মঙ্গলবার, ১০ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » ঢাকা বিমানবন্দরে করোনাভাইরাস শনাক্তে: থার্মাল স্ক্যানিংয়ের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে
ঢাকা বিমানবন্দরে করোনাভাইরাস শনাক্তে: থার্মাল স্ক্যানিংয়ের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে
বিবিসি২৪নিউজ,এম ডি জালাল:করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশটির আন্তর্জাতিক প্রবেশপথগুলোতে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়েছে শুরু থেকেই।
কিছুদিন আগে ঢাকায় বিবিসি২৪নিউজের হেড অব নিউজ এম ডি জালালকে বিমানবন্দরের সব কর্মসূচী সবিস্তার দেখিয়েছিলেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।মনে করার মতো বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক প্রবেশপথগুলোতে করোনাভাইরাস ইস্যুতে যথেষ্ট পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হচ্ছে না।
আসলে পরিস্থিতি কী?
সম্প্রতি দুটি ভিন্ন গন্তব্য থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে ঢাকা এসেছেন।যাত্রী হিসেবে বিমানবন্দরে যা দেখা গেল, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে যখন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন, এই ফ্লাইটে এসেছেন সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশ থেকে আসা যাত্রীরা, যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি।
ঢাকা বিমানবন্দরে সিঙ্গাপুরের বিমানে নামার পর বোর্ডিং ব্রিজ দেয়া হয়নি। ফলে দূরে নামার পর যাত্রীদের বাসে করে অ্যারাইভাল টার্মিনালে নিয়ে আসা হয়। বিমান কর্মীরা জানালেন, সিঙ্গাপুর থেকে আসা বিমান বলে সেগুলোকে মূল টার্মিনালের দূরে রাখা হচ্ছে।
বিমানেই একটি হেলথ ডিক্লারেশন ফরম দেয়া হয়েছিল, যেখানে ব্যাখ্যা করতে হয় যে, কোন দেশ থেকে যাত্রীরা আসছেন, গত দুই সপ্তাহের মধ্যে চীনে ভ্রমণ করেছেন কিনা, কারো জ্বর আছে কিনা ইত্যাদি।বাংলাদেশের প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়েছে।শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনাভাইরাস শনাক্তে আন্তর্জাতিক মানের থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহার করা হচ্ছে না, যে
থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহার করা হচ্ছে তাও সঠিক ভাবে ব্যবহার হচ্ছে না।যার কারনে ইতালি ফেরত দুই ব্যক্তির সংক্রমণ ধরা না পড়ায়, বিমানবন্দরের করোনাভাইরাস স্ক্যানিংয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন রোগীর তথ্য নিশ্চিত করেছে।
তাদের মধ্যে দু’জন সম্প্রতি ইতালি থেকে দেশে ফিরেছেন, অন্যজন দেশেই অবস্থান করছিলেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেভাবে বিশ্বের দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে বাংলাদেশও যে খুব বেশিদিন এর বাইরে থাকবে না, তা একরকম নিশ্চিত ছিল।
অভিযোগ উঠেছিল,বিমানবন্দরে করোনাভাইরাস শনাক্তে আন্তর্জাতিক মানের থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহার করা হচ্ছে না। তাছাড়া তুলনামূলক কম জনবল এবং একটিমাত্র স্ক্যানার দিয়ে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে।
এর ফলে যে কোনো সময় করোনা আক্রান্ত রোগী দেশে প্রবেশ করতে পারে। সে আশঙ্কাই এবার সত্য হল। যেহেতু বিদেশ থেকেই করোনোভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি, সেহেতু বিমানবন্দরের এ সীমাবদ্ধতা দ্রুত দূর করা প্রয়োজন।
বস্তুত দেশের সব এন্ট্রি পয়েন্টেই (প্রবেশ পথ) নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি। নয়তো বহু করোনার রোগীকে সময়মতো শনাক্ত করা সম্ভব হবে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি।
আমাদের দেশ জনবহুল। ফলে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা এমনিতেই বেশি। করোনার সংক্রমণ রোধে যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন, জনগণের যে সচেতনতা থাকা দরকার, স্বভাবতই অধিকাংশ মানুষের তা নেই। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ এ ব্যাপারে কমই জানে।
অথচ বর্তমানে দেশে শুধু একটি প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরে করোনাভাইরাস নির্ণয়ের সুযোগ আছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, শুধু একটি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলে সংকটময় মুহূর্তে জটিলতা বাড়বে। কাজেই দেশে করোনাভাইরাস নির্ণয়ের ব্যবস্থা আরও বাড়াতে হবে এবং তা জরুরি ভিত্তিতে।
দেশে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ায় স্বভাবতই মানুষের মধ্যে এ নিয়ে একধরনের আতঙ্ক বা ভীতি কাজ করছে। আমরা মনে করি, মানুষ সচেতন ও সতর্ক থাকলে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই। বরং মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
যেহেতু রোগটি প্রাণঘাতী হয়ে দেখা দিয়েছে, সেহেতু এ ব্যাপারে আমাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে অবশ্যই। তবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হলে এ নিয়ে জনমনে উৎকণ্ঠার কোনো কারণ ঘটবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।
এ ধরনের ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যেহেতু সারা পৃথিবীতেই নতুন, সেহেতু এ রোগ মোকাবেলার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা বা উদাহরণ আমাদের সামনে নেই। তবে কী কী পদক্ষেপ নিলে এ ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যায়, তা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নিশ্চয়ই জানেন।
করোনাভাইরাস সর্ম্পকে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে কিছু প্রস্তুতিও নিয়েছে।জনগণকে রোগটির বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিতে পারেন। এ বিষয়ক জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম দেশব্যাপী চালানো উচিত বলে আমরা মনে করি।