বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪
প্রথম পাতা » জাতীয় | প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম | সাবলিড » রোহিঙ্গারা আসতে চাইলে আমরা তাদের গ্রহণ করবো: ড. ইউনূস
রোহিঙ্গারা আসতে চাইলে আমরা তাদের গ্রহণ করবো: ড. ইউনূস
বিবিসি২৪নিউজ,অনলাইন ডেস্ক: নতুন করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলে সে ব্যাপারে তার সরকারের সিদ্ধান্ত কী হবে জানতে চাইলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘তারা যদি আসতে চায়, আমরা তাদের আসতে দেবো। আমরা তাদের গ্রহণ করবো।’
গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ভয়েস অব আমেরিকা বাংলাকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আনিস আহমেদ।
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ বা আগামী নির্বাচন কবে হবে এ ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হলেও উপদেষ্টা পরিষদ এ নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এ ব্যাপারে উপদেষ্টা পরিষদে কোনও আলোচনা হয়েছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আলোচনা করেছি কিন্তু সিদ্ধান্ত নেইনি।’
এর আগে বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করার মাধ্যমে দেশে আগামী আঠারো মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে যেন সক্ষম হয়, সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে তার দৃঢ় সমর্থন দিয়ে যাওয়ার কথা জানান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গত ২৩ সেপ্টেম্বর, বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।
সেনাপ্রধানের বক্তব্যের সূত্র ধরে ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে এ কথা থেকে কি ধরে নেওয়া যায় যে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হবে ১৮ মাস, এ প্রশ্নটি করা হলে, জবাবে ইউনূস বলেন, ‘সেটা আপনি ইচ্ছা করলে ধরতে পারেন। কিন্তু, সরকারের মতামত তো না সেটা। সরকার তো কোনও মত দেয়নি এ পর্যন্ত। কাজেই সরকার কখন মেয়াদ ঠিক করবে সেটা সরকারকে বলতে হবে। সরকার না বলা পর্যন্ত সেটা তো সরকারের মেয়াদ হচ্ছে না।’
বিষয়টি পরিষ্কার করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান আরও বলেন, ‘আমাদেরই বলতে হবে। আমাদেরকেই বলতে হবে। আমাদের মুখ থেকে যখন শুনবেন তখন সেটাই হবে তারিখ।’
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের একটি দৃশ্যমান টানাপোড়েন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত, গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গে ইউনূস জানান, এটি একটি আইনগত বিষয় এবং আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দুই জনেরই, দুই দেশেরই স্বার্থ হলো অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলা। মাঝে মাঝে কতগুলা প্রশ্ন এসে যায়, যেখানে সম্পর্কে একটু চির ধরে। যেমন সীমান্তে গুলি করলো, বাচ্চা মেয়ে মারা গেলো, বাচ্চা ছেলে মারা গেলো, এগুলো মনে কষ্ট দেয়।…এটাতে আমরা মনে করি না যে সরকার ইচ্ছা করে, ভারতের সরকার ইচ্ছা করে এসব করেছে। যেসব কারণে এসব ঘটে, সে কারণগুলো যেন আমরা উৎখাত করতে পারি, যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, যাতে নিরাপদে মানুষ জীবন নিয়ে চলাফেরা করতে পারে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিল ছাত্ররা। অন্তর্বর্তী সরকারেও ছাত্রদের প্রতিনিধি রয়েছে। তবে সরকারের বাইরে যারা আছে এমন অনেক ছাত্রকে আমরা দেশের নানা ক্ষেত্রে, নানা প্রতিষ্ঠানে কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরাই দেশ চালাচ্ছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘চালানো উচিত বলছি। চালাচ্ছে বলছি না। চালানো উচিত। তরুণদের হাতে ছেড়ে দেওয়া, আমি বরাবরই বলে এসছি, এখানে এ দায়িত্ব পালন করার আগে থেকেই বলছি যে তরুণদের হাতে, কারণ তারাই তাদের ভবিষ্যৎ রচনা করবে।’
গত ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দুই মাসের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বধীন অন্তবর্তী সরকার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এই ক্ষমতা পেয়েছেন।
ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় দেড় মাস পরে, এই সময়ে সেনাবাহিনীর কমিশন অফিসারদের ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করলেন কেন এই প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনুস জানান, গণ-অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের ছাত্রদের হত্যা করাসহ পুলিশের গণবিরোধী ভূমিকায় জনগণের মধ্যে পুলিশের ব্যাপারে যে নেতিবাচক অনুভূতি তৈরি হয়, সে কারণে গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশের মনোবল ভেঙে যাওয়ায় পুলিশকে দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা যাচ্ছিল না। এ কাজে আনসার নিয়োগ করেও ফল আসেনি। তাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেনাবাহিনীকে দুই মাসের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
ডঃ ইউনূস বলেন, ‘নানা রকমের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। সমাবেশ হচ্ছে। তাতে, বিশেষ করে আমাদের পোশাক শিল্প কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের অসন্তোষ দেখা গেলো। সেগুলো নিয়ে মনে করলাম যে, এভাবে চলতে দিলে তো বাড়তে আরম্ভ করবে, তখন এ প্রসঙ্গ উঠলো যে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়ার জন্য।…তারা বলছে আমরা তো আছিই কিন্তু, আমাদেরকে তো কেউ পরোয়া করছে না। কারণ আমাদের তো কোনও ক্ষমতা নেই। আমাদের একটা ক্ষমতা থাকলে তারা হয়তো গণ্য করবে…তখন আমরা তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিলাম।’
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলো, বিশেষ করে পুলিশ হত্যার ঘটনাগুলো তদন্ত-বিচার করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যে যেখানে অপরাধ করেছে তার বিচার হবে। তা না হলে তো বিচার সম্পন্ন হবে না।’
এ সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধের জন্য পাকিস্তান সরকারের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া, সার্ক পুনরায় কার্যকরভাবে চালু করার ব্যাপারে পাকিস্তান, নেপাল, ভূটানের সঙ্গে জাতিসংঘ অধিবেশনের ব্যস্ততার ফাঁকে আলোচনা করা, সংবিধান সংস্কারসহ নানাক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়ে তার সরকারের উদ্যোগ ও অগ্রগতি, বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলোতে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে বাঙালিদের সাম্প্রতিক সংঘর্ষ ও সহিংসতা, রোহিঙ্গা সংকট ইত্যাদি বিষয়েও কথা বলেন।
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ি-বাঙালি সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত চার জন আদিবাসী মারা যান। এই ঘটনায় অর্ধশতাধিকের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। এই সংঘর্ষের জেরে বহু ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও বৌদ্ধ মন্দিরে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে ইউনূস বলেন, ‘এই তো আসলাম মাত্র। এতো বছরের একটা সমস্যা, আপনি দুদিনে আমাদের দিয়ে সমাধান করে দেবেন, আমরা একটা সমাধান নিয়ে আসবো এটা আশা করা তো ঠিক হবে না। একটা শান্তি চুক্তি হয়েছে, সে শান্তি চুক্তি বহু বছরের চেষ্টায় হয়েছে। সেই শান্তি চুক্তি বহাল করা যাচ্ছে না। মান্য করছে না। এখন কি সে শান্তি চুক্তি আবার নতুন করে করতে হবে? সেটা আমাদের সরকার পেরে উঠবে না। এটা পরবর্তীতে নির্বাচিত যে সরকার আসবে, তারা করবে।’
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন। সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন জনপ্রশাসন ও সংবিধান।
ভয়েস অব আমেরিকার সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করা তার সরকারের মূল লক্ষ্য।