![BBC24 News](https://www.bbc24news.com/cloud/archives/fileman/bbc-logo.jpg)
বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় | সর্বশেষ সংবাদ » বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রণহীন দুর্নীতি : কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া সুফল মিলবে না
বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রণহীন দুর্নীতি : কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া সুফল মিলবে না
সম্পাদকীয়: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির স্কোরে আরও পিছিয়েছে বাংলাদেশ। ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ২৩, যা ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২৪ সালে অধঃক্রম অনুযায়ী (খারাপ থেকে ভালো) বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪তম; আগের বছর যা ছিল দশম। আর সূচকের উচ্চক্রম অনুযায়ী (ভালো থেকে খারাপ) অবস্থান ১৫১-তে নেমেছে। জার্মানভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআই’র দুর্নীতির ধারণাসূচক (করাপশন পারসেপশন ইনডেক্স বা সিপিআই)-২০২৪ সালের প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, দুর্নীতির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বে মঙ্গলবার একযোগে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এদিন বাংলাদেশে টিআই’র সহযোগী প্রতিষ্ঠান টিআইবি নিজস্ব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ সময় সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ৫ আগস্টের পর দেশে চাঁদাবাজি চলছে। তবে ব্যানারের পরিবর্তন হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের ১৩টি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের জরিপের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ রিপোর্ট তৈরি করে টিআই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তথ্যসূত্র হিসাবে ৮টি জরিপ ব্যবহৃত হয়েছে। এবারের সূচকের জন্য ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। টিআই’র প্রতিবেদনে দুর্নীতি প্রতিরোধে বেশকিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এগুলো হলো-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, দুদককে আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া এবং অবাধ গণমাধ্যম ও সক্রিয় নাগরিক সমাজ বিকাশে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা।
সিপিআই অনুযায়ী, দুর্নীতির ধারণার মাত্রাকে ০ (শূন্য) থেকে ১০০ (একশ)-এর স্কেলে নির্ধারণ করা হয়। এ পদ্ধতি অনুসারে স্কেলের ০ (শূন্য) স্কোরকে সর্বোচ্চ এবং ১০০ স্কোরকে সর্বনিম্ন দুর্নীতি বলে ধারণা করা হয়। ২০২৪ সালে ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৩, আগের বছর পেয়েছিল ২৪। তবে টিআই’র প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের চার ধাপ এগিয়ে যাওয়ার কারণ এদেশে দুর্নীতি কমেছে, তা নয়। বরং অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। গত বছর বেশি নম্বর পেয়েও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পেছনে। এ বছর কম নম্বর পেয়েও বাংলাদেশ ৪ ধাপ এগিয়ে যাওয়ার কারণ হলো, অন্য কয়েকটি দেশের অবস্থান খারাপ হয়েছে। ফলে তারা বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়েছে। কিন্তু সামগ্রিক মূল্যায়নে বাংলাদেশ আগের বছরের চেয়ে নম্বর আরও কম পেয়েছে। সিপিআই অনুযায়ী, ১০০-এর মধ্যে ৯০ স্কোর পেয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ডেনমার্ক। অপরদিকে, সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ৮ স্কোর নিয়ে উঠে এসেছে দক্ষিণ সুদানের নাম।
টিআই’র রিপোর্টে দুর্নীতির বেশকিছু ধরনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো-ঘুস ও সরকারি তহবিল তছরুপ, ব্যক্তিগত লাভের জন্য কর্মকর্তাদের সরকারি অফিসের অবাধ ব্যবহার, সরকারি কাজে অতিরিক্ত লালফিতার দৌরাত্ম্য-যা দুর্নীতির সুযোগ বৃদ্ধি করে, সরকারি নিয়োগে স্বজনপ্রীতি এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় কায়েমি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর দখলদারি। দেশে দুর্নীতির যে উদ্বেগজনক ব্যাপকতা, তা নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের বিকল্প নেই। আশার কথা, অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতি রোধে সংস্কার কমিশন গঠনসহ বেশকিছু যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে তা যদি শুধু আলোচনার টেবিল এবং কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে, তবে বলাই বাহুল্য, এসব উদ্যোগ সাফল্যের মুখ দেখবে না। সরকার দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।