সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » আইন-আদালত | শিরোনাম | সাবলিড » সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার রায়ের অপেক্ষা
সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার রায়ের অপেক্ষা
বিবিসি২৪নিউজ,আদলত প্রতিনিধি: দুই দশক আগে রাজধানীর পল্টন ময়দানে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলা মামলার রায় আজ সোমবার ঘোষণা করবে আদালত। ইতিমধ্যে মামলার চার আসামিকে আদালতে আনা হয়েছে।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে আদালতপাড়ায় নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা।
আজ সকালে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম এ হত্যাকাণ্ডের মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
২০০১ সালের যেদিনটিতে হামলা চালিয়ে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছিল- ১৯ বছর পর সেই দিনটিতে মামলার রায় ঘোষণা করবেন আজ।
গত ১ ডিসেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার এদিন ধার্য করা হয়।
সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক দলের সমাবেশে বোমা দিয়ে হত্যাকাণ্ডের সূচনা করে জঙ্গিরা।
ওই হামলার তাৎক্ষণিক বিচার না হওয়ায় আরও অনেক বর্বর ঘটনা ঘটেছে এবং ওইসব ঘটনার দুঃখজনক পরিণতি দেশবাসী দেখেছে।
দীর্ঘ বিলম্বের পর এ মামলার রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। এ রায়ের মাধ্যমে যেন অপরাধীরা সর্বোচ্চ শাস্তি পায় এবং ইন্ধনদানকারী রাজনৈতিক শক্তি চিহ্নিত হয়- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মো. আবদুল্লাহ আবু বলেন, আদালতে সাক্ষীরা না আসায় ও আসামিদের গড়হাজিরের কারণে মামলাটির বিচারকাজে বিলম্ব হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ন্যায়বিচার পাবে বলে প্রত্যাশা করছি।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর সালাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ সক্ষম হয়েছে। আশা করছি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।
অপর দিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, মামলায় অনেক সাক্ষীই সাজানো-বানোয়াট। কারণ ঘটনার সময় যেসব সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন- তারা কেউই এর সপক্ষে মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখাতে পারেননি। আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।
২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে ঘটনাস্থলেই নিহত হন দলটির নেতা হিমাংশু মণ্ডল, আবদুল মজিদ, আবুল হাশেম ও মুক্তার হোসেন। আহত হন ২০ জন।
আহত হওয়ার ১৩ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রসাদ।
হামলার ঘটনায় সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান বাদী হয়ে রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করেন।
তদন্ত শেষে ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় এ মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট (আসামিদের অব্যাহতি দিয়ে প্রতিবেদন) দেয় পুলিশ।
এরপর ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ও ২০০৫ সালের আগস্টে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা হয়।
এসব ঘটনায় জঙ্গিরা জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়ার পর ফের এ মামলার তদন্ত শুরু হয়। সাত কর্মকর্তার হাত ঘুরে মামলার তদন্তভার পান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক মৃণাল কান্তি।
তদন্তকালে তিনি আসামি মুফতি মাঈনুদ্দিন শেখকে গ্রেফতার করেন। মাঈনুদ্দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে জানায়, এ ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদ (হুজি) জড়িত।
অন্যদিকে আসামি মুফতি আবদুল হান্নান ২০০৬ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে জানায়, সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় তার দল হুজি জড়িত। দীর্ঘ পুনঃতদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর ১৩ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এরপর হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট ও বিস্ফোরক মামলায় ৪ সেপ্টেম্বর ওই ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করেন আদালত। এরপর শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। হত্যা মামলায় মোট ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।
আসামিরা হলেন- জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুল হান্নান, মুফতি মাঈনুদ্দিন শেখ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা মশিউর রহমান, আবদুল হাই, শফিকুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, নুরুল ইসলাম, মহিবুল মুস্তাকিম, আনিসুল মুরসালিন ও রফিকুল ইসলাম।
আসামিদের মধ্যে জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
এছাড়া শেষের সাতজন পলাতক ও বাকি পাঁচজন কারাগারে আছে। কারাগারে থাকা পাঁচ আসামির সবাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত।