মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » জেলার খবর » বৈদ্যুতিক সুবিধা বঞ্চিত আশুগঞ্জের চর সোনারামপুর
বৈদ্যুতিক সুবিধা বঞ্চিত আশুগঞ্জের চর সোনারামপুর
বিবিসি২৪নিউজ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:বুকের ওপর জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের ২৩০ কেভি লাইনের বিশাল টাওয়ার, এক কিলোমিটার দূরত্বে দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। দিন শেষে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দু-এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধে জ্বলে ওঠে হাজারো বিজলি বাতি। তবুও বৈদ্যুতিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত আশুগঞ্জের চর সোনারামপুরবাসী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরকারি-বেসরকারি ১১টি ইউনিট থেকে গড়ে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। এর ফলে দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এই আশুগঞ্জ।
চরটির পূর্বে বিদ্যুৎ নগরী আশুগঞ্জ,পশ্চিমে কিশোরগঞ্জের ভৈরব,দক্ষিণে মাথার ওপর দিয়ে উভয় জনপদের সংযোগকারী সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু এবং উত্তরে চরের বুক চিরে রয়েছে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের ২৩০ কেভির বিশাল টাওয়ার। পশ্চিম আকাশে দিনের আলো মিলিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চরের সর্বোচ্চ এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে জ্বলে ওঠে হাজার হাজার বৈদ্যুতিক বাতি। তবুও বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বি ত এ চরের মানুষ।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রায় একশ বছর আগে আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠে একটি চর। আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত সেই চরের নামকরণ করা হয় চরসোনারামপুর। এরপর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষজন বসতি গড়েন চরসোনারামপুরে। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চরের এই গ্রামে মানুষ বসবাস করে আসছে।
বর্তমানে হিন্দু-মুসলমান ধর্মালম্বী মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার মানুষ বসবাস করেন এই চরটিতে। এর মধ্যে ভোটার রয়েছে প্রায় দেড় হাজার। চরের বেশির ভাগ মানুষ পেশায় জেলে। মেঘনা নদীতে মাছ ধরে সেই মাছ আশুগঞ্জ বাজারে নিয়ে বিক্রি করেই চলে তাদের জীবন-জীবিকা। সম্প্রতি চরের বাসিন্দাদের অনেকেই আশুগঞ্জ বাজারে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়েছেন।
চরসোনারামপুর গ্রামের শিশুরাও এখন শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে। তাদের জন্য চরেই রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে শিক্ষার আলো জ্বললেও যুগের পর যুগ ধরে চরের ঘরগুলো অন্ধকারের রয়েছে। এ নিয়েই এখানকার বাসিন্দাদের সব দুঃখ। আর ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে বছরে পর বছর চরের ভাঙন তো রয়েছেই।
চরসোনারামপুর গ্রামের বাসিন্দা কাজল রায় বলেন, প্রায় ৪০বছর আগে তিনি চরসোনারামপুর গ্রামে এসে বসতি গড়েছেন। মেঘনা নদীতে নৌকা চালিয়েই তার ছয় সদস্যের পরিবার চলে। চরে আসার পর থেকে একটাই দুঃখ তাদের বিদ্যুৎ না থাকা। বারবার আশা দিলেও আজ পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধিই তাদের এই হতাশা কাটাতে পারেনি।
চরসোনারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প ম শ্রেণির শিক্ষার্থী জয়া রাণী বর্মণ জানায়, দিনের বেলা খুব একটা সমস্যা না হলেও সন্ধ্যায় পড়তে বসলে কষ্ট করতে হয় তার। চার্জ না থাকার কারণে অধিকাংশ সময়ে সৌর বিদ্যুতের আলো না পেয়ে কুপি অথবা মোমবাতি জ্বালিয়ে পড়তে হয়। দিপা রানী জানান,শীতকালে ঠিকমতো সূর্যের আলো না পাওয়ায় চার্জ কম হওয়ার কারণে সৌর বিদ্যুৎ বেশিক্ষণ চলে না। ঝড়-বৃষ্টিতে অনেক সময় দুই-তিনদিন চার্জও হয় না। তখন অন্ধকারেই থাকতে হয় আমাদের। দেশের কত নদী পার করে কত জায়গায় বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে অথচ আমরা বিদ্যুতের শহরে থেকেও নদীর কারণে বিদ্যুৎ পাই না।
আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.রিয়াজুল হক জানান,প্রাকৃতিক কারণেই এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে তিনি আরো জানান,সরকার ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানী লিমিটেড এর (ইডকল) মাধ্যমে চরে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি মনে করেন, সোলারের মাধ্যমে চরে বিদ্যুতায়ন করা সহজ হবে।
এ ব্যাপরে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: নাজিমুল হায়দার বিবিজি কে জানান,বিদ্যুৎ উৎপাদন জোন হিসেবে এ এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন ন্যায়সঙ্গত দাবি। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সে লক্ষ্যে কাজ করছে বলে তিনি জানান। তবে অন্ধকার কেটে আলোর মুখ দেখবে সে অপেক্ষায় দিন গুনছে চরবাসী।