বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » ই-পাসপোর্ট কি বাংলাদেশের সম্মান বাড়াবে?
ই-পাসপোর্ট কি বাংলাদেশের সম্মান বাড়াবে?
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিনিধি:বাংলাদেশে চালু হলো ই-পাসপোর্ট বা ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট।
ফলে অন্যদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বন্দরের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য আরো অনেক সহজ হবে বলে অনুমান করা যায়।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা অন্য যেকোন পাসপোর্টের চেয়ে ই-পাসপোর্ট বেশি নিরাপদ।
এর আগে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান বলেছিলেন, ”এটি অত্যন্ত নিরাপত্তা সংবলিত একটি ব্যবস্থা। যে কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এখন ই-পাসপোর্ট ব্যবহার শুরু করেছে। আমরাও সেই তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছি।’রাজধানী ঢাকার হাতিরঝিল এলাকার বাসিন্দা জিনিয়া কবির সুচনা। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি দেশ ঘুরে দেখেছেন তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশি পাসপোর্ট ধারী হওয়ার কারণে অনেক সময়ই নানা ধরণের হয়রানির শিকার হতে হয়।২০১৫ সালে সিঙ্গাপুর ভ্রমণের সময় এ ধরণের একটি ঘটনার শিকার হয়েছিলেন তিনি।জিনিয়া কবির সূচনা বলেন, “ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট জমা দেয়ার সাথে সাথে ওরা হাইপার হয়ে গেলো। গ্রিন পাসপোর্ট, গ্রিন পাসপোর্ট বলে চিৎকার শুরু করলো। আমাদেরকে আলাদা করে লাইনে দাঁড় করালো। প্রায় ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল আমাদের।
তিনি অভিযোগ করেন, ইমিগ্রেশনে অন্য দেশের আরো নাগরিকরা থাকলেও তাদের সাথে এ ধরণের কোন ব্যবহার করা হয়নি।বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করেন নাজনীন জাহান মিথুন। অফিসের কাজের জন্য প্রায়ই বিভিন্ন দেশে যেতে হয় তাকে।তিনি জানান, ২০১৮ সালে নেদারল্যান্ডস থেকে জার্মানি যাচ্ছিলেন। তখন ইমিগ্রেশনে তাকে বার বার একই প্রশ্ন করা হয়েছিল যে তিনি ফেরত যাবেন কবে?নাজনীন জাহান মিথুন জানান, সেখানে তাকে রিটার্ন টিকেট দেখাতে হয়েছিল। জার্মানিতে কত দিন, কোথায় থাকবেন-এসব বিষয়ে একাধিক প্রশ্ন করা হয়েছিল তাকে।
নতুন চালু হওয়া ই-পাসপোর্ট কোন ধরণের সুবিধা দেবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেটা জানতে হলে আগে জানতে হবে যে, কোন কোন দেশ থেকে এ ধরণের সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।তিনি বলেন, অনেক বিমানবন্দরে ইউরোপ, কানাডা এবং আমেরিকার পাসপোর্ট ধারীদের জন্য আলাদা লাইন থাকে কারণ তাদের পাসপোর্ট স্ক্যান করা হয়।অন্যদিকে বাংলাদেশ, ভারত ও অন্য দেশের নাগরিকদের জন্য আলাদা লাইন থাকে।তবে এখন হয়তো কিছুটা সুবিধা পাওয়া যেতে পারে,” বলেন তিনি।
পাসপোর্টের সম্মান বাড়বে কী?
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক নাগরিকত্ব ও পরিকল্পনা বিষয়ক সংস্থা হেনলি অ্যান্ড পাসপোর্ট পার্টনার্সের করা ২০১৯ সালের বৈশ্বিক পাসপোর্টের র্যাঙ্কিংয়ের সবশেষ তালিকায় ১০৪টি দেশের অবস্থানের মধ্যে বাংলাদেশ ৯৭তম স্থানে রয়েছে।
কতটি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করা যাবে- তার উপর ভিত্তি করে এই র্যাংকিং করা হয়।মূল্যায়ন বাড়ার বিষয়ে সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেন, এই বিষয়টিকে দুই দিক থেকে দেখা যেতে পারে।এর মধ্যে একটি হচ্ছে, এই পাসপোর্ট ব্যবহারের ফলে দেশের নাগরিকরা কতটা সুবিধা পাচ্ছে।সারা বিশ্বেই ইলেক্ট্রনিক ভেরিফিকেশন অব আইডেন্টিটি বা পরিচয় যাচাইয়ের ভার্চুয়াল প্রক্রিয়াটি চালু হয়েছে।তাঁর মতে, ই-পাসপোর্টের কারণে এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশি হিসেবে যুতসইভাবে নিজেদেরকে উপস্থাপনের সুযোগ তৈরি হলো।প্রযুক্তিগত সুবিধার দিক থেকে ধরতে গেলেও এই পাসপোর্ট মানুষের যাতায়াতকে সুবিধাজনক ও সহজ করার জন্য ইতিবাচক অগ্রগতি বলেও জানান তিনি।
তবে এই পদক্ষেপের কারণে পাসপোর্টের মূল্য বাড়বে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে মিস্টার কবির বলেন, এই প্রশ্নের উত্তর এই মুহূর্তে বলা মুশকিল।তিনি বলেন, একটি পাসপোর্টকে একটি দেশের সামগ্রিক অবস্থার প্রতিফলক হিসেবে দেখা হয় এবং সে হিসেবেই একটি পাসপোর্টের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।একটি দেশের ভাবমূর্তি, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা, মানুষের জীবনযাত্রার মানের মতো সব ধরণের বিষয় নিয়ে পাসপোর্টের মূল্যায়ন করা হয়,” তিনি বলেন।
সেখান থেকে দেখতে গেলে এই বিষয়গুলোতে কোন ধরণের গুণগত পরিবর্তন না আসলে পাসপোর্টের মূল্যায়নে কোন প্রভাব পড়ার সুযোগ কম বলে জানান তিনি।
“গণতন্ত্র, জনগণের দক্ষতা ও সক্ষমতা, শিক্ষা, অর্থনৈতিক গতিশীলতা, সামাজিক স্থিতিশীলতা, কাজের অবাধ সুযোগ- বাইরের দেশের দৃষ্টিতে এগুলোতে কোন পরিবর্তন না এলে তাহলে নতুন ভ্যালুয়েশন যোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম,” তিনি বলেন।তবে পাসপোর্টের মূল্যায়ন নির্ভর করে কোন দেশের পাসপোর্ট জাল করা কতটা সহজ বা কঠিন তার উপরও। যেমন যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট জাল করা বেশ কঠিন।সেদিক থেকে দেখতে গেলে ই-পাসপোর্ট হওয়ার কারণে এখন বাংলাদেশের পাসপোর্টও নকল বা জাল করা দুঃষ্কর হবে। অর্থাৎ পাসপোর্টের নিরাপত্তাও বাড়লো নতুন এই পদক্ষেপের কারণে।
এই সুবিধা আসার কারণে পাসপোর্টে মূল্য বাড়ার সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নে সাবেক কূটনীতিক মিস্টার কবির বলেন, এ জায়গাতে আমরা কিছুটা সুবিধাজনক জায়গায় হয়তো থাকলাম।তবে শুধু এই বিষয়টি দিয়ে পাসপোর্টের মূল্য নির্ধারণ হয় না।
তার মতে,”এটা মারজিনালি ভ্যালু অ্যাড করতে পারে। কিন্তু সেটা খুব উল্লেখযোগ্য পরিমাণে করবার মতো জায়গা আছে বলে আমার মনে হয় না।কারণ শুধু নিরাপত্তা নয় বরং একটা দেশ সম্পর্কে বিশ্বের মানুষ সামগ্রিকভাবে কী ভাবে তার ভিত্তিতে পাসপোর্টের মূল্যায়ন করা হয়।