১০ টাকা দরে চাল কার্যক্রম স্থগিত
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা:বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশব্যাপী চালু হওয়া ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম স্থগিত করেছে সরকার।
এই চাল কিনতে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায় এবং তাতে করোনাভাইরাস বিস্তারের শঙ্কা বাড়ে বলে এই কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে বলে খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম জানিয়েছেন।
সোমবার তিনি বলেন, “এই চাল কিনতে কোনো ধরনের কার্ডের বাধ্যবাধকতা না রাখায় অনেক মানুষ চাল কিনতে ভিড় জমাচ্ছিলেন। এর মাধ্যমে করোনাভাইসার ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই আপাতত এই কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।”
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরে এই বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম আবার শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ২৬ মার্চ থেকে দেশের সব অফিস-আদালত এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ। সরকারের ভাষায় এই ‘সাধারণ ছুটিতে’ মানুষের ঘরবন্দি দশা চলবে অন্তত ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত।
এই সময় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ফলে বেশিরভাগ শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
এই প্রেক্ষাপটে গত ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওএমএস খাতে ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা কেজি দরের চালের দাম ১০ টাকা নির্ধারণের ঘোষণা দেন। পরে খাদ্য মন্ত্রণালয় বিশেষ ওএমএসের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে।
সপ্তাহে প্রতি রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত এই চাল বিক্রি চলছিল। একজন ভোক্তা সপ্তাহে একবার পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারতেন।
তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই চাল কালোবাজারে বিক্রি এবং কয়েকটি জায়গায় আত্মসাৎ করে চালসহ কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন।
খাদ্য সচিব জানান, মহানগরে বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম গত ৫ এপ্রিল এবং সারা দেশে ৭ এপ্রিল শুরু হয়ে দুই দিন করে চলে।
“মহানগরীতে দুই দিন এই চাল বিক্রির পর ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বিক্রি বন্ধ রাখা হয়। এরপর যখন মফস্বলে বিক্রি করতে যাই তখন দেখলাম অনেক গ্যাদারিং হয়। যিনি আজকে কিনছেনে তিনি পরের দিনও কিনতে আসছেন।”
বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে এখন ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রির কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় কারও চালের অভাব নেই বলে দাবি করেন খাদ্য সচিব নাজমানারা।
তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়ানোর সম্ভাবনা এবং যেহেতু অন্যভাবে চাল দেওয়া হচ্ছে, তাই এটার মিস ইউজ হওয়ারও সম্ভবনা থাকে। বিভিন্ন জায়গায় মিস ইউজও হয়েছে, এজন্য এটা সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছি। যখন প্রয়োজন হবে তখন চালু করব।”
ওএমএসের চাল ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিশেষ ওএমএসে সেই চাল ১০ টাকা কেজিতে বিক্রি শুরু করেছিল সরকার। ৩০ টাকা কেজি দরে ওএমএসের চাল কিনতে কোনো কার্ড লাগে না। তবে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরের চাল কিনতে কার্ডের প্রয়োজন হয়।
সেই প্রসঙ্গ তুলে খাদ্য সচিব বলেন, “বিশেষ ওএমএস পরিচালনায় নীতিমালায় কার্ডের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও পরে তা বাদ দেওয়া হয়েছিল। কারণ এখন কার্ড করতে গেলে কর্মহীনদের কষ্ট হবে। তবে এই কার্ড তুলে দেওয়ায় গ্যাদারিংটা এমনভাবে হয়ে যাচ্ছে রোগটা ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। আবার হিসেবও থাকছে না, কে কিনছে, কেউ হয়ত পাচ্ছে না, আবার কেউ প্রতিদিন কিনছেন।
“এখানে বড় সমস্যাটা হয় অনেক বড় লাইন হয়ে যায়। যতটুকু চাল বিতরণের জন্য আনা হয় তার থেকে অনেক বেশি লোক জড়ো হয়।”
সচিব নাজমানারা বলেন,কর্মহীনদের তালিকা হলে কার্ডের মাধ্যমে বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম শুরুর আশা প্রকাশ করেন। তবে কীভাবে এবং কবে থেকে শুরু করব এখনও সেই সিদ্ধান্ত হয়নি। মিস ইউজ ছাড়া এটা কীভাবে বিতরণ করা যায় সেই উপায় বের করব।”