ভারতের হঠাৎ কেন এমন পদক্ষেপ
বিবিসি২৪নিউজ,কূটনৈতিক ডেস্ক: ভারতের স্থলপথ, বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করার পর এ সিদ্ধান্তের প্রভাব পর্যালোচনা করছে সরকার। বিষয়টি জানার পরপরই বুধবার রাতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোয় (ইপিবি) অংশীজনদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন। ওই সভায় উঠে এসেছে, ভারতের এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য ভারতকে অনুরোধ জানানো হবে না; বরং দেশের অবকাঠামো ও বন্দরসুবিধা উন্নয়নের মাধ্যমে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানান, ভারত হঠাৎ ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করলেও বাংলাদেশের সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, গতকালই (বুধবার) বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়েছে; এমনকি সেখানে ক্রেতারাও উপস্থিত ছিলেন। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আমরা সংকট কাটানোর চেষ্টা করব। নিজস্ব সক্ষমতায় প্রতিযোগিতায় যেন ঘাটতি না হয়, সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ কাজ করছে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা।
ভারতকে কোনো চিঠি দেওয়া হবে কি না-জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘এ মুহূর্তে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে না। ’
পাল্টা পদক্ষেপ ভারতের : ব্যবসায়ীদের ধারণা, বাংলাদেশ ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারত বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে। ২৭ মার্চ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিকেএমইএ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ স্থলপথে ভারতের সুতা আমদানি বন্ধের নোটিস দেয়।
এর পরপরই দেশটি ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দিল। আমাদের ধারণা হচ্ছে, এ দুটি বিষয় একটি আরেকটির সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে ভারতের এ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হলেও এতে রপ্তানিকারকদের তেমন কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই এমন মন্তব্য করে বিকেএমইএ প্রেসিডেন্ট বলেন, এর ফলে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিট সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তবে ভারত থেকে সুতা আমদানি বন্ধ করার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তাতে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে তিনি জানান। সূত্র জানান, দেশি সুতাশিল্পের সুরক্ষায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ মার্চ স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাকসুদা খন্দকারের স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে অন্য কোনো বন্দর বা বিমানবন্দর দিয়ে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির সুযোগ পান বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় পেট্রাপোল কাস্টমস থার্ড কান্ট্রির কোনো পণ্যের কার্পাস ইস্যু করেনি। ফলে বুধবার তৃতীয় কোনো দেশে রপ্তানির জন্য আনা চার ট্রাক পণ্য এবং বৃহস্পতিবার (গতকাল) একটি ট্রাক বেনাপোল কাস্টমস ভারতে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। দুই দিনে মোট পাঁচটি পণ্যবাহী ট্রাক ভারতে রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি।