বুধবার, ২৯ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশের বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু, কারাগারেও ছড়াচ্ছে করোনা
বাংলাদেশের বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু, কারাগারেও ছড়াচ্ছে করোনা
বিবিসি২৪নিউজ,মেহেদী হাসান,ঢাকা: বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড৷ এদিকে, কারাগারেও থাবা বসাতে শুরু করেছে এই ভাইরাস৷ ঢাকায় অন্তত ১২ জন কারারক্ষী করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে জানা যায়। দেশে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৭,১০৩ জন৷ গত ২৪ ঘণ্টায় একজন সাংবাদিকসহ মারা গেছেন ৮ জন; মোট মৃত্যু ১৬৩৷
এদিন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন ১১ জন, মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫০ জন৷ তবে অনেকেই বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে উঠেছেন৷ তাদের নাম এখনো সুস্থদের তালিকায় সংযুক্ত করা হয়নি৷ মোট সুস্থদের চারতৃতীয়াংশ মৃদু উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়েছেন বলে জানায় আইইডিসিআর৷
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর ৫৫তম দিনে মারা যাওয়া ১৬৩ জনের মধ্যে ১৩৭ জনই ঢাকার বাসিন্দা ছিলেন৷ বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য তুলে ধরেন৷
রমজান মাসকে বিশ্বজুড়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা দেখে থাকেন দানশীলতা, সংযম, আত্মশুদ্ধি ও প্রার্থনার মাস হিসেবে৷ একসঙ্গে নামাজ পড়া ও সারাদিনের রোজা শেষে ইফতার ভাগাভাগি করে নেয়াকেও দেয়া হয় গুরুত্ব৷ কিন্তু চলমান করোনা মহামারি এবারের রমজানকে সবার সামনে হাজির করেছে একটু অন্যভাবে৷ সব দেশের জন্যই এ বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
এখন পর্যন্ত ১২ জন কারারক্ষী আক্রান্তের খবর নিশ্চিত করেছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুর রহমান৷ তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দিদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই ওই রক্ষীরা আক্রান্ত হয়েছেন৷
‘‘নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারের কোয়ার্টারে প্রায় দুইশ কারারক্ষী থাকেন৷ অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে কারাবন্দিরা ভর্তি হলে সেখানে পালা করে দায়িত্ব পালন করেন এখানকার কারারক্ষীরা৷
‘‘আক্রান্ত ১২ জনের মধ্যে নয় জন মুগদা, দুইজন কেরানীগঞ্জ বিশ শয্যা হাসপাতালে ও একজন মিরপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন৷ তাদের সবাই এখনো শারীরিকভাবে ভালোই আছেন৷ তবে এখন পর্যন্ত কেরানীগঞ্জ কারাগারের কোনো বন্দি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি৷’’
তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই মারা যান দৈনিক সময়ের আলোর নগর সম্পাদক হুমায়ুন কবির খোকন৷ পরে নমুনা পরীক্ষায় তাঁর দেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়৷
অসুস্থ খোকনকে মঙ্গলবার রাতে ঢাকার উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে সোয়া ১০টার তিনি মারা যান ।
রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহেদ বুধবার বলেন, ‘‘আমরা রাতেই নমুনা সংগ্রহ করে পাঠিয়েছিলাম, ভোরে আমাদের জানানো হয়েছে, তার করোনা ভাইরাস পজিটিভ এসেছে৷
প্রধানত ইলেট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং ক্যামেরাম্যানদের সীমিত আকারে হলেও বাইরে যেতে হয় অ্যাসাইনমেন্ট কাভার করতে। তারা চেষ্টা করেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে।
‘করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বাংলাদেশে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে৷ এ সময়ে অনেকেই হোম অফিস করছেন৷ খোকনও গত ১৫ দিন ধরে বাসা থেকেই অফিসের কাজ করছিলেন বলে জানান সময়ের আলো’র সিনিয়র রিপোর্টার হাবিব রহমান ৷
বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকালে তার শ্বাসকষ্ট ও মাথাব্যথা দেখা দেয়৷ এরপর শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে গেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির অ্যাম্বুলেন্সে করে রাত ৯টার দিকে তাকে রিজেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়৷’’
হাসপাতালে ভর্তির সময়ই এই সাংবাদিকের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল৷ ডাক্তাররা চেষ্টা করলেও ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়৷ হুমায়ুন কবির এর আগে দৈনিক মানবজমিন, আমাদের সময়সহ কয়েকটি সংবাদপত্রে কাজ করেন৷ তাঁর অকাল মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ৷
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন৷ কয়েকজন এরই মধ্যে সুস্থও হয়ে উঠেছেন৷ এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, হুমায়ুন কবিরই প্রথম সাংবাদিক যিনি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন৷