
বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম » জাতিসংঘে তুলে ধরল বাংলাদেশে বর্বরতার চিত্র
জাতিসংঘে তুলে ধরল বাংলাদেশে বর্বরতার চিত্র
বিবিসি২৪নিউজ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জুলাই ও আগস্টে বাংলাদেশে বর্বরতার চিত্র আবারও তুলে ধরল জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর। বুধবার জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৮তম অধিবেশনের আলোচনায় বিক্ষোভরত মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ এবং দমন-পীড়নের লোমহর্ষক চিত্র উঠে এসেছে।
ভিকটিমদের মর্মস্পর্শী বর্ণনায় অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তাদের মতে, একটি বুলেট কেবল একজনকেই আহত বা নিহত করেনি; বরং গোটা পরিবারকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। ক্ষতিপূরণ দিয়েই এর পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে না। এর একটা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান প্রয়োজন। হতাহতদের কষ্টের কথার পাশাপাশি ভিকটিমদের ক্ষত সারাতে তাদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি, আহতদের চিকিৎসা এবং বর্তমান ব্যবস্থার সংস্কারের প্রতি সমর্থন উঠে আসে আলোচনায়। সংস্কারে মানবাধিকারকে কেন্দ্রে রাখার প্রতি আহ্বানের বিষয়টিও সামনে আসে।
জাতিসংঘ মানবাধিকাধিকার দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা সামদানির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক, বাংলাদেশের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি ফারহানা শারমিন ইমো, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ মির মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মির মাহমুদুর রহমান দীপ্ত, গুম হওয়া যুবদল নেতা সুমনের বোন সানজিদা, আন্দোলনে অংশ নেওয়া ১৭ বছর বয়সি আইনের ছাত্রী নওশিন, নেদারল্যান্ডস, সৌদি সরকারের প্রতিনিধি আলোচনায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের তৈরি করা একটি প্রামাণ্য ভিডিও দেখানো হয়। ওই ভিডিওতে যাত্রাবাড়ীতে কীভাবে নিষ্ঠুরতা চালানো হয়েছে তার চিত্র উঠে এসেছে। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্টের সুপারিশমালা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সামনে তুলে ধরা হয়। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট তুলে ধরা হয়- যেখানে বলা হয়, জুলাই-আগস্টে এক হাজার চারশ মানুষ নিহত হয়েছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা প্রশ্নোত্তরের আলোচনায় অংশ নেন।
ভলকার তুর্ক তার বক্তৃতায় বলেন, সাবেক রাজনৈতিক নেতারা এবং নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মদদেই নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কারণ, বিক্ষোভে নারীরা সামনের সারিতে ছিল এবং তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এমন সব অপরাধের ব্যাপারে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা মূল বিষয়। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার করা যায়। তিনি অবশ্য বিচারের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড যে মানবাধিকারের লঙ্ঘন সেই কথাটিও স্মরণ করিয়ে দেন।
তিনি আরও বলেন, সত্যটা প্রকাশ হওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এ সময় বাংলাদেশে ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলার স্মৃতি স্মরণ করেন। তারা আহত হয়েছেন। তাদের জীবনযাত্রা কীভাবে চলবে সেটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। সংস্কার কমিশন গঠনকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টের ঘটনা প্রমাণ করে যে, সংস্কারের কেন্দ্রে অবশ্যই মানবাধিকারকে রাখতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তিনি সংস্কারকে কেন্দ্রে রাখবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমর্থনও প্রয়োজন।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি জুলাই-আগস্টের বর্বরতার চিত্র সঠিকভাবে তুলে এনেছে। এই নিষ্ঠুরতার জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আইন সংস্কার করা হয়েছে। অনেককে গুম করা হয়েছে। আহত অনেককে চিকিৎসা নিতে দেওয়া হয়নি।
সংস্কারের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনের সুপারিশ জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্টেও সুপারিশের মতোই।
সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা রাজনৈতিক কারণে ঘটেছে। সংখ্যালঘুদের অনেকে সাবেক সরকারের দলের সঙ্গে যুক্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভোটের বিষয় সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রত্যেক নাগরিকের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
ফারহানা শারমিন ইমো পেশায় একজন আর্কিটেক্ট। তিনি বিক্ষোভের দিনগুলোতে হতাহতদের সহায়তা দিয়েছিলেন। শারমিন বলেন, একটি বুলেট শুধু একজনকেই আহত করে না। পুরো পরিবারকে হতাশার সাগরে ভাসিয়ে দেয়।
মুগ্ধর ভাই মির মাহমুদুর রহমান দীপ্ত তার ভাইয়ের আত্মত্যাগের চিত্র তুলে ধরে বলেন, এখন নতুন স্লোগান উঠেছে, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ/শেষ হয়নি যুদ্ধ’। সানজিদা বলেন, সত্য বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। নিষ্ঠুরতার অপরাধের বিচার হওয়া প্রয়োজন। নওশিন বলেন, গুলিতে আমার ভাই আহত হয়েছিল। তখন কোনো হাসপাতাল চিকিৎসা দেয়নি। ভাগ্যক্রমে আমার ভাই বেঁচে গেছে। একটা জেনারেশন ট্রমা হয়ে গেছে।