বৃহস্পতিবার, ২৬ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম | স্বাস্থ্যকথা » বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ১০ ল্যাবের ৭টিই চালু হয়নি
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ১০ ল্যাবের ৭টিই চালু হয়নি
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকা: বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরীক্ষাগার ১০টি চালুর ঘোষণার এক সপ্তাহ গড়ালেও এ পর্যন্ত চালু হয়েছে মাত্র তিনটি,কোভিড-১৯ রোগী বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আইইডিসিআরের নমুনা পরীক্ষা প্রক্রিয়ায় দেরি নিয়ে ক্ষোভের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চালু হয়েছে মাত্র তিনটি।চীনে সংক্রমণের দুই মাসের বেশি সময় পর গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের কথা জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর।
শুরুতে শুধু আইইডিসিআরেই রোগ পরীক্ষা চলছিল। তাতে অসুস্থ হয়ে তাদের হটলাইনে ফোন করেও নমুনা পরীক্ষার সুযোগ না হওয়ায় অনেকে ক্ষোভ জানাচ্ছিলেন; যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৬ মার্চও দেশগুলোকে বলছিল, সন্দেহভাজন প্রতিটি রোগীকে পরীক্ষা কর, যত বেশি পার তত নমুনা পরীক্ষা কর।
এরপর এক সপ্তাহ আগে সরকারেরর পক্ষ থেকে জানানো হয়, আইইডিসিআরের নিজস্ব পরীক্ষাগার ছাড়াও আরও ১০টি পরীক্ষাগার স্থাপন করা হবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য।
এগুলো হলো- ঢাকার মধ্যে জনস্বাস্থ্য হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
আর ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিসেস, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইইডিসিআরের ফিল্ড ল্যাবরেটরি, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
বৃহস্পতিবার খবর নিয়ে দেখা যায়, এর মধ্যে তিনটিতে কেবল পরীক্ষা করা যাচ্ছে। এগুলো হল রাজধানীর মহাখালীতে জনস্বাস্থ্য হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল এবং চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিসেস হাসপাতাল।
ঢাকার বাইরের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস- বিআইটিআইডিতে বুধবার দুপুরে কিট পৌঁছেছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এম এ হাসান চৌধুরী। কিট চট্টগ্রামে পৌঁছানোর পর নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
খুলনা: খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ড. এটিএম মঞ্জুর মোরশেদ বলেন, তাদের টেস্টিং ল্যাব স্থাপন হয়নি, কিটও পৌঁছেনি। ফলে পরীক্ষাও শুরু করা যায়নি।
বরিশাল: বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকীর হোসেন বলেন, “আমরা এখনও পরীক্ষা চালু করতে পারেননি। আমরা চিঠি চালাচালির মধ্যে আছি। অবকাঠামো তৈরি হয়নি। মেশিনটা কারা সরবরাহ করবে, সেটাও নির্ধারিত হয়নি। কবে নাগাদ ল্যাব চালু হবে, সেই অপেক্ষায় আছি।”
রাজশাহী: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, “আমরা শুধু জায়গা নির্ধারণ করেছি। তবে এখনও কিছুই আসেনি।”
ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক লক্ষ্মীনারায়ণ মজুমদার বলেন, “ল্যাব তৈরি হচ্ছে। চিকিৎসকরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখনও কিট দেয়নি। ল্যাবের কাজ শেষ হলে ও কিট পেলে কাজ করতে পারব।”
কক্সবাজার: কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “এখনও অনেক উপকরণ সঙ্কট রয়েছে। ট্রায়াল পর্যায়ে আছে। কিছুদিনের মধ্যে উপকরণ হাতে আসবে। উপকরণ পেলে পুরোপুরি চালু করা যাবে।”
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা তিনটি কেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষার শুরুর কথা জানিয়ে বলেন, “বাকি কেন্দ্রগুলো চালু করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এলাকাভিত্তিক নমুনা সংগ্রহ করে সে এলাকাতেই পরীক্ষা করা হবে।”
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কভিড-১৯ এর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে ১২৬ জনের। এর মধ্যে ৫ জনের দেহে সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
এ নিয়ে মোট ৯২০ জনের পরীক্ষা করল আইইডিসিআর। তাতে মোট রোগী ধরা পড়েছে ৪৪ জন।
রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার কথা জানিয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, “নিকটবর্তী হাসপাতালে গেলে সেখানে যদি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়…. নমুনা সংগ্রহ করার ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু সেটা এখনই হচ্ছে না, আরও দু-একটা দিন সময় লাগবে। পরীক্ষাগুলো এলাকাভিত্তিক হবে।”
এতদিন যারা বিদেশ থেকে এসেছিল কিংবা তাদের সংসর্গে থাকা ব্যক্তিদের সংস্পর্শে যারা এসেছিল অথবা গত ১৪ দিনের মধ্যে রোগীর সংস্পর্শে ছিল, তাদের মধ্যে লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দিলে কেবল তাদের নমুনাই পরীক্ষা করছিল আইইডিসিআর। এখন যারা ঝুঁকিপূর্ণ পেশা বা দীর্ঘমেয়াদী রোগ থাকার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন, তাদের নমুনাও সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
ডা. ফ্লোরা বলেন, “নমুনা সংগ্রহের দিক থেকে আপনাদের যে অনুরোধ আছে, তা একটি কিউ তৈরি করেছে। আপনাদের দিক থেকে আগের তুলনায় প্রসারিত সংজ্ঞা অনুযায়ী আমরা নমুনা সংগ্রহ করছি।”
নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা পদ্ধতিতে ‘বেশ সময় লাগছিল’ বলে স্বীকার করে নেন আইইডিসিআর পরিচালক।
তিনি বলেন, “নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখেছি…. অনেককে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আমরা নমুনা সংগ্রহ প্রসারিত করেছি। আমাদের টিম গিয়ে হাসপাতাল থেকে নমুনা নিয়ে আসত। এখন হাসপাতালের নমুনাগুলো হাসপাতালই আমাদের সংগ্রহ করে পাঠাবে।
“আইইডিসিআরে বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যেখানে পরীক্ষাগুলো হবে, আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি, আপনাদের যত শিগগির সম্ভব সেবাটি পৌঁছে দেওয়া যায়। চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব এই সেবাটি পৌঁছে দেওয়া যায় এবং যত দ্রুত সম্ভব এ পরীক্ষার রিপোর্ট আপনাদের কাছে পাঠানো যায়।”
করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে নানা তথ্য জানাতে প্রত্যেকটি জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হটলাইন সার্ভিস চালু করছে বলেও জানান তিনি। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ও আইইডিসিআরে যে হটলাইন নম্বর ছিল, সেখানেও লাইনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
জ্বর বা কাশি হলেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত ভেবে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, “ভেবে বিচলিত বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন না। “আপনার দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বর ছাড়াও স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ নাম্বারটি আছে, সে নম্বরে আপনারা যোগাযোগ করুন।