রবিবার, ৮ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু » করোনাভাইরাস: উত্তর ইটালিতে ১ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ কোয়ারেন্টিনে
করোনাভাইরাস: উত্তর ইটালিতে ১ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ কোয়ারেন্টিনে
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইটালির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন লমবার্ডিসহ আরো ১৪ টা প্রদেশে অন্তত এক কোটি ৬০ লক্ষ মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।এই অবস্থা এপ্রিলের প্রথম দিক পর্যন্ত থাকবে। দেশটিতে নাটকীয়ভাবে করোনাভাইরাস বেড়ে যাওয়ায় ব্যায়ামাগার, সুইমিংপুল, যাদুঘর এবং স্কি রিসোর্টগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইটালি মারাত্মকভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
শনিবার এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়।
বাণিজ্যিক কেন্দ্র মিলান এবং পর্যটকদের মূল আকর্ষণ কেন্দ্র ভেনিসে এই পদক্ষেপ এপ্রিলের তিন তারিখ পর্যন্ত চলবে।
ইটালিতে মৃতের সংখ্যা এখন ২৩০ জন ছাড়িয়ে গেছে। কর্মকর্তারা বলছেন ২৪ ঘণ্টায় ৫০ জনের বেশি মারা গেছে।
নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা শনিবার এক ধাক্কায় ১,২০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫,৮৮৩ জন।
লমবার্ডির পুরো উত্তর অঞ্চল যেখানে এক কোটি লোকের বাস, এবং ইটালির বাণিজ্যিক নগরী মিলান লক ডাউন বা বন্ধ রাখা হবে তবে জরুরি ভিত্তিতে কিছু করার প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় হতে পারে।
এছাড়া ১৪ টা প্রদেশের মধ্যে ভেনিস, পারমা এবং মোদেনা বন্ধ থাকবে যার ফলে এক কোটি ৬০ লক্ষ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে।
প্রধানমন্ত্রী জিউসেপে কন্টি বলেছেন, যেসব প্রদেশ আক্রান্ত হয়েছে তার মধ্যে মোদেনা, পারমা, পিয়াসেনজা, রেজ্জিও এমিলিয়া, রিমিনি, পেসারো এবং আরবিনো, আলেসান্দ্রিয়া, অ্যাসটি, নোভারা, ভারবানো কিউসিও ওসোলা, ভারসেই, পাদুয়া, ট্রেভিসো এবং ভেনিস।
এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারের মত মানুষ উত্তর ইটালিতে কোয়ারেন্টিনে রয়েছে।
কী কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে?
বিয়ের অনুষ্ঠান ও শেষকৃত্যসহ ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত।
সিনেমা, নাইট-ক্লাব, ব্যায়ামাগার, সুইমিংপুল, যাদুঘর এবং স্কি রিসোর্টগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।
রেস্তোরাঁ এবং ক্যাফে খোলা থাকতে পারে কিন্তু সেক্ষেত্রে ক্রেতাদেরকে অবশ্যই এক মিটার দূরত্ব রেখে বসতে হবে।
মানুষজনদের বলা হবে যাতে করে তারা যতটা পারে ততটা ঘরে থাকে।
যদি কেউ কোয়ারেন্টিন ভঙ্গ করে তাহলে তাকে তিন মাস জেলে কাটাতে হবে।
সব ধরণের খেলাধুলার আসর বন্ধ থাকবে। ইটালির ফুটবল প্লেয়ার ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট সব ম্যাচ পিছিয়ে দেয়ার আহ্বান করেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইটালিকে পরামর্শ দিয়েছে যাতে করে দেশটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে কঠিন নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এই ব্যাপক মাত্রায় কোয়ারেন্টিন করার পরিকল্পনা চীনও করেছিল। যে পদক্ষেপকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে কাজে আসায় প্রশংসা করেছিল।
ইটালির প্রথম সারির রাজনীতিবিদ নিকোলা জিঙ্গারেত্তি বলেছেন, শনিবার তিনি টেস্ট করে দেখেছেন তিনি করোনায় আক্রান্ত।
ইটালির মধ্য-বাম ডেমোক্রেটিক পার্টির এই নেতা ফেসবুকে লিখেছেন ” আমি ভালো আছি। কিন্তু কিছু দিন আমাকে বাড়িতে থাকতে হবে”।
দেশটি বলছে, এই সংকট মোকাবেলায় যেসব ডাক্তার অবসরে গেছে তাদেরকে আবার কাজে লাগানো হবে।
সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার
ইরান ৬ হাজার আক্রান্ত, ১৪৫ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে।
আর বিশ্বব্যাপী এক লক্ষের বেশি করোনায় আক্রান্তের খবর রয়েছে।
ইরানে আরেকজন সংসদ সদস্য মারা গেছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা শঙ্কা প্রকাশ করছেন আক্রান্তের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।
বিশ্বের নানা দেশে এখন পর্যন্ত তিন হাজার ৫শ জনের মৃত্যু হয়েছে এই ভাইরাসে।
এর বেশিরভাগই চীনে। গত ডিসেম্বরে এখান থেকেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়াকে “গভীর উদ্বেগের” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এবং সব দেশকে এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্বের সাম্প্রতিক চিত্র কী?
দক্ষিণ কোরিয়া:
রবিবার দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা বলেছেন ৩৬৭ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশটিতে এখন ৭,১৩৪ জন আক্রান্ত।
চীন:
চীন জানুয়ারির পর থেকে একদিনে সবচেয়ে কম আক্রান্তের খবর দিয়েছে। উহানে আরো ২৭ জন মারা গেছে, যেখানে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল।
ইরান:
ইরানে গত দিনে ২১ জন মারা গেছে। এছাড়া ১৬,০০০ জনের বেশি পরীক্ষা করা হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র:
স্যান ফ্রান্সিসকোতে একটা প্রমোদতরীতে ২১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে জাহাজটি বন্দরে ভিড়তে দেয়া হয় নি। সেখানে ৩৫৩৩ জন যাত্রী এবং ক্রু রয়েছে।
ওয়াশিংটনে আরো দুইজন মারা গেছে। এই নিয়ে দেশটিতে ১৯জনের মারা গেল।
শুক্রবার নিউইয়র্কে ৪৪ থেকে ৭৬ জন আক্রান্ত হলে শহরের গভর্নর স্টেটটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনায় ৬৪ বছর বয়সী একজন মারা গেছে
অস্ট্রেলিয়া:
অস্ট্রেলিয়াতে তিন জন মারা গেছে।
অন্যান্য দেশের মধ্যে ফ্রান্সে ৯৪৯জন, জার্মানিতে ৭৯৫, স্পেন ৪৪১, যুক্তরাজ্যে ২০৬, নেদারল্যান্ডসে ১৮৮ জন আক্রান্ত।
এদিকে কলাম্বিয়া, বুলগেরিয়া, কোস্টা রিকা, মাল্টা, দ্যা মালদিভাস, এবং প্যারাগুয়ে তাদের প্রথম আক্রমণের ঘটনা নিশ্চিত করেছে।
আর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে এই ভাইরাস আক্রমণের পর ৮০ হাজার বেশি লোক আক্রান্ত হয়েছে।