শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ » বাংলাদেশী সমকামী ইয়াশরিকা বিয়ে করলেন মার্কিন যুবতীকে
বাংলাদেশী সমকামী ইয়াশরিকা বিয়ে করলেন মার্কিন যুবতীকে
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক:বাংলাদেশী সমকামী নারী ইয়াশরিকা জাহরা হক বিয়ে করলেন আরেক সমকামী নারীকে। তার পছন্দের নারী যুক্তরাষ্ট্রের ইলিকা রুথ কুলি। দু’জন দু’জনকে ভালবেসে অনেকটা সময় পার করার পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। আর প্রায় ৫ লাখ ডলার খবর করে তারা সম্প্রতি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী নিউ ইয়র্ক টাইমস সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ইয়াশরিকাই সম্ভবত প্রথম বাংলাদেশি সমকামী নারী, যিনি প্রথম উত্তর আমেরিকার আরেক সমকামী নারীকে বিয়ে করলেন। গড়ে তুললেন নিজের মতো করে ভালবাসার স্বপ্নের ঘর। এই বিয়ে নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদ শিরোনাম করেছে ‘ডে বন্ডেড ওভার ক্যারামেল পাই’। বিলম্বে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়, গত ৭ই জুন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ইয়াশরিকা জাহরা হক ও ইলিকা রুথ কুকলি। এ জন্য ব্রুকলিনে গ্রিন বিল্ডিংয়ে আয়োজন করা হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। সেখানে দু’জনকে অতিথিদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দেন তাদের বন্ধু ইজিনে এম ওকপো। এরপর ৯ই জুন তাদের আরেক বন্ধু মাহিন কলিম ব্রুকলিনের ডব্লিউ লফট-এ বাংলাদেশী রীতিতে আরেকটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। ইয়াশরিকা হক যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটানে ফেনউইক অ্যান্ড ওয়েস্ট নামের একটি আইনি প্রতিষ্ঠানে এসোসিয়েট হিসেবে কর্মরত। তার বয়স এখন ৩৪ বছর। তিনি জর্জটাউন থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। আইন শাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেছেন নর্থওয়েস্টার্ন থেকে। তিনি র্যাপিড সিটির ইয়াসমিন হক ও ইয়ামিন হকের মেয়ে।
অন্যদিকে কুকলির বয়স ৩১ বছর। তিনি হেয়ারইউএসএ নামের একটি শ্রবণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। তিনি গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস থেকে। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, ডালাস থেকে অর্জন করেছেন অডিওলজিহতে ডক্টরাল ডিগ্রি। তিনি হলেন টেক্সাসের ডেনটনের ক্যারোল জি কুকলি এবং জেফ্রে এ কুকলির মেয়ে। এই দুই ভুবনের দুই যুবতীর প্রাথমিক সাক্ষাত হয় সমকামী অধিকার বিষয়ক পার্টি এলজিবিটিকিউ প্রাইড-এ। ২০১৫ সালে ওই পার্টি দিয়েছিলেন ইয়াশরিকা হক। এ সময়ে তিনি চেনেন না এমন সব মানুষকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ইয়াশরিকা হককে ইমেইল পাঠিয়েছিলেন তার এক বন্ধু। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশী কায়দায় বাংলাদেশী সমকামী ইয়াশরিকা তার পছন্দের নারী সমকামী কুকলিকে বিয়ে করে তাকে স্বামী হিসাবে গ্রহণ করে নিয়েছেন।
নিজেদের প্রেমের কথা জানাতে গিয়ে ইয়াশরিকা বলেন, কুকলিকে প্রথম দেখার পর আমার যে কেমন লেগেছিল তা বলতে পারব না। তখন সে ছিল একা। আমিও তার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম। পরের বার দেখা হবার পর আমাদের কথা হয়। ইয়াশরিকা বলেছেন, এসব মানুষের সবাইকে তিনি চিনতেন না, যারা ওই আয়োজনে তার এপার্টমেন্টে গিয়েছিলেন। তাই সবাইকে জানার ও চেনার চেষ্টা করি। কুকলিকে দেখে আমার যেন হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওই রাতের পার্টিতে তাকে আমি কমপক্ষে ৫০০০ বার বিয়ার অফার করেছিলাম। এটা স্মরণ করতে পারি। কারণ, এটাই ছিল একমাত্র বিষয়, যার মাধ্যমে আমি তার কাছে আমাকে তুলে ধরতে পারবো।
এর দু’এক মাস পরে তাদের আবার দেখা হয় একটি কার্ড পার্টিতে। ওই সময় মিস কুকলি পরিষ্কার বুঝতে পারেন যে, তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছেন মিস ইয়াশরিকা হক। কুকলির ভাষায়, ঠিক ওই সময়েই আমি বুঝতে পারি যে, ইয়াশরিকা আমার প্রেমে পড়েছে। আমিও তেমনটা হওয়ায় ওই রাতের পুরোটাই আমরা কাটিয়েছি উন্মত্ততায়, বাধাহীনভাবে।
ইয়াশরিকা হক সম্পর্কে কুকলি আরো বলেন, সে খুব বেশি কেয়ারিং। সহানুভূতিশীল, মুক্তমনা। এমন মনখোলা মানুষ আমার জীবনে আমি আর দেখি নি। আরো ভাল করে বলা যায়, তার কাছে জীবন হলো বেঁচে থাকা না হয় মরে যাওয়া। সে যদি আপনার পাশে থাকে তাহলে কোনো কিছুর তোয়াক্কা নেই।ইয়াশরিকা হক বলেন, সব কিছু শেষে মনে হচ্ছে, দুটি চুম্বক একসঙ্গে লেগে গেছে। (সাক্ষাতের আগে) ওই সময় পর্যন্ত আমি সিঙ্গেল থাকার চেষ্টা করেছি। আমি চাইনি কেউ একজন আমার সঙ্গে যুক্ত হোক। (সম্ভবত তিনি একে একজন পুরুষ সঙ্গীর বিষয়ে বলতে চেয়েছেন)। তাই কার্ড পার্টির রাতে ইয়াশরিকা হক একটি গোপন অস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন সেটা। তা হলো একটি ক্যারামেল আপেল পাই।
ইয়াশরিকা বলেন, আমি তাকে এই পাই’য়ের খুব ভাল একটি পিস দিতে চেয়েছিলাম। কুকলির এ বিষয়টি জানা প্রয়োজন ছিল। আমার কাছে এটা ছিল সিকিউরিটি ডিপোজিটের মতো।
আর অল্প সময়ের মধ্যে সেই ডিপোজিট থেকে লভ্যাংশ আসতে লাগলো।
কুকলি ফেসবুকের মাধ্যমে ক্যারামেল আপেল পাইয়ের রেসিপি চেয়ে একটি বার্তা পাঠান ইয়াশরিকাকে। এ থেকে তাদের মধ্যে রান্নাঘরেও অভিন্নতা দেখা দেয়। ইয়াশরিকা বলেন, কুকলি অবিশ্বাস্য একজন কুক। প্রতিদিন সে আমাকে দুপুরের খাবার প্রস্তুত করে দেয়। বিষয়টি বিশ্বে খুবই চমৎকার বিষয়। তিনি বলেন, কুকলি রান্না করে। আর আমি বেকিং করি। এসব মিলে আমাদের জীবন সুখের হয়ে উঠেছে।