু সপ্তাহের লকডাউন ও কোয়ারেন্টিন শেষে জেলা প্রশাসন বলছে ওই সব গ্রামে কারও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সন্ধান মিলেনি।
জেলা সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলছেন তারা গ্রামগুলো থেকে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ২৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছেন, তবে কারও করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়নি।
“বিষয়টি আমাদের জন্য স্বস্তির। জানাজায় অনেক লোক জড়ো হওয়ার প্রেক্ষাপটে যেসব ব্যবস্থা প্রশাসন থেকে নেয়া হয়েছে সেটা কাজ করেছে। লকডাউনও সবাই মেনে চলেছে। অনেকে নিজে থেকেই কোয়ারেন্টিনে ছিলো। ফলে সংক্রমণ বা এর বিস্তার হয়নি। আমরাও এখনো মনিটর করে যাচ্ছি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে মেডিকেল টিম কাজ করছে”।
সিভিল সার্জন বলেন পুরো সরাইলে এ পর্যন্ত একজন করোনা পজিটিভ নারীকে পাওয়া গেছে যিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছিলেন। যদিও স্থানীয় সাংবাদিক মাসুক হৃদয় বলছেন মাত্র পনের জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে হাজার হাজার মানুষের এসব গ্রামগুলোতে।
“লকডাউনও অনেকে মানেনি। আবার ব্যাপক কোনো পরীক্ষাও হয়নি। এখন তো কোনো বিধিনিষেধই নেই। করোনা নেই বলে এখন সবাই তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে, কিন্তু বাস্তবতা হলো পরীক্ষাই হয়েছে হাতেগোনা কয়েক জনের”।
যদিও সরাইল উপজেলার বেড়তলা গ্রামে ইসলামিক বক্তা যোবায়ের আহমেদ আনসারীর জানাজায় যোগ দিয়েছিলো হাজার হাজার মানুষ।
তখন পুলিশ জানিয়েছিলো যে স্থানীয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানাজা আয়োজনের আগে সরকারি নির্দেশনা মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছিলো।
কিন্তু পরে তা আর দেখা যায়নি বরং সরাইল ছাড়াও আশেপাশের অনেক জেলা, উপজেলা ও গ্রাম থেকে মি. আনসারীর অনুসারীরা এসে জানাজায় যোগ দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ পরে আটটি গ্রাম লকডাউনের ঘোষণা দেয়।
সরাইলের যে ইউনিয়নের বেশি গ্রাম লকডাউন করা হয়েছিলো সেই পানিশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: দ্বীন ইসলাম বলছেন করোনায় সংক্রমিত হওয়ার কোনো উপসর্গ কারও মধ্যে না পাওয়ায় এখন আর লকডাউন সেখানে কার্যকর নেই।
“আমার চারটা গ্রাম লকডাউন ছিলো। অনেকের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে পজিটিভ কেউ নেই। জানাজার পর তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। তাই লকডাউন আর নেই। তবে কারও মধ্যে উপসর্গ দেখা যায় কি-না সেদিকে আমরা খোঁজ রাখছি”।
তিনি বলেন উপসর্গ না দেখা দেয়ায় নতুন করে কারও পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার আছে বলে তারা মনে করছেন না।
তবে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক বলছেন জানাজায় বিপুল জনসমাগমের পর সেখানে চারপাশের গ্রামগুলো লকডাউন করা, কোয়ারেন্টিনে রাখা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার সুফল পাওয়া গেছে। সেখানে এক জায়গায় অনেক সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি।
“তবে নরসিংদীতে আমরা অনেক রোগী পেয়েছি যাদের সাথে এর সম্পৃক্ততা ছিলো। এটা ঠিক যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহামারী ঘনীভূত হয়নি। তবে ছড়িয়েছে অন্যত্র, বিশেষ করে নরসিংদীতে”।
মিস্টার হোসেন বলছেন নরসিংদীতে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই মৃদু লক্ষণযুক্ত, যাদের অধিকাংশই সুস্থ হওয়ার পথে”।
তার মতে ওই জানাজাকে কেন্দ্র করে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিস্তারের যে আশংকা ছিলো সেটি আপাতত কেটে গেছে বলেই মনে করছেন তারা। ওদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫৭ জনের। সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে ঈদের আগে দোকানপাট না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।