
বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | শিরোনাম | সাবলিড » জেলেন্সকি স্বৈরশাসক: ট্রাম্প
জেলেন্সকি স্বৈরশাসক: ট্রাম্প
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেন্সকিকে “নির্বাচন-বিহীন স্বৈরশাসক” বলে অভিহিত করেন। এর আগে জেলেন্সকি অভিযোগ করেন যে, ট্রাম্প একটি রাশিয়া-প্রভাবিত “ভুয়া তথ্য জগতে” বাস করছেন।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার তিন বছরব্যাপী যুদ্ধের ভবিষ্যৎ যখন অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝুলছে, ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশাল সামাজিক মাধ্যমে জেলেন্সকিকে লক্ষ্য করে বিষোদ্গার করেন। জেলেন্সকি আশঙ্কা করছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতা যুদ্ধ এমনভাবে শেষ করার চেষ্টা করছেন যা কিয়েভের চেয়ে মস্কোকে বেশি সুবিধা দেবে।
ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে জেলেন্সকি ইউক্রেনে নির্বাচন আয়োজন করতে অস্বীকার করেছেন। নির্বাচন ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রুশ আগ্রাসনের পর তা বিলম্বিত হয়।
ট্রাম্প অবজ্ঞার সুরে জেলেন্সকিকে একটি “মোটামুটি সফল কৌতুকাভিনেতা” হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, জেলেন্সকি “যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে ৩৫,০০০ কোটি ডলার খরচ করিয়েছেন, এমন এক যুদ্ধে ঢুকেছেন যা জেতা সম্ভব না, যে যুদ্ধ কখনোই শুরু হওয়া উচিত ছিল না, যে যুদ্ধের সমাধান তিনি (জেলেন্সকি) যুক্তরাষ্ট্র এবং ‘ট্রাম্প’ ছাড়া কখনোই করতে পারবেন না।”
যুক্তরাষ্ট্রের নেতা গত বছর রাজনৈতিক বিতর্কের সময় ইউক্রেন যুদ্ধে জয়ী হোক, এ’কথা বলতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “তিনি (জেলেন্সকি) একটা জিনিসই ভাল করতেন, আর তা হল (যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো) বাইডেনকে বাদ্যযন্ত্রের মত বাজিয়ে সামরিক সাহায্য আদায় করতেন।”
“আমি ইউক্রেনকে ভালবাসি, কিন্তু জেলেন্সকি অত্যন্ত বাজে কাজ করেছে, তার দেশ বিধ্বস্ত এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ কোন প্রয়োজন ছাড়াই মারা গেছে – এবং সেটা চলছেই …,” ট্রাম্প লেখেন।
সৌদি আরবে গত সপ্তাহে মঙ্গলবারের উচ্চপর্যায়ের রুশ-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠক থেকে ইউক্রেনকে বাদ দেয়ার জন্য ইউক্রেনীয় নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করার পর জেলেন্সকি সম্পর্কে ট্রাম্পের এই পর্যালোচনা আসে। রিয়াদে চার ঘণ্টা বৈঠকের পর দু’দেশের প্রতিনিধিরা জানায় তারা যুদ্ধ বন্ধের পথ খোঁজার জন্য শীঘ্রই আবার বসবেন।পুতিনের আশাবাদ
বুধবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, প্রতিবেশী ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তার দেশের তিন বছরের যুদ্ধের সমাধান হওয়ার আগে তার দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।
সেন্ট পিটার্সবার্গে পুতিন সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার ফলাফলে তিনি সন্তুষ্ট। তিনি এই আলোচনাকে “চমৎকার” বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এগুলো মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যকার বিবাদমান সম্পর্কের উন্নতির “প্রথম ধাপ।”
তবে তিনি বলেন, “রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আস্থার মাত্রা না বাড়িয়ে ইউক্রেন সংকটসহ অনেক সমস্যার সমাধান করা অসম্ভব।”
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরফ-এর নেতৃত্বে রিয়াদ আলোচনাটি ছিল ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের তিন বছরের বেশি সময়ের মধ্যে দুই পরাশক্তির মধ্যে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। রুশ আক্রমণ প্রতিহত করার লক্ষে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করতে পশ্চিমা প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউক্রেনীয় বা ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের কেউই সৌদি প্রাসাদের আলোচনার টেবিলে ছিলেন না। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে মারাত্মক সংঘাতের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করার জন্য উক্ত দুই পক্ষ ভবিষ্যতের আলোচনায় জড়িত হবে। তিন বছর আগে পরবর্তী সপ্তাহে মস্কো এই আগ্রাসন শুরু করে।
রাশিয়া ইউক্রেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভূখণ্ডের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি বারবার বলেছেন, তার দেশ সংঘাতের জোরপূর্বক নিষ্পত্তি মেনে নেবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কিয়েভের জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করলেও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প মস্কোর শুরু করা যুদ্ধের দ্রুত অবসানের জন্য চাপ দিচ্ছেন।
মঙ্গলবার তিনি বলেন, ইউক্রেনের “কখনোই এটি শুরু করা উচিত হয়নি।”কিয়েভে কেলোগ
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেন ও রাশিয়া বিষয়ক দূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রয়োজনীয়তা বোঝে। তিনি ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করতে ইউক্রেন সফরে গিয়েছেন।
জেনারেল কিথ কেলোগ কিয়েভে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ইউক্রেনে ইউক্রেনীয় নেতাদের উদ্বেগ ‘শুনতে’ এসেছেন এবং এরপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে পরামর্শ করতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবেন।
কেলোগ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান হোক। তিনি বলেন, এটি ওই অঞ্চল ও বিশ্বের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি কেলোগের সাথে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, যুদ্ধোত্তর কোনো সম্ভাব্য শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে কোনো আমেরিকান সেনা মোতায়েন করা হবে না। বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের মতো সহায়তা করার অন্যান্য উপায় রয়েছে।
কিয়েভে এই আলোচনা এমন সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো বুধবার সংঘাত এবং ইউক্রেনের প্রতি ইউরোপীয় সমর্থনের বিষয়ে দ্বিতীয় দফা আলোচনার জন্য ইউরোপীয় নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোসহ ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে।
এই সপ্তাহের শুরুতে কেলোগ ইউরোপীয় নেতাদের সাথেও সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সৌদি আরবে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সাথে আলোচনা করেন।
রুবিও বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়কেই ছাড় দিতে হবে।
রুবিও সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো এই সংঘাতের অবসান এমনভাবে করা যা ন্যায্য, টেকসই হবে এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।” ইউক্রেন বা ইউরোপীয় কোনো কর্মকর্তা আলোচনার টেবিলে ছিলেন না।