বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » শিরোনাম | সাবলিড » ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব- প্রধানমন্ত্রী
ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব- প্রধানমন্ত্রী
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক:বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে কম শর্তে সহায়তা দিতে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।আজ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম (বিডিএফ) সম্মেলন-২০২০’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিক ও উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বাংলাদেশের উন্নয়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমরা যে সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছি আমি আশা করি উন্নয়ন সহযোগীরাও আমাদেরকে খুব বেশি শর্ত না দিয়ে এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন, যেন যে অগ্রযাত্রা আমরা শুরু করেছি সেটা আমরা আরো ভালোভাবে করতে পারি।”
বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নে কোনো ম্যাজিক নেই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা হচ্ছে একটা রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। সাধারণ মানুষ, দরিদ্র মানুষ, তৃণমূল পর্যায়ের অবহেলিত মানুষ- সেই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করাই হল আওয়ামী লীগ সরকারের একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি বলেই আজকের বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।”
দেশের উন্নয়নে নেয়া ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও তুলে ধরেন টানা তিন মেয়াদে সরকার প্রধানের দায়িত্ব সামলে আসা শেখ হাসিনা।
২০২১ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কিভাবে উন্নত হবে, কোন কোন ক্ষেত্রকে সরকার গুরুত্ব দেবে এবং কিভাবে দেশের মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের জীবনকে উন্নত করা যাবে, সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি।
“লক্ষ্যটা…এটা শুধু শহরভিত্তিক মানুষের জন্য নয়। এটা হচ্ছে সমগ্র গ্রামের মানুষ…কেউ যেন অবহেলিত না থাকে। কেউ যেন বাইরে পড়ে না থাকে। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে যেন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে। প্রতিটি মানুষের জীবন যেন উন্নত হয়, অর্থবহ হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা আমাদের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছি।”
বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস মাদক ও দুর্নীতি দূর করার প্রত্যয়ও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি দূর করতে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই শিশুদেরকে আমরা আস্তে আস্তে বড় করতে চাই, তাদের বহুমুখী প্রতিভার বিকাশ যাতে ঘটে সেই বিকাশ ঘটিয়ে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রত্যেকটা উপজেলায় একটা করে মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করে দিচ্ছি।”
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের কাজ শুরু করার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলা করার মতো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই ক্ষেত্রে আমি বলব আমরা এই জলবায়ুর বিষয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করি বা আমরা অনেক প্রতিশ্রুতি পাই কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি কেউ আর পূরণ করে না সেভাবে।
“আমরা খুব সামান্য কিছু সহযোগিতা পেয়ে থাকি। এক্ষেত্রে আমি মনে করি আমাদের উন্নত দেশগুলো এবং উন্নয়ন সহযোগীদের আরো এগিয়ে আসা দরকার, আরো সহযোগিতা দরকার।”
বাংলাদেশের পাশাপাশি ছোট ছোট দ্বীপ এবং অন্যান্য দেশ যেগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তাদের সকলেরই এই সহযোগিতা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের যে ক্ষতিসাধন তার জন্য বাংলাদেশ কিন্তু কোনোভাবেই দায়ী না। কিন্তু আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছি। সেই কারণেই যারা এই অবস্থার জন্য দায়ী তাদেরই সব থেকে বেশি অবদান রাখা দরকার।”
অনুষ্ঠানে শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
“এরপর আমাদের অনেক চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে। কখনো গণতন্ত্র ধারাবাহিকভাবে চলতে পারেনি। মিলিটারি ডিক্টেটরা দেশ শাসন করেছে। যার ফলে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি।”
পরবর্তীতে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগের সরকার গঠন এবং ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর গ্রেপ্তার হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমি সলিটারি কম্পার্টমেন্ট পেয়েছিলাম। একেবারে একা বন্দি একটা জায়গায়। সেই সময়টাকে আমি কাজে লাগিয়েছিলাম।
“আমি তখনই বসে বসে চিন্তা করেছিলাম যদি কখনো দেশ গড়ার সুযোগ পাই বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, সেনিটেশন, সুপেয় পানি, এইসব বিষয়গুলো আমরা কিভাবে করব এবং কত সালের মধ্যে কি কি করব তার একটা খসড়া আমি কারাগারে বসে প্রণয়ন করি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের সময় সেটা কাজে লেগেছিল।”
সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি বন্দিখানায় বসে লিখেছি, আমি জানিনা আমার ভবিষ্যৎ ভাগ্যে কী আছে। কারণ আমার বিরুদ্ধে বিএনপির দেওয়া ১২টা মামলা। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেওয়া আরও চার-পাঁচটা মামলা। প্রতি একদিন পর পর আমাকে কোর্টে হাজিরা দিতে হয়। কোনো রকমের কেইস দিয়ে আমি যেন আর কখনো ইলেকশন করতে না পারি সেই ব্যবস্থা নেবার প্রচেষ্টা ছিল।
“যাই হোক জনগণের সমর্থনে আমি বেরিয়ে আসি, নির্বাচনে জয়ী হই। সবচেয়ে বড় কথা হল দেশটাকে গড়ে তুলতে হবে। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা- জাইকার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জুনিচি ইয়ামাদা, বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট শিজিন চেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন লোকাল কনসালটেটিভ গ্রুপের দুই কো-চেয়ার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো এবং ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ।
বাংলাদেশ সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের পরিকল্পনা উন্নয়ন সহযোগীদের সামনে তুলে ধরতে দুই দিনের এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর অংশীদারিত্ব’।