শিরোনাম:
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১

BBC24 News
মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় » আদর্শ রাষ্ট্র গঠনে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প নেই- রবীন্দ্রনাথ রায়
প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় » আদর্শ রাষ্ট্র গঠনে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প নেই- রবীন্দ্রনাথ রায়
১৮৯০ বার পঠিত
মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২০
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

আদর্শ রাষ্ট্র গঠনে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প নেই- রবীন্দ্রনাথ রায়

---বিবিসি২৪নিউজ:প্রাথমিক শিক্ষা মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার।শিক্ষাই জাতির সার্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চাবিকাঠি, দক্ষ মানবসম্পদ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।স্বাধীনতাপূর্ব শিক্ষাব্যবস্থা ছিল বৈষম্যমূলক, সনাতনধর্মী, গতানুগতিক ও অর্ধশিক্ষায় শিক্ষিত মেরুদন্ডহীন মানুষ তৈরির পরিকল্পনা।স্বাধীনতাপূর্ব শিক্ষা ব্যবস্থায় জীবন সম্পৃক্ত ছিল না বলেই স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক করে নিরক্ষরমুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। একটি সদ্য স্বাধীন ও বিধ্বস্ত অর্থনৈতির মধ্য দিয়ে জাতির পিতার তত্ত্বাবধানে ১৯৭৩ সালে রচিত বাংলাদেশের সংবিধানে সকল শিশুর বাধ্যতামূলক অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে ১৯৭৩ সালে ৩৬,১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এবং ১,৫৭,৭২৪ জন শিক্ষককে সরকারিকরণের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির সোপান রচনা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬,১৯৩টি রেজিস্টার্ড ও কমিউনিটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণসহ প্রধান শিক্ষকের পদকে দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা প্রদান করেন এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতনস্কেল একধাপ উন্নীতকরণসহ ১,০৫,৬১৬ জন শিক্ষকের চাকুরি সরকারিকরণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে এটি আরেকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

আদর্শ রাষ্ট্র গঠনে সুদক্ষ জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। আর এর মূলে কাজ করে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। আর মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হলে তার মূর উপাদান মানসম্মত পাঠ্যপুস্তক।কিন্তু ইতোপূর্বে কোমলমতি শিশুদের হাতে পুরতন ছেঁড়া ও মলিন পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়া হতো।এতে শিশুরা পাঠে আকর্ষণ হারিয়ে ফেলতো।

পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়গুলোতে কিছু নতুন বই সরবরাহ শুরু হলে কিছু সংখ্যাক ভাগ্যবান শিশু নতুন বই পেলেও অন্যদেরকে পুরতন মলিন পাঠ্যপুস্তক গ্রহণ করতে হতো। এতে কোমলমতি শিশুদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হতো। যা তাদের বিদ্যালয় ও পড়াশুনার প্রতি বিমুখ করে করে তোলে। বিষয়টি উপলব্ধি করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিক পর্যায়ে ২০১০ শিক্ষাবর্ষ এনসিটিবির কারিকুলাম অনুসরণে সকল ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীদের মাঝে শতভাগ নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রদান করেন।

বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দেশের সকল ক্যাটাগরির প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বইয়ের চাহিদা সংগ্রহ করে এনসিটিবির সহযোগিতায় দেশী-বিদেশী মুদ্রণ,বাঁধাই ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তক মূদ্রণপূর্বক সরাসরি দেশের সকল জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয়।বিদ্যালয়ের চাহিদা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ পাঠ্যপুস্তক শিশুদের হাতে পৌঁছানো নিশ্চিত করেন।

প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আমার বই ও খাতাসহ আরো ৬ ধরনের পঠন-পাঠন সামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের জন্য নিজস্ব বর্ণমালা সম্বলিত মাতৃভাষায় পাঠ্যবই প্রণয়ন এবং সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ২০১৭ সালে প্রথম প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে সারা দেশে ৫ টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা,ত্রিপুরা,গারো,সাদরী) শিক্ষার্থীদের মাঝে ৮ ধরনের পঠন-পাঠন সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

প্রতিবছর বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের আওতাধীন বিদ্যালয়গুলোতে বাংলা ও ইংরেজী ভার্সনে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ হচ্ছে। মিশনগুলোর মধ্যে সংযুক্ত আরব-আমিরাত, ওমান, বাহরাইন, সৌদি আরব, কুয়েত, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশের বিদ্যালয়গুলোকে সরবরাহের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক ব্যাগের মাধ্যমে বিনামূল্যের বই প্রেরণ করা হচ্ছে।

শিক্ষাবর্ষে শুরুতে প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী সফল কর্মসূচি। বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১০ পরবর্তী সময়ে প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেন এবং তারই আলোকে সারাদেশে একযোগে নতুন বছরের প্রথম দিন অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতে উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা হচ্ছে।

২০১৮ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩৪,১১,৮২৪ টি আমার বই ও ৩৪,১১,৮২৪ টি অনুশীলন খাতা বিতরণ করা হয়েছে এবং প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে ১০,৩৬,২৫,৪৮০ টি চার রঙের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে চার রঙের ৯,৮৮,৯৯,৮২৪ টি বই এবং প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ৩৪,২৮,০১০ টি আমার বই ও ৩৪,২৮,০১০ টি অনুশীলন খাতা বিতরণ করা হয়েছে।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুদের নিজস্ব বর্ণমালা সম্বলিত ৫ টি (চাকমা, মারমা,ত্রিপুরা,গারো,সাদরী) মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ৩৪,৬২২ টি আমার বই এবং ৩৪,৬২২ টি অনুশীলন খাতা এবং ১ম শ্রেণির ১,১৮,৯৩৫ টি ২য় শ্রেণির ৮৮,৬০৫ টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। ২০০৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে মোট ১,১৬,৫৫,৩৬,৮১৭টি পাঠ্যপুস্তক এবং ২০১৪-২০২০ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাঝে মোট ৪,৯১,২৯,৯২২টি আমার বই ও ২০১৭-২০২০ শিক্ষাবর্ষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের মাঝে মোট ৭,০৫,৭৩৯টি বই বিতরণ করা হয়েছে।

প্রতি বছরের ন্যায় ২০২০ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরের ২,০২,৮৪,০৫১ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৯,৮৫,০৫,৪৮০ টি পাঠ্যপুস্তক এবং প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ৩২,৭১,৫৭৮ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৩,৩৭,৬৩৮ টি আমার বই ও ৩৩,৩৭,৬৩৮ টি অনুশীলন খাতা বিতরণ করা হবে। এছাড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাঝে ২৮,৭৩৫ টি আমার বই ও ২৮,৭৩৫ টি অনুশীলন খাতা এবং ১ম শ্রেণির ৭৪,৮৪৭ টি, ২য় শ্রেণির ৭৩,৬৩৫ টি, ৩য় শ্রেণির ২৪,১৫১ টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে। আপদকালীন জরুরি প্রয়োজনে উপজেলা/থানা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বাফার স্টকে ২ শতাংশ বই বরাদ্দ থাকবে।

ইউনেস্কো কর্তৃক ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) সংক্রান্ত ১৭টি গোল এর মধ্যে শিক্ষা একটি। এসডিজি-৪ এ শিক্ষার ক্ষেত্রে মানসম্মত শিক্ষার কথা সর্বাগ্রে বলা আছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মানসম্মত পাঠ্যবই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। আপনারা জানেন যে, ইতোপূর্বে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) এর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যে অভিলক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তা আমরা অর্জন করেছি।

বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তি হার ৯৮ শতাংশ এবং ঝরে পড়ার হার ১৮ শতাংশের নীচে এসেছে। অচিরেই ইহা সিঙ্গেল ডিজিটে আনা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে সরকার ৫ বছর মেয়াদি ৪র্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) গ্রহণ করেছে। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প (৩য় পর্যায়)-এর ১ কোটি ৪০ লক্ষ উপকারভোগী মায়েদের মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শতভাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে (সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাসহ) উপবৃত্তির অর্থ বিতরণ করা হয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া অব্যহাত আছে।

জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নে বিশেষ করে শিক্ষার জন্য এসডিজি-৪ কর্মকৌশলটির সঠিক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পিইডিপি-৪ কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের লালিত স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়া। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ।

বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক বাস্তবমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করে জনসম্পদে রূপান্তরের ব্রত নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক কর্ম ও বাস্তবমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করে জনসম্পদে রূপান্তর করতে পারলে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ ও মেধাসম্পন্ন বাংলাদেশ বিনির্মানে সহায়ক হবে।



আর্কাইভ

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক স্বাভাবিক দিকে অগ্রসর হচ্ছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
নতুন আইজিপি বাহারুল ও ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত
পারমাণবিক আশ্রয়কেন্দ্র বানাচ্ছে রাশিয়া!
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ
ইলন মাস্কের রকেট উৎক্ষেপণ দেখতে হাজির ট্রাম্প
লেবাননে নিহত দুই শতাধিক শিশু: ইউনিসেফ
মার্তিনেজের ধাঁধানো গোলে জিতল আর্জেন্টিনা
পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পরিধি বাড়ালেন পুতিন
বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ সফল হয়নি: হাসনাত
যুক্তরাষ্ট্র-ফিলিপাইন সামরিক গোয়েন্দা তথ্য চুক্তি স্বাক্ষর