বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | শিরোনাম | সাবলিড » বিপদের মুখে ভারত: আন্দোলনে ছাত্র-তরুণরা সক্রিয়
বিপদের মুখে ভারত: আন্দোলনে ছাত্র-তরুণরা সক্রিয়
বিবিসি২৪নিউজ,দিল্লি প্রতিনিধি:ভারতে নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের দুই মাস হলো। এখনো থামেনি প্রতিবাদ। তবে কিছুটা থমকেছে। এই প্রতিবাদ একই সঙ্গে নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধেও। কিন্তু এর শেষ কোথায়? এর ভবিষ্যৎ কী? এই প্রতিবাদ কীভাবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে? না পারলে পরিণতি কী হবে তার? সংগঠক ও অংশগ্রহণকারী ছাড়িয়ে এসব প্রশ্ন ভাবাচ্ছে ভারত সীমান্তের বাইরে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের মানুষকেও।অনেক অর্জন, অনেক দুর্বলতা
বিশ্বজুড়ে মনোযোগ পাওয়া এই আন্দোলনের প্রধান দিক তার অহিংস চরিত্র। প্রায় ৫০টি বড় জমায়েত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু সহিংসতা ছাড়াই দেশটির সব প্রান্তে ছড়িয়েছে প্রতিবাদের এই ঢেউ। আন্দোলনকারীরা নিজস্ব শ্রেণি-পেশার কোনো বিষয়ে নয়, দেশের জন্য নীতিগত বিষয়ে কথা বলছে। সবই হচ্ছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে, নিজ নিজ খরচে। সমকালীন দক্ষিণ এশিয়ায় অনন্য নজির এটা।
বিশ্বের ‘বৃহৎ গণতন্ত্র’-এর ‘সেক্যুলার’ রাজনৈতিক আবহে সংখ্যালঘুরা কতটা দুঃসহ অবস্থায় আছে, সেটাও জানাল এই আন্দোলন। একই আন্দোলন এ–ও দেখাল, সংখ্যালঘুদের জন্য সংখ্যাগুরুরা অনেকে রাস্তায় মার খাওয়ার ঝুঁকি নিতেও প্রস্তুত। এ রকম দৃশ্য সংখ্যালঘুদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নামতে উৎসাহিত করেছে। এই আন্দোলন গণতন্ত্র ও সেক্যুলারিজমের অনন্য এক মঞ্চ হিসেবে তৈরি করতে পেরেছে নিজেকে।
ধর্ম ও রাজনীতির সর্বগ্রাসী মিশ্রণের যুগে সেক্যুলারিজম তরুণদের এতটা আকৃষ্ট করতে পারবে, এটা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বিস্মিত করেছে। আন্দোলনকারীদের গায়ের রং, পোশাক, বর্ণ ও ধর্মবিশ্বাসের বৈচিত্র্যও এর আরেকটা শক্তির দিক। এতে নেতৃত্বের কোনো কর্তৃত্ববাদী কাঠামোও ছিল না এবং এখনো নেই। এ রকম আরও অনেক অর্জন আছে এই আন্দোলনের। পাশাপাশি এ–ও মনে রাখা দরকার আন্দোলনের প্রতিপক্ষ আরএসএস পরিবার। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক গোত্রের একটি তারা। এই আন্দোলনকে পরাস্ত করতে, এর শেষ দেখতে আরএসএস সবকিছুই করছে। ইতিমধ্যে কিছু কিছু স্থানে আন্দোলনে ফাটল ধরানো গেছে। তরুণদের কাউকে কাউকে ‘দেশবিরোধী শক্তি’ হিসেবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।
আন্দোলনের কৌশলগত একটা ভুল, প্রতিবাদ সমাবেশগুলোতে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় প্রার্থনায় লিপ্ত হতে দেওয়া। ভারতের মুসলমান তারুণ্য বিপুল সংখ্যায় আন্দোলনে শামিল ছিল এবং আছে। কিন্তু সেক্যুলার সংগঠকেরা অনেক সময় অতি উৎসাহের পরিচয় দিয়েছেন। সংখ্যাগুরু তোষণ যেমন গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তেমনি সংখ্যালঘু তোষণ গণতন্ত্রের সংগ্রামের আয়তন কমায়। ‘সিএএ-এনআরসি’বিরোধী সমাবেশগুলোতে নামাজের দৃশ্য আন্দোলনকে সংখ্যালঘুদের আন্দোলন হিসেবে দেখানোর কাজে বিজেপিকে সাহায্য করেছে। সমাবেশগুলোকে ‘সংখ্যালঘুর মর্যাদা রক্ষা’র আন্দোলন প্রমাণ করার চেয়েও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে দেখানো বেশি জরুরি ছিল।
আন্দোলন হচ্ছে শহুরে মধ্যবিত্তের চৌহদ্দিতে
আন্দোলনের সংগীতময় মিছিলগুলো শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্তের কাছে যতটা আবেদনময়—গ্রামীণ ভারতের দরিদ্র মানুষের জন্য ততটা নয়। ভারত রাষ্ট্র সেক্যুলার থাকা না-থাকায় মুসলমানদের স্বার্থ আছে। কিন্তু কোটি কোটি দরিদ্র ভারতবাসী হিন্দুর চোখে তার দৃশ্যমান আবেদন কম। নতুন করে ‘অবৈধ মুসলমান’দের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়ার মতো কিছু ঘটেনি তাদের জীবনে। নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনগুলো এ রকম মানুষদের কাছে সামান্যই অন্যায্য মনে হচ্ছে। কারণ, ছাত্র-তরুণেরা কেউ তাদের কাছে যায়নি বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে। এ রকম অবস্থায় চলতি আন্দোলনকে দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে এবং শহুরে চৌহদ্দির বাইরে নিতে মাটি ও মানুষের আরও স্বার্থ যুক্ত করতে হবে এতে। অন্তত বেকারি ও গ্রামীণ অর্থনীতির বিপর্যয়কে আন্দোলনের দাবিতে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
কৃষক ও শ্রমিকেরা যদি সরাসরি তাদের স্বার্থ এই আন্দোলনে খুঁজে না পায়, ‘আজাদি’র স্লোগানের প্রতি ইতিমধ্যে সৃষ্ট মনোযোগ দ্রুতই হারিয়ে ফেলবে তারা। আন্দোলনের ‘শেষ লক্ষ্য’ সম্পর্কে বুঝতে চাইছে নিচুতলার মানুষ এবং সেখানে রুটি-রুজির কোনো স্বার্থ আছে কি না, সেটাও দেখতে ইচ্ছুক। বিশ্বের সেসব স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন সম্প্রতি সফল হয়েছে, যেগুলো কৃষক-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে পেরেছে।
মোদি সরকারের সমর্থক ভিত্তি থেকে দরিদ্র হিন্দুদের বের করে আনাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ প্রতিবাদকারীদের সামনে। আপাতত সেটা ঘটেনি। ১৭টি ভারতীয় রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায়। তাদের সমর্থক গোষ্ঠীতে বড় কোনো ধসের আলামত দেখা যায়নি। দরিদ্র উত্তর প্রদেশে যেসব ঝাঁজালো বিক্ষোভ হয়েছে তার মূলশক্তি ছিল সংখ্যালঘু তরুণেরাই।