প্রথম ওয়ানডেতে ৩৪৭ করেও হারল- ভারত
বিবিসি২৪নিউজ,স্পোর্টস ডেস্ক:সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আগে ব্যাটিং করে ৩৪৭ রান করেও নিউজিল্যান্ডের কাছে ৪ উইকেটে হেরে গেছে ভারত।টি-টোয়েন্টি সিরিজে জয়ের খুব কাছে এসেও বারবার হতাশ হয়েছে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু ওয়ানডেতে গল্পটা এবার বদলাল। হ্যামিল্টনে আজ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে রস টেলরের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ভারতের ৩৪৭ রান ৪ উইকেট ও ১১ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড। ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও এটিই।
ভারতের হয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে নিউজিল্যান্ডের ভরসা হয়ে থাকা টেলরের সেঞ্চুরিতে তা ম্লান। এমনিতেই দারুণ ফর্মে ছিলেন টেলর, এই সিরিজের আগে ১২ ইনিংসে ফিফটির নিচে আউট হয়েছেন মাত্র দুবার। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে হিসেব করলেও টেলরের ৬৯.৭২ ব্যাটিং গড়ের চেয়ে বেশি গড় ওয়ানডেতে ছিল শুধু কোহলিরই। সেই টেলরের ব্যাট আজ দেখল ৮৪ বলে ১০৯ রানের চোখধাঁধানো ইনিংস। ৭৩ বলে পৌঁছেছেন সেঞ্চুরিতে। ১০ চার ৪ ছক্কায় দলকে জিতিয়েই ছেড়েছেন মাঠ।
দুই নিয়মিত ওপেনার নেই, তাঁদের বদলে আগে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতের ব্যাটিং উদ্বোধনে জুটি বাঁধলেন পৃথ্বী শ ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল। কিন্তু ৫০ রানের জুটি গড়ার পর ৫ বল আর ৪ রানের মধ্যে দুজনই প্যাভিলিয়নে। সেখান থেকে তৃতীয় উইকেটে শ্রেয়াস আইয়ারের সঙ্গে বিরাট কোহলির ১২০ বলে ১০২ রানের জুটি। ৬৩ বলে ৫১ রানের ইনিংসে কোহলি শুরু থেকেই ছিলেন সাবলীল, এক-দুইয়ের পাশাপাশি মাঝে মাঝে বাউন্ডারি মেরেছেন ৬টি। আইয়ার শুরুর দিকে ধুঁকেছেন, প্রথম ২৯ বলে তাঁর রান ছিল ১৫, দুবার ছোটখাট সুযোগও দিয়েছেন ফিল্ডারদের। কিন্তু এরপর থেকেই সহজ হতে শুরু করেন। নিউজিল্যান্ডের মিডিয়াম পেসারদের ৩০ গজের ওপরে উড়িয়ে মারতে শুরু করেন। সে সময়ে আইয়ারের শটে কোহলির মুখে বারবার ‘শট!’ শোনা যাচ্ছিল স্টাম্প মাইকে।
২৯তম ওভারে দলের ১৫৬ রানের সময় ইশ সোধির ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে কোহলি যখন ফিরছেন, নিউজিল্যান্ড তখন ম্যাচে ফেরার আশা করছিল। চতুর্থ ও পঞ্চম উইকেট জুটি নিয়ে ভারতের দুশ্চিন্তা তো সেই বিশ্বকাপ থেকেই চলছে! কিন্তু আইয়ার আর লোকেশ রাহুল সম্ভবত ভারতের দুশ্চিন্তার সমাধান হয়ে আসছেন। আইয়ার তো সেঞ্চুরিই পেলেন, অনেকটা সময় ভুগলেও তাঁর সেঞ্চুরি এসেছে ১০১ বলে। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১০৭ বলে ১০৩ রান নিয়ে। আর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুলকে পাঁচে নামাল ভারত। তাতে প্রথমবারে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫২ বলে রাহুল করেছিলেন ৮০, আজ ৬৪ বলে ৮৮। রাহুল ক্রিজে আসার পর ২১.২ ওভারে ভারত নিয়েছে ১৯১ রান।
৩৪৮ রানের লক্ষ্যে নেমে শুরুতে দেখেশুনেই খেলেছে নিউজিল্যান্ড। উদ্বোধনী জুটিতে ৯৪ বলে এসেছে ৮৫ রান। মার্টিন গাপটিল ৩২ রানে আউট হওয়ার কিছুক্ষণ পর তিনে নামা টম ব্লান্ডেলও (৯) ফিরলেন। কিন্তু আরেক ওপেনার হেনরি নিকোলস ছিলেন। তাঁর সঙ্গেই নিউজিল্যান্ডকে পথে ফেরানো শুরু রস টেলরের। চতুর্থ উইকেটে নিকোলসের সঙ্গে জুটিটা অবশ্য খুব বেশি বড় হয়নি। ৭৮ রান করে নিকোলস যখন ফিরেছেন, জুটিটা হলো ৬২ রানের। স্কোরবোর্ডে তখন ২৮.৩ ওভারে নিউজিল্যান্ডের রান ৩ উইকেটে ১৭১।
এরপর পঞ্চম উইকেটে আবার টম ল্যাথামের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডকে জয়ের দিকে টেনে নেওয়ার শুরু টেলরের। ল্যাথাম দারুণ সঙ্গত দিয়েছেন, ৪৮ বলে ৮ চার ২ ছক্কায় করেছেন ৬৯ রান। টেলরও রানের গতি কখনো কমতে দেননি। পঞ্চম উইকেটে দুজনের জুটিতে মাত্র ৭৯ বলে এসেছে ১৩৮ রান! ম্যাচ তো সেখানেই নিউজিল্যান্ডের দিকে হেলে গেছে।
কিন্তু ৪২তম ওভারে ল্যাথাম ফেরার পর হঠাৎ নিউজিল্যান্ডকে একটু শঙ্কা পেয়ে বসেছিল। টি-টোয়েন্টি সিরিজে বারবার শেষে এসে হতাশ হওয়ার শঙ্কাটা উঁকি দিচ্ছিল কি না, কে জানে। ৪৬তম ওভারে ৪ বলের মধ্যে জিমি নিশাম (৯) ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম (১) ফিরলেন। তখনো অবশ্য রান-বলের হিসেবে অনেক এগিয়েই ছিল নিউজিল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত মিচেল স্যান্টনারকে (৯ বলে ১২) নিয়ে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন টেলর।