
শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | ফটোগ্যালারি | লাইফস্টাইল | শিরোনাম | সাবলিড » পাহাড়ে বর্ষবরণের উৎসবে শান্তির প্রত্যাশা
পাহাড়ে বর্ষবরণের উৎসবে শান্তির প্রত্যাশা
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিনিধি : পাহাড়ের নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বান্দরবানে চাকমাদের ‘বিঝু’ এবং তঞ্চঙ্গ্যাদের ‘বিষু’ উৎসব।
এ উপলক্ষে শনিবার সকালে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ ও শিশুরা বান্দরবানের সাঙ্গু নদীতে ফুল ভাসায়। এর মাধ্যমে পুরাতন বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেন তারা।
বিঝুর তাৎপর্য তুলে ধরে ফুল ভাসাতে আসা রিয়েলি চাকমা বলেন, “ফুল বিঝু মানে নদী ও পানির সঙ্গে একটা আধ্যাত্মিক বিশ্বাস। এই বিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা নদীকে পবিত্র মনে করি। নদী বা গঙ্গাকে সম্মান করে ফুল ভাসিয়ে ফুল বিঝু পালন করা হয়।”
বালাঘাটা এলাকার বাসিন্দা সুপ্রিয়া তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “প্রতি বছর ১২ এপ্রিল পুরাতন বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়। পুরাতন দুঃখ-কষ্ট ধুয়েমুছে নতুন জীবন গড়ব। নতুন স্বপ্ন দেখব।
“আমরা পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসী সম্প্রদায় সবাইকে এক সঙ্গে নিয়ে চলতে চাই। সবার সঙ্গে সহযোগিতা করে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই। এভাবে মঙ্গল কামনা করে গঙ্গা বা নদীকে পূজা করে বিঝুর ফুল ভাসিয়েছি।”বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য ও তঞ্চঙ্গ্যা কেন্দ্রীয় বিষু উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক রাজুময় তঞ্চঙ্গ্যা জানান, বিষু উপলক্ষে শনিবার বিকালে বান্দরবান সদর উপজেলার রেইছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বর্ষবরণের উৎসব পালন করা হবে। সেখানে তঞ্চঙ্গ্যাদের জাতীয় ঘিলা খেলা, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই এবং রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার অতিথি থাকার কথা রয়েছে।চাকমার ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়রা ফুল ভাসানোর দিন পালন করে ফুল বিঝু নামে, দ্বিতীয় দিন পালন করে ‘মূল বিঝু’ এবং শেষের দিন পালন করা হয় ‘গইজ্যাপইজ্যা’ নামে। এসব দিনে ‘পাচন’ নামে এক ধরনের খাবার রান্না হয়; যেগুলোতে থাকে হরেক রকম সবজি। উৎসবের দিনে বেড়াতে আসা অতিথিদের এই পাচন পরিবেশন করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ১১টি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বম, পাংখোয়া ও লুসাই- এই তিনটি সম্প্রদায় ছাড়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজন ভিন্ন ভিন্ন নামে বর্ষবরণ সামাজিক উৎসবটি প্রতিবছর পালন করে থাকে। পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের পার্বত্য চট্টগ্রামে ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু, মারমা ভাষায় সাংগ্রাই এবং চাকমা-তঞ্চঙ্গ্যা ভাষা বিঝু-বিষুকে একসঙ্গে ‘বৈসাবি’ও বলা হয়।
এদিকে বর্মী পঞ্জিকা অনুসরণকারী চাক সম্প্রদায় সাংগ্রাই, ম্রোরা চাংক্রান, খেয়াংরা সাংলান ও খুমীরা সাংক্রাই নামে বর্ষবরণ উৎসব শুরু করে থাকে। তাদের উৎসব শুরু হয় ১৩ এপ্রিল থেকে। তারাও হরেক রকমের ফুলে ফুলে সাজিয়ে তোলে ঘরদোর। নানান আনুষ্ঠানিকতায় বরণ করে নেয় নতুন বছরকে।
মারমাদের আট দিনের সাংগ্রাই উৎসব
এদিকে মারমাদের বর্ষবরণ উৎসব সাগ্রাই পোয়ে: উদযাপনে নয় দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বান্দরবানে মারমাদের উৎসব উদযাপন পরিষদ। তার মধ্যে ২ এপ্রিল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চূড়ান্ত খেলা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান করা হয়েছে।
শনিবার সুয়ালক থেকে শহরে রাজারমাঠ পর্যন্ত ম্যারাথন দৌড় ও রাজারমাঠে ফুটবল প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
রোববার সকাল ৭টায় রাজার মাঠ হতে মঙ্গল শোভাযাত্রা, সকাল ১০টায় নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি।
সোমবার দুপুর ২টায় রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার হতে বুদ্ধ মূর্তি নিয়ে যাত্রা এবং উজানী পাড়ার খেয়া ঘাটে বুদ্ধ স্নান করা হবে। এদিন রাত ৮টায় হবে পাড়ার বিভিন্ন স্থানে পিঠা উৎসব।
১৫ থেকে ১৮ এপ্রিল চার দিনব্যাপী শহরে রাজার মাঠে দুপুর ৩টায় শহরে রাজার মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, তৈলাক্ত বাঁশ আরোহণ, ঐতিবাহী লোকজ ক্রীড়ানুষ্ঠান ও মৈত্রী পানি বর্ষণ অনুষ্ঠিত হবে।