মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » শিরোনাম | সাবলিড » টাকা না থাকলে উন্নয়ন কাজ কিভাবে করছি : প্রধানমন্ত্রী
টাকা না থাকলে উন্নয়ন কাজ কিভাবে করছি : প্রধানমন্ত্রী
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক: সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কারো প্রতি বিদ্বেষ নিয়ে চলি না। প্রতিশোধ নিতেও যাইনি। যেখানে অন্যায় হয়েছে, সেখানে ন্যায় করার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এটি আজ কারো কাছে লুকায়িত নেই। এক সময় দেশ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিল। মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা ছিল না। আমরা অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম। এক দশকে আমরা বাংলাদেশর অবস্থার পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি।তিনি বলেন, কেউ আমাদের উন্নয়ন না দেখলে তা তাদের দেখার ভুল। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত দেশের মানুষ অর্থনৈতিক অগ্রগতির সুফল ভোগ করছেন। আমাদের ব্যাংকে টাকা নেই-একথা সত্য নয়। টাকা না থাকলে আমরা এতোগুলো উন্নয়ন কাজ কিভাবে করছি। আমাদের ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ রয়েছে, যা দিয়ে আমাদের ৬ মাসের খাদ্য কেনা যাবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ৩০ মিনিটের বক্তব্যে সংসদে রাষ্ট্রপতির দেয়া ভাষণের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক কষ্ট, ব্যাথা-বেদনা বুকে চেপে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশের মানুষ যেন একটু সুখের মুখ দেখে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে- সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষকে সামনে রেখে দেশের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।
রাষ্ট্রপতি তার ভাষণের মধ্যে দিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন। প্রত্যেক এমপি এই ভাষণ ভালোভাবে পড়লে দেশের জন্য আমরা যে উন্নয়ন করেছি তা জানতে পারবেন।
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের বিষয়টি আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।
টাকার সঙ্কট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই আমাদের ১৮ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে। টাকা আছে বলেই আমরা অনেকগুলো মেগা প্রকল্প নিয়েছি। ৬৮৫টি মাধ্যমি ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে মাঝে মধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। আমরা সেগুলো মোকাবেলায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিই। যেমন করোনা ভাইরাসের বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি, যাতে চীনে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করতে না পারে। ডেঙ্গু নিয়ে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। মশার ব্যাপারে আমাদের নিজেদের সচেতন থাকতে হবে। নিজেদের বাড়িঘর আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে মশা জন্মাতে না পারে। মশা যদি জন্মাতেই থাকে তাহলে তাতো মুখে ডুকবেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে একটা খেলা শুরু হয়। এর কারণ মানুষ প্রয়োজেনের তুলনায় একসঙ্গে বেশি কিনে থাকে। আমি আতঙ্কিত না হয়ে রমজানে নিত্যপণ্য অনেকগুলো এক সঙ্গে না কেনেন।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে চীন থেকে বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে ওষধের কাঁচামালসহ অন্যান্য কাঁচামাল আমদানির বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছি।
নারী ও শিশু নির্যাতনের ব্যাপারে শেখ হাসিনা বলেন, এদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। এমন অপরাধের বিরোধী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা ছোট্ট শিশু থেকে বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের ধর্ষণ করছে তারা পশুর চাইতেও অধম। এটি অত্যন্ত জঘন্য কাজ। তাদেরও তোমার বোন আছে। তাদেরও তো ঘরে মেয়ে আছে। মানুষ এতো জঘন্য চরিত্রের কিভাবে হতে পারে? আমরা এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী জঙ্গি-সন্ত্রাস ও ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা তুলে ধরে দেশবাসীকে এদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদী-মাদক ও ধর্ষকদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা, নানা ষড়যন্ত্রসহ বৈরি অবস্থা মোকাবেলা করেই আমরা দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। দেশের এই অগ্রযাত্রার ধারা অব্যাহত রাখতে তিনি দেশবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতাও কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কিছু ক্ষেত্রে তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির ভাষণ যদি উনি ভালো করে পড়েন, তবে হতাশ না হয়ে উজ্জ্বীবিত হবেন। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি, তথ্যপ্রযুক্তি বিদেশে রফতানিও শুরু করেছি। কর্মসংস্থানের জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করে দিচ্ছি।
বিদেশে অনেকে বিপুল টাকা খরচ করে বিদেশে যায়, কিন্তু চাকুরির গ্যারান্টি নেই। যারা ভুল পথে যায়, দালালের খপ্পরে পড়ে তারাই বিপদে পড়ে। এতো টাকা খরচ করে বিদেশে না গিয়ে দেশেই বিনিয়োগ করে একেক জন কর্মদ্যোক্তায় পরিণত হতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়নের ওপরে রয়েছে, দেশের অর্থনীতিও অনেক শক্তিশালী। ব্যাংকে টাকার কোন সমস্যা নেই। প্রণোদনা দিচ্ছি বলেই ১৮ বিলিয়ন রেমিটেন্স এসেছে। সামাজিক নিরাপত্তা, অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাপকভাবে হচ্ছে। টাকা যদি নাই থাকতো তবে এতো উন্নয়ন হচ্ছে কীভাবে? এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ থেকে ২০ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছি। এটাও দেশের জন্য একটা বড় অর্জন।
বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টি সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা আওয়ামী লীগকে নির্যাতন করেছে। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে ’৮৮ সালে আমাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। অগ্নিসন্ত্রাস করে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। এসব বৈরি অবস্থা মোকাবেলা করে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।