বাংলাদেশে মসজিদে নামাজ নিয়ে কী হবে?
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিনিধি: বাংলাদেশে সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ওয়াজমাহফিল এবং তীর্থযাত্রাসহ সব ধরণের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জমায়েত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।তবে মসজিদে জামাতে নামাজ পড়া স্থগিত রাখার ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো: আব্দুল্লাহ বলেছেন, বিষয়টি বাংলাদেশে বেশি স্পর্শকাতর হওয়ায় বয়স্ক এবং অসুস্থদের মসজিদে না যাওয়ার অনুরোধ করে কৌশলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, বাংলাদেশে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ধর্ম নিয়ে মানুষের আবেগের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে, সেকারণে জামাতে নামাজে পড়া বন্ধ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তবে ঢাকার অদূরে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলায় দুইশো গম্বুজ মসজিদ নামের একটি বড় মসজিদের শুক্রবারের জুম্মার নামাজ এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। সেই মসজিদ কমিটি নিজেরা করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যখন জনসমাগম বা জমায়েত বন্ধ রাখার কথা বলা হচ্ছে, সেই প্রেক্ষাপটে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের লক্ষীপুর জেলার রায়পুর উপজেলায় একজন ধর্মীয় নেতার আহবানে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন।
সেখানে করোনা থেকে রক্ষার জন্য দোয়া করা হয়। এই ঘটনা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো: আব্দুল্লাহ বলেছেন, লক্ষীপুরের সেই জমায়েতের ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রী সচিবদের এক বৈঠকেও আলোচনা করা হয়েছে।
মি: আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, এধরণের কোনো ধর্মীয় জমায়েত এবং রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিকসহ কোনো জমায়েত যেনো দেশের আর কোথাও এখন হতে না পারে, সে ব্যাপারে প্রশাসন কঠোর ব্যাবস্থা নেবে।
এই সময়টাতে বয়স্ক এবং অসুস্থদের মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ না পড়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।
বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, বাংলাদেশের মসজিদগুলোতে শুক্রবারে জুম্মার নামাজে মুসল্লীদের জমায়েত অনেক বেশি হয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকার মসজিদে জামাতে নামাজ পড়া সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
যদিও সৌদিআরবে মক্কা এবং মদিনায় প্রধান দু’টি মসজিদ ছাড়া অন্য সব মসজিদে নামাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাড়িতে নামাজ পড়ার কথা বলে আজানের বাণীও বদলানো হয়েছে।
ইসলাম নিয়ে গবেষক ও লেখক মুহাম্মদ ওসমান গণি বলেছেন, “প্রকৃত ধর্মীয় জ্ঞান এবং প্রকৃত দীনি শিক্ষার বিকল্প হিসেবে আমরা আবেগকে বেশি প্রশ্রয় দেই। বাংলাদেশে প্রেক্ষাপটে এটা বেশি হচ্ছে। তবে প্রকৃত মূলধারার আলেম যারা, তারা কিন্তু এ বিষয়টা ইতিবাচক হিসেবেই নিচ্ছে।”
“মসজিদে যাওয়া আসলে বয়স্ক এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। তাদের নিরাপদ থাকা খুবই প্রয়োজন। আলেম ওলামাগণও তাই বলছেন। দুই একজন বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ব্যতিক্রম কথা বলছেন।”
আলেম ওলামাদের একটি সংগঠনের পক্ষে মুফতি মো: ফয়জুল্লাহ বলছিলেন, মসজিদে জুম্মার নামাজ সংক্ষপ্ত করাসহ তারাও বিভিন্ন ব্যবস্থার কথা বলছেন।
“গণজমায়েতকে আমরা নিরুৎসাহিত করছি। মসজিদে জামাতে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রেও অসুস্থ, বয়স্ক এবং সম্প্রতি বিদেশ ফেরত, তাদেরকে আমরা মসজিদে আসা থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করছি। আমরা বলছি, শুক্রবারে বাসা থেকে ওজু করে এবং বাসায় সুন্নত নামাজ পড়ে তারপর মসজিদে আসার অনুরোধ করছি। মসজিদে জুম্মার নামাজে খোতবা সংক্ষিপ্ত হবে। ফলে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে জুম্মার নামাজ শেষ করবেন।”
কিন্তু ধর্মীয় নেতাদের অনেকে আবার মসজিদে জমায়েত নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন।
ঢাকার উত্তরা এলাকার বায়তুন নূর মসজিদের খতিব নাজমুল হাসান বলেছেন, “আমরা মুসলমানরা মসজিদে ওজু করে প্রবেশ করি। আর ওজু করার যে নিয়ম বা সুন্নত আছে, সেজন্য মসজিদে নামাজ পড়ায় করোনা আশংকাজনক বলে আমি মনে করিনা।”
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো: আব্দুল্লাহ বলছিলেন, তারা নামাজের ব্যাপারে আলেম ওলামাদের সাথে আলোচনা করে কৌশলে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
“আমরা কিন্তু বলছি, যারা বয়স্ক, যাদের নিয়ে শংকা আছে, বা বিদেশ থেকে যারা এসেছেন, তারা সীমিতভাবে মানে নামাজে ভিড় করাটা আমরা নিষেধ করেছি। আমরা মসজিদের ইমাম এবং খতিবদের মাধ্যমে এ ব্যাপারে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছি।”
তিনি আরও বলেছেন, “আমরা প্রকাশ্যে কোনো মাধ্যমে নামাজ পড়তে যাবেন না, একথা বলতে চাই না। আমাদের দেশে নানান ধরণের লোক আছে স্পর্শকাতর, এটাকে আবার পুঁজি করে একটা হট্টগোল করবে-সেটা আমরা চাচ্ছি না। একইসাথে মানুষ করোনা সম্পর্কে সচেতন হবে, সেটাও আমরা চাচ্ছি। কাজেই কৌশলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
তিনি আরও বলেছেন, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে গেলে এবং পরিস্থিতি খারাপ হলে, সেই প্রেক্ষাপটে সরকার আলেমদের সাথে আরোচনা করে প্রয়োজনীয় আরও পদক্ষেপ নেবে।