বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক কি শুধুই ইভিএম নিয়ে?
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক কি শুধুই ইভিএম নিয়ে?
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিনিধি:বাংলাদেশে ঢাকার দু’টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী দল বিএনপি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নিয়ে বিতর্ককে আবার সামনে আনছে।দলটি ঢাকার ভোট যুদ্ধে থাকার পাশাপাশি ইভিএম-এর বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানের পক্ষে জনমত তৈরির জন্য মাঠে নেমেছে।
১৫ই জানুয়ারি বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ইভিএম নিয়ে সমস্যাগুলোর ব্যাপারে একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিএনপির জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলেছেন, সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ঢাকার দু’টি নির্বাচনেই বিতর্কিত ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঢাকার দু’টি সিটি কর্পোরেশনেই বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারযুদ্ধে মাঠে রয়েছেন।
বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, যেহেতু ঢাকার এই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত তাদের প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চিন্তাভাবনা রয়েছে, সেজন্য তাদের সমমনা বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে ইভিএম-বিরোধী বক্তব্যকে তুলে ধরার কৌশল নেয়া হয়েছে, যাতে তাদের ভোটাররা বিভ্রান্ত না হয়।
এছাড়াও বিএনপি শুধু রাজনৈতিক কারণে এর বিরোধিতা করছে, সেটাও যেন মনে না হয়, এই চেষ্টাও তাদের রয়েছে।
এমন কৌশলের অংশ হিসেবে বুধবার ঢাকায় স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের ব্যানারে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে তাদের সমমনা বিশেষজ্ঞদের একটি দলের তৈরি করা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এই আলোচনায় বিএনপির কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না। ছিলেন ঐক্যফ্রন্টের অন্য শরিক দলগুলোর নেতারা।
ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম একজন নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, সংসদ নির্বাচনের অনিয়ম চাপা দিতে এখন ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে।
“ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট পুনঃগণনার কোন ব্যবস্থা নাই। কোন বিতর্ক হলে মামলা করার সুযোগ নাই। এখন গুণ্ডামির দরকার হবে না। পুলিশকে রাতে বিরানি খাওয়ার টাকাও দিতে হবে না। কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হবে না। শুধু সুইচ টিপলেই সব ভোট চলে আসবে। কিন্তু প্রার্থী বা ভোটার হিসেবে আপনি কোন প্রমাণপত্র হাতে পাবেন না। ফলে মামলাও করতে পারবেন না।”
ইভিএম-বিরোধী আলোচনায় যে বিশেষজ্ঞ দলটি ট্যাকনিক্যাল সমস্যাগুলো তুলে ধরেছে, সেই দলের প্রধান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেছেন, একজন ভোটার ভোট দেয়ার পর জানতে পারবেন না যে তিনি কোথায় ভোট দিলেন- এটিই ইভিএম এর বড় ত্রুটি বলে তারা দেখতে পেয়েছেন।
“আপনি যখন কোনো মেশিনে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে ভোট দিয়ে দেবেন, তখন সেখানে কোনো প্রমাণ নাই যে, আপনি ধানের শীষে বা নৌকায় বা লাঙ্গলে ভোট দিয়েছেন। এর বাইরে সরকারের ম্যানিপুলেশন তো আছেই।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর এবং তার আগের সংসদ নির্বাচন নিয়ে যেহেতু অনেক প্রশ্ন আছে, সেকারণে ইভিএম নিয়েও মানুষের মধ্যে একটা সন্দেহ তৈরি হয়েছে। বিএনপি এখন সেটাকে কাজে লাগাতে চাইছে বলে তাদের ধারণা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক রওনক জাহান বলেছেন, “আসল সমস্যা হচ্ছে, প্রধান দুই দলের মধ্যে কোন কিছুতেই কোন বিশ্বাস নেই। এছাড়া পর পর দু’টি সংসদ নির্বাচন নিয়েও অনেক প্রশ্ন সবার মধ্যে রয়ে গেছে। সেজন্য নতুন কিছু করতে গেলেও প্রশ্ন থাকবে।”
তবে বিএনপিসহ বিরোধী জোটের আপত্তি বা বিতর্কের পরও নির্বাচন কমিশন ঢাকার দু’টি নির্বাচনেই পুরোপুরি ইভিএম ব্যবহারের অবস্থানেই রয়েছে।
ইভিএম ব্যবহার করে এর আগে বিভিন্ন নির্বাচন করার বিষয়কে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে একজন নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলছিলেন, “রংপুর সিটি কর্পোরেশনে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে ৬টি আসনে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। গত অক্টোবরে উপজেলা নির্বাচনেও অনেকগুলোতে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। এগুলোর কোনটিতেই বিতর্ক হয়নি।”
তবে বিরোধী দলগুলো আগের বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে অনেক অনিয়মের অভিযোগ করে আসছে। নির্বাচন কমিশন তা মানতে রাজি নয়।
ইভিএম-এর কারিগরি সমস্যা নিয়েও বিশেষজ্ঞদের অনেকে যে মতামত তুলে ধরছেন, সে প্রেক্ষাপটে কবিতা খানমের বক্তব্য হচ্ছে, “কেউ নির্দিষ্ট কেন্দ্রের ভোটার না হলে তিনি ইভিএম মেশিন ওপেনই করতে পারবেন না। কারণ তার ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলতে হবে।”
তিনি বলেছেন, ভোটার কোথায় ভোট দিচ্ছেন তা বুঝতে পারবেন না- এমন বক্তব্য সঠিক নয়।
তাঁর যুক্তি হচ্ছে, একজন ভোটার মেশিনে বাটন চেপে তার পছন্দের প্রতীক বাছাই করে তারপর সবুজ বাটন চেপে ভোট দেবেন। এখানে কোনো ত্রুটি নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কিন্তু ভোট কেন্দ্রে প্রিজাইডিং বা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে ইভিএম মেশিন চালু করার ক্ষমতায় দেয়ায় তাতেও অপপ্রয়োগের সুযোগ থাকে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেছেন, “মেশিন চালু করার এই ক্ষমতা একটা সীমার মধ্যে রাখা হয়েছে। কেন্দ্রের কর্মকর্তা মাত্র ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে মেশিন চালু করতে পারবেন। অনেকের হাতের রেখায় পরিবর্তন হয়, সেকারণে এই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।”