মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক » কতটা নারী নেতৃত্ব আসছে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে?
কতটা নারী নেতৃত্ব আসছে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে?
বিবিসি২৪নিউজ,দিল্লি প্রতিনিধি:ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নারী কর্মকর্তাদের ‘অধিনায়কত্বের পদে’ বিবেচনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বাহিনীর যুদ্ধ বিভাগগুলোতে তারা এখনই ঢুকতে পারছেন না।ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য যুগান্তকারী এক রায়ে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, মহিলা অফিসাররাও এখন থেকে পুরুষদের মতোই বাহিনীর নেতৃত্বদানকারী ভূমিকায় যেতে পারবেন।
মহিলা অফিসারদের ‘কম্যান্ড পোজিশনে’ যাওয়ার বিরোধিতা করে সরকার এর আগে আদালতে যুক্তি দিয়েছিল, পুরুষ সৈন্যরা এখনও নারী কমান্ডারের আদেশ মানার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নয়।
রায়ে সেই বক্তব্যেরও তীব্র সমালোচনা করেছে শীর্ষ আদালত। আর রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় সেনার নারী কর্মকর্তারা বলছেন, যুগ যুগ ধরে সেনাবাহিনীতে যে ‘লিঙ্গ বৈষম্য’-র সংস্কৃতি চালু আছে এখন তার অনেকটাই অবসান হবে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নারী কর্মকর্তাদের কেন কম্যান্ড পোজিশনে দেখা যায় না, তার হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে সরকার সুপ্রিম কোর্টে মূলত দুটি কারণ দেখিয়েছিল।
এক, মেয়েদের শারীরিক বা ফিজিওলজিক্যাল সীমাবদ্ধতা আর দুই, সামাজিক রীতিনীতি - যেখানে গ্রামের একজন অল্পশিক্ষিত জওয়ানের নারী কমান্ডারের নেতৃত্ব মেনে নিতে অসুবিধে হতে পারে। কিন্তু এদিন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও অজয় রাস্তোগির বেঞ্চ তাদের রায়ে দুটো যুক্তিই খারিজ করে দিয়েছেন।
দিল্লিতে প্রতিরক্ষা সংবাদদাতা সৃজা কুন্ডু বলছিলেন, “শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক এই যে দুটো কারণ মেয়েদের সামনে বাধা তৈরি করতে পারে বলে বলা হয়েছিল বিচারপতিরা মনে করেছেন নারী অধিকারের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।”
“বরং কেন্দ্রের যুক্তিকে তারা বৈষম্যমূলক ও স্টিরিওটাইপ বলেই মনে করেছেন - এবং নারী কর্মকর্তাদের সামনে সেনাবাহিনীতে কেরিয়ার গড়ে তোলার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছেন।”
বাদীপক্ষের আইনজীবী তথা বিজেপি এমপি মীনাক্ষী লেখি অবশ্য দাবি করছেন, “বাহিনীতে নারী নেতৃত্ব আনতে সরকার ২০১৮তেই মনস্থির করে ফেলেছিল, লাল কেল্লার ভাষণ থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদী তা বলেওছিলেন।”
কিন্তু “সেনা কর্তৃপক্ষই এ ব্যাপারে আদালতকে বিভ্রান্ত করেছিল” বলে তিনি এদিন দাবি করেছেন।
এদিনের রায়ের পর ভারতীয় সেনার একজন নারী কর্মকর্তা তার পুরুষ সতীর্থদের মতোই নিজেদের যোগ্যতায় কর্নেল বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদায় যেতে পারবেন, নিয়ম তাতে কোনও বাধা হয়ে উঠবে না। প্রসঙ্গত, একজন কর্নেলের অধীনে একটি করে সেনা ব্যাটেলিয়ন থাকে, যাতে সাধারণত ৮৫০ পুরুষ সৈন্য থাকেন।
লে: কর্নেল সন্ধ্যা যাদবের কথায়, “এখন থেকে যেখানে সম্ভব সেখানেই নারী অফিসারদের কমান্ড পোজিশনের জন্য বিবেচনা করতে হবে।”
তাঁর মতো আরও বহু নারী কর্মকর্তা বহু বছর ধরে এই অধিকারের জন্য লড়াই করে আসছেন, যথারীতি তারাও আজকের রায়ে ভীষণই খুশি ও উচ্ছ্বসিত। সেনা কর্মকর্তা সীমা সিংয়ের কথায়, “আমরা এই দিনটার জন্য অনেক অনেক বছর ধরে অপেক্ষা করছি। তরুণী কর্মকর্তারা যেমন এতে বাড়তি অনুপ্রেরণা পাবেন, তেমনি ভারতকেও এটা বিশ্বে আলাদা মর্যাদা দেবে।”
সেনা ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের অঞ্জলি বিস্তও মনে করছেন, “এটি একটি খুবই প্রগতিশীল রায়।”
“যে মেয়েরা সেনাবাহিনীতে আসতে চায়, তাদের সামনে আজ নতুন একটা রাস্তা খুলে গেল - মিলল একটা পূর্ণাঙ্গ কেরিয়ারের প্রতিশ্রুতি, যাতে তারা খোলা মন নিয়ে বাহিনীতে আসতে পারেন”, বলছিলেন তিনি।
তবে বাহিনীর যেগুলো কম্ব্যাট আর্ম বা যুদ্ধ বিভাগ - যেমন ইনফ্যান্ট্রি, আর্টিলারি বা আর্মার্ড কোর, সেগুলোতে মেয়েরা এখনই ঢুকতে পারছেন না।
এই কম্ব্যাট আর্মের অভিজ্ঞতা ছাড়া ভারতীয় সেনাবাহিনীর শীর্ষ পদে বসার কোনও নজির নেই ।
ফলে আজকের রায়ের পর কাগজে-কলমে একজন নারী কর্মকর্তার যদিও সেনাপ্রধান হতেও কোনও অসুবিধা নেই, ভারতীয় সেনা একদিন একজন নারী সেনাধ্যক্ষও পেতে পারে তা অবশ্য এখনই বলা যাচ্ছে না।