বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » একসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা: শিক্ষা ক্ষেত্রে কতটুকু সুফল বয়ে আনবে?
একসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা: শিক্ষা ক্ষেত্রে কতটুকু সুফল বয়ে আনবে?
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিনিধি:দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন্দ্রীয়ভাবে কোন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে, সে বিষয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।তাতে বলা হয়েছে, কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখার জন্য তিনটি পৃথক কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি করা হবে। এই তিন শাখায় তিন দিন আলাদাভাবে পরীক্ষা হবে। দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র থাকবে। ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের পছন্দের কেন্দ্রে অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে পারবে।
কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির কাজ হবে কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশ করা। এরপর সেই ফলাফলের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী ভর্তি করবে।
শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রচলিত পদ্ধতিতে (কিংবা যেভাবে তারা উপযুক্ত মনে করে) তাদের প্রয়োজনীয় শর্ত সংযোজন করে আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। শিক্ষার্থীরা তখন শর্তপূরণ সাপেক্ষে তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন করে আর পরীক্ষা নেবে না। শর্ত পূরণ হলে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার স্কোর বিবেচনায় নিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেবে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয় বলে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে হয়। একই বিষয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা দিতে তাদের ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়।
আবার এক দিনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার তারিখ পড়লে শিক্ষার্থীকে যে কোনো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে হয়।
এ ব্যবস্থার বদলে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি ভর্তি পরীক্ষা চালুর পরিকল্পনা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই সরকারের তরফ থেকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছিল, যাকে বলা হচ্ছিল সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতি। বর্তমানে দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে এ ধরনের পদ্ধতিতেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
সরকারের গত মেয়াদে তখনকার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন পক্ষের বিরোধিতায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গতবছর আবারও বিষয়টি বাস্তবায়নে উদ্যোগী হন এবং সম্প্রতি উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এ বছর থেকেই কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত জানায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের পুরনো পদ্ধতি ধরে রাখতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান এক অনুষ্ঠানে এর সমালোচনা করেন।
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে ইউজিসির এক বৈঠকের পর জাননো হয়, এ বছর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে (সমন্বিত) ভর্তি পরীক্ষা নিতে সবাই সম্মত হয়েছে। এরপর ইউজিসি থেকে পরীক্ষা পদ্ধতির খসড়া প্রস্তাবনাটি গণমাধ্যমকর্মীদের পাঠানো হয়।
তাতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে আগে যেভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে, তার প্রতি ‘সম্পূর্ণ আস্থা রেখেই’ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা হবে।
>> বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ‘অভিজ্ঞ এবং জ্যেষ্ঠ’ শিক্ষকদের নিয়ে কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখার জন্য পৃথক পৃথক তিনটি কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি গঠন করা হবে।
>> উচ্চ মাধ্যমিক ফল প্রকাশের পরপরই কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির নির্ধারিত তারিখে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবে। তিন শাখায় তিন দিন আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
>> প্রত্যেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র থাকবে। ছাত্র-ছাত্রীরা অভিন্ন প্রশ্নে তাদের পছন্দ অনুযায়ী কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবে।
>> কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি তাদের সামর্থ্যের (পরীক্ষা নেওয়ার) অতিরিক্ত আবেদন জমা পড়ে, তাহলে মেধাক্রম অনুযায়ী নিকটতম অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
>> কেন্দ্রীয় এই ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তিচ্ছু ছাত্র-ছাত্রীদের একটি স্কোর তৈরি করে দেবে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি।
>> পরে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে।সেখানে তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব শর্ত যোগ করতে পারবে।
>> বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন করে আর পরীক্ষা নিতে পারবে না। কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় প্রাপ্ত স্কোর বিবেচনা করেই তাদের শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হবে।
>> তবে স্থাপত্য, চারুকলা ও সংগীতের মত বিশেষায়িত বিভাগগুলো তাদের প্রয়োজনমত ব্যবহারিক পরীক্ষা নিতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার স্কোর যুক্ত করে মেধাতালিকা তৈরি করতে হবে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, এই খসড়া নিয়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আপত্তি আছে কি না, তা ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই জানাতে বলা হয়েছে।
“প্রাথমিক এই খসড়া সামনে নিয়ে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হবে। তারা বসে দেখবে- কোথায় আর কী কী লাগবে, কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, খুঁটিনাটি সব বিষয় দেখে তারা সিদ্ধান্ত নেবে।
কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আপত্তি জানালে কী হবে জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, “এখন পর্যন্ত কারো আপত্তি নেই। তবে প্রত্যেকেরই নিজস্ব ম্যাকানিজম আছে। সেই ম্যাকানিজমে যদি কোনো বাধা, অসুবিধা বা আপত্তি থাকে এবং রাজি না হয়, সেটা এই মাসের মধ্যেই জানাতে হবে।
কারও আপত্তি থাকলেও চলতি বছরই এ পদ্ধতি চালুর ওপর জোর দিয়ে অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বলেন, “আমাদের যেটা দায়িত্ব, সেটা আমরা পালন করব। আমরা কারো জন্য বসে থাকতে পারব না। আমরা এবারই কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেব, যে কয়জন থাকবে সে কয়জনকে নিয়েই নেব। যতদূর পারি, জনগণের দুর্ভোগ থেকে রক্ষায় মডার্ন এই পদ্ধতিতে এগোব।”
শেষ পর্যন্ত দুই-তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্তভাবে আপত্তি জানাতে পারে- এমন ধারণার কথা জানিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, “বুয়েট এতদিন গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার চিন্তা করে এগোচ্ছিল। এখন কেন্দ্রীয়ভাবে নেওয়া হবে। বুয়েটের উপচার্য বলেছেন, উনি (বুয়েট প্রশাসনকে) কনভিন্স করার চেষ্টা করবেন।