কৃষকের ধান কিনবে সরকার-কৃষিমন্ত্রী
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক,ঢাকা: বাংলাদেশে এখন বোরোধান ঘরে তোলার ভরা মৌসুম করোনা সংকটে বিপর্যস্ত দেখা দিতে পারে দুর্ভিক্ষ৷, যা মোকাবেলায় কৃষিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।বাংলাদেশে মূলত হাওর অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বোর ধানের আবাদ হয়৷ আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার মাঠে ধান ভালো হলেও লাকডাউনে শ্রমিক সংকটসহ নানা কারণে কৃষকদের ফসল ঘরে তুলতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে৷
যদিও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, দেশের হাওর অঞ্চলের ৯০ দশমিক ০২ শতাংশ ধান কেটে কৃষকরা ইতোমধ্যে তা ঘরে তুলেছেন৷ মঙ্গলবার সচিবালয় থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে তিনি হাওরের ধানা কাটা পরিস্থিতি নিয়ে সবশেষ এ তথ্য তুলে ধরেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, হাওর অঞ্চলে এবার ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়৷ এর মধ্যে ৪ লাখ ৯০৬ হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে৷ এছাড়া, সারা দেশে আবাদ হওয়া বোরো ধানের ২৫ শতাংশ কাটা শেষ৷
জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে দেশের সমতল ভূমির ধান কাটাও শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ধান কাটা হচ্ছে৷ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা দিয়েছিলেন…৷ আগাম বন্যায় কোনো কোনো বছর হাওরের ধান নষ্ট হয়, এবার তা হয়নি; আবহাওয়া পুরো অনুকূলে৷’’
বিজ্ঞানীরা এখনও জানেন না ঠিক কিভাবে কোভিড-১৯ এর উৎপত্তি হয়েছে৷ তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সোয়াইন ফ্লু এবং বার্ড ফ্লু শূকর এবং মুরগি থেকে ছড়িয়েছে এটা অন্তত নিশ্চিত৷ মহামারির ঝুঁকি বাড়তে থাকা এবং এর সঙ্গে প্রাণীদের সংযোগ পাওয়ায় খামারে পশুপালন নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে চিন্তাভাবনা৷
হাওর অঞ্চলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ শ্রমিক ধান কাটছেন৷ লকডাউনের কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলে ধান কাটার শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছিল৷ পরে প্রশাসন থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক আনা হয়৷ কর্মহীন অন্য পেশার শ্রমিকরাও ধান কাটেন৷ কেউ কেউ স্বেচ্ছা শ্রমে কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছেন৷
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া- এই সাতটি জেলায় শুধু হাওরে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে৷ এ বছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন৷ এ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২০ শতাংশ আসবে হাওর অঞ্চল থেকে৷
গত মাসের শুরুতেই সরকার এবছর বোরো মৌসুমে সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান কেনার ঘোষণা দেয়৷
ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ৩৬ টাকা কেজি দরে মিল থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ৩৫ টাকা কেজিতে দেড় লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল এবং সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজিতে ছয় লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান কেনা হবে৷ এর বাইরে ২৮ টাকা কেজি দরে আরও ৭৭ হাজার মেট্রিক টন গম কিনবে সরকার৷
২৬ এপ্রিল থেকে ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত বোরো ধান এবং ৭ মে থেকে ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত বোরো চাল সংগ্রহ করা হবে৷ আর ১৫ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত কেনা হবে গম৷
সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার সময় জনসমাগম এড়াতে ২২টি উপজেলায় পরীক্ষমূলকভাবে অ্যাপ ব্যবহার করবে৷
‘ডিজিটাল খাদ্যশস্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা ও কৃষকের অ্যাপ’-এর মাধ্যমে ঢাকার সভার উপজেলা এবং গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, ভোলা, নওগাঁ, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, ঝিনাইদহ, যশোর, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা (সদর দক্ষিণ) এবং বরিশাল সদর উপজেলা থেকে বোরো ধান সংগ্রহ করা হবে৷
কৃষকরা কিভাবে এ অ্যাপ ব্যবহার করবেনে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছে কৃষিমন্ত্রণালয়৷ আসন্ন বাজেটেও সরকার স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান৷