মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » আমেরিকা | আর্ন্তজাতিক | এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | শিরোনাম | সাবলিড » ফিলিস্তিন সংকট: দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান চান ট্রাম্প
ফিলিস্তিন সংকট: দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান চান ট্রাম্প
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানোর পর এবার কিছুটা ভিন্ন সুরে কথা বললেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফিলিস্তিন সংকটে ইতি টানার জন্য দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের আলোচনায় আগ্রহ দেখিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প বলেছেন, শিগগিরই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নিয়ে আলোচনা করবেন তিনি।
স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যবহৃত উড়োজাহাজ এয়ারফোর্স ওয়ানে করে যাত্রার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। এ আলাপচারিতায় গাজা প্রসঙ্গও ওঠে। ট্রাম্প বলেন, বহু বছর ধরে গাজা একটি ‘নরকে’ পরিণত হয়েছে। তিনি চান ফিলিস্তিনিরা এমন একটি এলাকায় বসবাস করুন, যেখানে তাঁরা কোনো ‘বাধা, যুদ্ধবিগ্রহ ও সংঘাত’ ছাড়া জীবন কাটাতে পারবেন।
তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান চান না—এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শিগগিরই ওয়াশিংটন সফরে আসছেন। তখন তিনি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করবেন। সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের খবর অনুযায়ী, আগামী রোববার যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর।
চলমান পরিস্থিতিতে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে কথা বলেছে কাতারও। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল–আনসারি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আমাদের অবস্থান সব সময় স্পষ্ট। আর (ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের) একমাত্র পথ হলো দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান।’
এর আগে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের মিসর, জর্ডান ও অন্যান্য আরব দেশে সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে মিসর ও জর্ডান। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসও তা খারিজ করে দিয়েছে। এরপরও সোমবার এয়ারফোর্স ওয়ানে যাত্রাকালে সাংবাদিকদের কাছে গাজার বাসিন্দাদের মিসর ও জর্ডানে সরিয়ে নেওয়া কথা তোলেন ট্রাম্প।
উত্তর গাজায় ফিরেছেন ৩ লাখ মানুষ
গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরুর পর উপত্যকাটিতে নিজেদের ঠিকানায় ফেরা শুরু করেছেন ফিলিস্তিনিরা। হামাসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার গাজার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চল থেকে উত্তরে ফিরেছেন তিন লাখের বেশি মানুষ। এর আগে জিম্মি মুক্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে দুই দিন উত্তরে যাওয়ার পথ বন্ধ করে রেখেছিল ইসরায়েল। সোমবার তা আবার খুলে দেওয়া হয়।
পথটি খুলে দেওয়ার পর গাজার উত্তরের দিকে যাত্রা শুরু করেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। প্রায় সবাই উপকূলঘেঁষা ২০ কিলোমিটারের এই পথ হেঁটে পাড়ি দিচ্ছেন। যেমন মা, বাবা ও ভাইকে নিয়ে উত্তরে যাচ্ছেন জামিল আবেদ। পথে ভিড়ের মধ্যে একবার তাঁদের হারিয়েও ফেলেন। রয়টার্সকে আবিদ বলেন, ‘প্রাইভেট কার, টুকটুক, গাধায় টানা গাড়ি—আমাদের নিয়ে যাওয়ার মতো কিছুই নেই।’
এ তো গেল পথের ভোগান্তির কথা। উত্তর গাজায় ফিরে ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ছে না ফিলিস্তিনিদের। ইসরায়েলের বোমা হামলায় তাঁদের বাড়িঘরগুলো মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। আবু মোহাম্মদ নামের একজন বলেন, ‘অবস্থা দেখুন। বলার কিছুই নেই। লোকজনকে মাটির ওপর ঘুমাতে হবে। এখানে কিছুই আর বাকি নেই।’
১৫ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এর আগে উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় নিহত হন ৪৭ হাজারের বেশি মানুষ। আহত হয়েছেন লক্ষাধিক। অন্যদিকে ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহত হন ১ হাজার ২০০ জন। একই সঙ্গে দেশটি থেকে প্রায় আড়াই শ জনকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা।
যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপের আলোচনা
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে তিন ধাপে। এখন ছয় সপ্তাহের প্রথম ধাপ চলছে। এই ধাপে মোট ৩৩ জিম্মিকে ইসায়েলের কাছে ফেরত দেবে হামাস। বিনিময়ে কয়েক শ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত সাতজন জিম্মি ইসরায়েলে ফিরেছেন। আর ২৯০ জন ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলের কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতা করছে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা করতে এরই মধ্যে মিসরের রাজধানী কায়রোয় পৌঁছেছে হামাস নেতা মোহাম্মদ দারবিশের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল। দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা সফল হলে আরও ৬০ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। আর গাজা থেকে সামরিক বাহিনীকে পুরোপুরি সরিয়ে নেবে ইসরায়েল। তারপর শুরু হবে যুদ্ধবিরতির তৃতীয় ধাপ।
দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির আলোচনা সম্পর্কে হামাস নেতা সামি আল জুহরি বলেছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এই আলোচনা শুরু হবে বলে তিনি মনে করেন। আর ইতিবাচক অগ্রগতিও হবে বলে তাঁর বিশ্বাস। কারণ, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরু ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই নেতানিয়াহুর সামনে।