মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » নিজ দেশেই বাস্তুহারা হচ্ছে ৫ কোটি মানুষ: আইডিএমসি
নিজ দেশেই বাস্তুহারা হচ্ছে ৫ কোটি মানুষ: আইডিএমসি
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্বের অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি পর্যবেক্ষণে জেনিভা ভিত্তিক বিশ্ব সংস্থা ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টারের (আইডিএমসি) বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেন,বিশ্বজুড়ে সংঘাত বা দুর্যোগের কারণে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫ কোটি ৮ লাখ মানুষ নতুন করে নিজের দেশে বাস্তুহারা হয়ে পড়েছেন, যারা করোনাভাইরাস মহামারীর নতুন হুমকির মুখে রয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে। এতে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর মধ্যেই অরক্ষিত হয়ে পড়া লাখ লাখ মানুষের ঝুঁকি আরও বাড়াবে।
“সাড়ে চার কোটি মানুষই সহিংসতার কারণে নিজের ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ভূমিকম্প বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আরও ৫০ লাখের মতো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।”
জেনিভাভিত্তিক সংস্থাটি বলছে, অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত- যারা সংঘাত বা দুর্যোগের কারণে বাড়ি ছাড়লেও দেশের মধ্যেই রয়েছেন- মানুষের সংখ্যা এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
এর আগে ২০১৯ সালে ৩ কোটি ৩৪ লাখ মানুষের নতুন বাস্তুচ্যুতির হিসাব দিয়েছে সংস্থাটি, যা ২০১২ সালের পর সর্বোচ্চ বার্ষিক সংখ্যা।
নতুন করোনাভাইরাস এসব মানুষের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলবে, যারা এর মধ্যেই নির্মাণাধীন জরুরি আশ্রয়স্থল, অনানুষ্ঠানিক বসতি এবং শহুরে বস্তির ঘিঞ্জি ও অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করছেন।
এরকম গাদাগাদি জীবনযাপন প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় শারীরিক দূরত্ব রক্ষা ও পরিচ্ছন্নতার কাজকে জটিল করে তুলবে।
আইডিএমসির পরিচালক আলেকজান্দ্রা বিলাক বলেন, প্রয়োজনীয় পরিষেবা ও মানবিক সহায়তা পাওয়ার সুযোগ সীমাবদ্ধ হওয়ায় মহামারীর তাদের অনিশ্চিত জীবনযাপন পরিস্থিতিকে আরও অরক্ষিত করে তুলবে।
নতুন এই প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারীর কথা বাদ দিলেও বিশ্বজুড়ে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা এমনিতেই সমষ্টিগত ব্যর্থতার একটি নিদর্শন।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের- যেখানে নয় বছর আগে শুরু হওয়া সহিংসতায় সরকারি হামলা থেকে বাঁচতে গত ডিসেম্বর থেকে প্রায় এক কোটি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে- মতো সংঘাতগুলো সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতে সরকারগুলির প্রতি আইডিএমসি আহ্বান জানিয়েছে।
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, ইয়েমেন ও আফগানিস্তানের সংঘাতের কথাও তুলে ধরেছে সংস্থাটি।
গত বছর ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কারণে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সব রকম পদক্ষেপ নিতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।
মহামারী চলাকালীন বাস্তুচ্যুতদের স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে বাস্তুচ্যুত হওয়ার কারণ দূর করতে সরকারগুলির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
আইএমডিসি বলছে, তারা ইরাকের পরিস্থিতি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন। সেখানে বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে প্রথম করোনভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সিরিয়া, বুর্কিনা ফাসো ও কলম্বিয়াসহ যেসব দেশগুলিতে ইতোমধ্যে বাস্তুচ্যুতির সঙ্কট মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে সংক্রমণের হার বাড়ছে।
ভাইরাসটির কারণে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচুতির ঘটনাও তুলে ধরা হয়েছে আইডিএমসির প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ভারতে দেশজুড়ে লকডাউনের মধ্যে ৬ লাখ অভিবাসী শ্রমিককে ‘নিজগ্রামে ফিরতে কয়েকশ মাইল পথ হেঁটে পাড়ি দিতে হয়’।
অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষরা সাধারণত খুব বেশি দূরে যেতে চান না। এর কারণ হচ্ছে- হয় তারা নিজের বাড়ি ও পরিবারের কাছাকাছি থাকতে চান অথবা সীমান্ত অতিক্রম করার জন্য পর্যাপ্ত জন্য অর্থ তাদের থাকে না।
অনেকেই সংঘাতমুখর এলাকাসহ এমন অঞ্চলগুলিতে আটকে আছেন যেখানে মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলি পৌঁছাতে পারে না। ফলে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে সরকারের উপর নির্ভর করা ছাড়া তাদের আর কোনো গতি থাকে না।
যুদ্ধের কারণে বা অনেক সরকারের কারণেই কখনও কখনও মানুষ পালাতে বাধ্য হয়। এর মধ্য দিয়ে একটি দেশ তার নিজ নাগরিকদের নিরাপদ মাথা গোঁজার ঠাঁই দিতে ব্যর্থ হয়।