শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » আমেরিকা | আর্ন্তজাতিক | শিরোনাম | সাবলিড » লস অ্যাঞ্জেলেসে হঠাৎ জ্বলন্ত নরকের কারন কি?
লস অ্যাঞ্জেলেসে হঠাৎ জ্বলন্ত নরকের কারন কি?
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে নজিরবিহীন দাবানলে বিপুল আর্থিক ও মানবিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই সংকটের জন্য দায়ী কে? এই প্রশ্নটিই এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহর বেশ কয়েকদিন ধরেই নিয়ন্ত্রণহীন আগুনে পুড়ছে। শীত মৌসুমের শুরুতে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন এবং ব্যাপক সহায়-সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে। মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই দুর্যোগে কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন। এমনকি মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
আগুন নেভানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ
প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল থেকে পাসাডেনা পর্যন্ত পাঁচটি কমপক্ষে দাবানল নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা এখনো সফল হয়নি। বিদ্যুতের তারের সমস্যাকে এই আগুনের প্রধান কারণ হিসেবে দাবি করা হয়েছে এবং আগামী কয়েকদিন এই দাবানল অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে এবিসি নিউজ জানিয়েছে, মার্কিন সরকার প্রায় ১,৮০,০০০ বাসিন্দাকে তাদের বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে ৫০০ জন দমকল কর্মীকে সংবেদনশীল এলাকায় আগুন নেভানোর কাজে নিযুক্ত করেছে।
আগুনের প্রসার এবং ক্রমবর্ধমান ক্ষতি
এই দাবানলে ক্যালিফোর্নিয়ার ২,০০,০০০ হেক্টরের বেশি বনাঞ্চল, আবাসিক এলাকা এবং নগর অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। শত শত বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, যা এই বিপর্যয়ের ক্ষতির একটি অংশ মাত্র।
AccuWeather-এর প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই আগুনের কারণে সৃষ্ট ক্ষতির পরিমাণ ১৩৫ থেকে ১৫০ বিলিয়ন ডলার বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিহাসের অন্যতম বিধ্বংসী এই দাবানলে আমেরিকার সবচেয়ে দামি সম্পত্তিগুলোর কিছু ধ্বংস হয়েছে।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় নাকি ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা?
এদিকে দাবানলের কারণে শেয়ার মার্কেট ও বিমা শিল্পেও এর প্রভাব পড়েছে। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, বিমাকৃত সম্পত্তি থেকে এই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির পরিমাণ ৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
বাতাসের তীব্রতা এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই দাবানল আধুনিক আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো বিপর্যয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদের দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং সংকটের তীব্রতা বৃদ্ধি
দাবানল ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো- প্রাকৃতিক সম্পদ ও বনাঞ্চলের দুর্বল ব্যবস্থাপনা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন সরকার বন ব্যবস্থাপনার জন্য বাজেট কমিয়েছে। যার ফলে সেখানে শুকনো শাখা-পাতার মতো প্রচুর দাহ্য বস্তু জমা হয়েছে।
পর্যবেক্ষণের জন্য নতুন প্রযুক্তি এবং দক্ষ কর্মীর অভাবের কারণে এই সংকট প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এসব দুর্বলতার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মিলিত হয়ে আগুনের তীব্রতা এবং বিস্তার বাড়িয়েছে।
অবকাঠামোর অদক্ষতা এবং সরকারের বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া
অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব, দমকল সরঞ্জামের ঘাটতি এবং পানি সরবরাহের সীমাবদ্ধতা এই বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণকে কঠিন করে তুলেছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া জানাতে বিলম্ব হওয়াটাও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন; উপেক্ষিত নীতিনির্ধারণ
জলবায়ু পরিবর্তনও ক্যালিফোর্নিয়ার এই দাবানল ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। যা মার্কিন সরকারের নীতিতে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া এবং ঘন ঘন খরার কারণে সেখানে দাবানলের আদর্শ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাব
আগামী ২০ জানুয়ারি শপথগ্রহণের মাধ্যমে আবারও হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজমকে এই দাবানলের জন্য দায়ী করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের পরিবেশ নীতির দুর্বলতাগুলোও এই সংকটের মধ্যে আরও স্পষ্ট হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন অস্বীকার এবং পরিবেশগত বাজেট কমানোর জন্য তাকে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ দাবানল শুধু একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়; এটি কাঠামোগত ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার ফলও বটে। সূত্র: মেহের নিউজ এজেন্সি