রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » সগিরার জন্য ৩০ বছর, সাগর-রুনি, তনুর জন্য কত বছর?
সগিরার জন্য ৩০ বছর, সাগর-রুনি, তনুর জন্য কত বছর?
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিনিধি:একটি ক্লুলেস হত্যার ঘটনায় আসামিদের চিহ্নিত করে ৩০ বছর পর চার্জশিট দিয়েছে পিবিআই। এটা যেমন আশা জাগায় তেমনি প্রশ্নও তৈরি হয়। সেই প্রশ্ন সাগর-রুনি, তনু, মিতুসহ আরো অনেক হত্যাকাণ্ড নিয়ে।সগিরা মোর্শেদ বিআইডিএস-এর তরুন গবেষক ছিলেন। ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই রিকশায় করে ভিকারুননিসা স্কুল থেকে তার সন্তানকে আনতে যাওয়ার পথে সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল এটা ছিনতাইকারীদের কাজ। রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় আসামীও ছিলো অজ্ঞাত। কিন্তু তদন্তের এক পর্যায়ে পুলিশ থেমে যায়। আদালতের মাধ্যমেও তদন্ত আটকে দেয়া হয়। পুলিশের নানা তদন্ত সংস্থার ‘ব্যর্থতার’ পর ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই মামলা তদন্তের দাায়িত্ব পায় পিবিআই। তারা অবশেষে ১৮০ দিনের মধ্যেই আসামীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও চার্জশিট দিয়েছে। আর এই হত্যাকান্ডের মূলে রয়েছে পারিবারিক বিরোধ।
আদালতে দেয়া চার্জশিটে আসামীরা হলেন: সগিরা মোর্শেদের স্বামীর বড়ভাই ডা. হাসান আলী চৌধুরী, হাসান আলীর স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা অরফে শাহিন, শাহিনের ভাই আনাস মাহমুদ অরফে রেজওয়ান ও মারুফ রেজা। মারুফ রেজাকে হত্যার জন্য ভাড়া করা হয়েছিল । সে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল(অব.) মাহমুদুল হাসানের ভাগ্নে। এরা প্রত্যেকে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তারা সবাই এখন ষাটোর্ধ।
পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন,”আমরা তদন্ত করতে গিয়ে কোনো বাধার মুখে পড়িনি। তবে আগে অনেক বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। মামলার তদন্ত উচ্চ আদালতের মাধ্যমে বছরের পর বছর স্থগিত করে রাখা হয়েছিল। আর এটাই ছিলো আমাদের তদন্ত সূত্র। আমরা তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথমই কারা এই তদন্ত স্থগিতের আবেদন করেছেন এবং সেটা বছরের পর বছরে অব্যাহত রাখতে তদবির করছেন তাদের চিহ্নিত করি। তাদের কী স্বার্থ তা জানার চেষ্টা করি। সেখান থেকেই আমরা জড়িতদের ব্যাপারে ধারণা পাই। এরপর যে রিকশায় সগিরা মোর্শেদ ছিলেন সেই রিকশা চালককে পেয়ে যাই।’
তিনি বলেন,”সরাসরি হত্যায় জড়িত মারুফ রেজাকে কেউ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল(অব.) মাহমুদুল হাসানের ভাগ্নে, কেউ পিএস বলেছেন। তবে সেদিকে আমরা যাইনি। তদন্তের জন্য সেটা আমাদের দরকার ছিল না। আমরা মামলাটি ডিটেক্ট করতে চেয়েছি আন্তরিকভাবে। সফল হয়েছি।’
কিন্তু বাংলাদেশের এরকম আরো অনেক হত্যা মামলা আছে যার তদন্ত বছরের পর বছর ধরে চলছে। আসামিরা চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। গ্রেপ্তার , চার্জশিট এবং বিচারতো অনেক দূরের ব্যাপার। সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয় ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে তাদের পূর্ব রাজাবাজারের ফ্ল্যাটে। পুলিশ, ডিবি পেরিয়ে এখন র্যাব তদন্ত করছে। তদন্ত সংস্থা এপর্যন্ত ৭০ বার সময় নিয়েছে। কিন্তু কোনো প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনও দিতে পারেনি।
কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে হত্যা করা হয় ২০১৬ সালের ২০মার্চ রাতে। এই মামলারও তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। অপরাধীরা এখনো চিহ্নিত হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে এপর্যন্ত ২৩ বার সময় নিয়েছে সিআইডি।
২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে পুলিশের তখনকার এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুতে। বহুল আলোচিত এই হত্যাকান্ডের তদন্তও এখনো শেষ হয়নি। বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে বিদায় করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, বাবুল আক্তারের সোর্স কামরুল ইসলাম মুসা এই হত্যাকাণ্ডের মূলে রয়েছে।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সাগরের মা সালেহা মুনির বলেন, ‘‘র্যাবতো অনেক নাটক করেছে। তারা ছিনতাইকারীদের কাজ বলেও চালানোর চেষ্টা করেছে । কিন্তু হত্যাকারীদের এখনো চিহ্নিত করেনি। ৩০ বছর পর যদি সগিরা মোর্শেদের হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা যায় তাহলে সাগর-রুনির হত্যাকারীদের চিহ্নিত কেন করা যাবে না। আমাদের কত বছর অপেক্ষা করতে হবে? সগিরা মোর্শেদের ঘটনাতেও ছিনতাইকারীর ঘটনা বলা হয়েছিল। এখন দেখা যাচ্ছে পরিবারের সদস্যরা জড়িত। তাই আমি যদি মা হয়েও আমার ছেলে, ছেলের বউ হত্যাকাণ্ড জড়িত হই তা প্রকাশ করা হোক। আমার পরিবারে কেউ জড়িত থাকলে তাও বলুক। কিন্তু তারাতো কিছুই করছে না।’
তিনি বলেন, ‘‘আমি তো বার বার বলেছি র্যাব না পারলে ছেড়ে দিক তদন্ত। তারা কী কারণে মামলা ধরে রাখছে! কার নির্দেশে বার বার ডেট নিচ্ছে? পুলিশের অন্য কোনো সংস্থা তদন্তের দায়িত্ব নিক। পিবিআই অনেক মামলার তদন্ত সফল ভাবে করেছে। আমি পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়ার দাবী জানাচ্ছি।’
সন্তান হারা এই মা কান্নজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘‘কেউ যদি আন্তরিক ভাবে চায় তাহলে অপরাধীদের সনাক্ত করা যায়। কে হত্যা করেছে সেটা আমার কাছে গুরুপূর্ণ নয়। আমি শুধু সাগর-রুনি হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই।’