শিরোনাম:
ঢাকা, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

BBC24 News
মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিক্ষাঙ্গন | শিরোনাম | সাবলিড » সারা দেশে বিক্ষোভ-অবরোধে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিক্ষাঙ্গন | শিরোনাম | সাবলিড » সারা দেশে বিক্ষোভ-অবরোধে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
১৭৪ বার পঠিত
মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সারা দেশে বিক্ষোভ-অবরোধে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

---বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা: সরকারি চাকরিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। রোববার মধ্যরাতের পর সোমবার দুপুর থেকে ফের আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ছাড়াও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের ওপর যতই হামলা-নির্যাতন হোক তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এদিকে সোমবার রাজধানীতে আন্দোলনে নেমেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। নতুন বাজারে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও কুড়িলে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন। এতে রামপুরা-কুড়িলগামী সড়কের উভয়পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন ডিএমপি কমিশনার।

রোববার মধ্যরাতে ঢাবি ক্যাম্পাসে বন্ধ করে দেওয়া হয় দ্রুতগতির মোবাইল ইন্টারনেট সেবা। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর রাজাকারসংক্রান্ত বক্তব্যের প্রতিবাদে রোববার রাত ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে বিক্ষোভ মিছিল করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

ঘণ্টাখানেক পর হলগুলো থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকেন তারা। রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসা কুয়েত মৈত্রী হলের এক ছাত্রী বলেন, ‘অন্যায্য কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলায় আমাদের অপমান করা হয়েছে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এটা কেউই করতে পারেন না। এর প্রতিবাদে আমরা এখানে এসেছি। শিক্ষার্থীদের অপমান করার অধিকার কারও নেই।’

রাত দেড়টা পর্যন্ত কয়েকশ ছাত্রছাত্রী টিএসসিতে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। দেড়টার পর ছাত্রীরা নিজ নিজ হলে ফিরে যান। পরে ছাত্ররাও তাদের হলে ফিরতে থাকেন। রাত ২টার কিছুক্ষণ আগে বুয়েটের কয়েকশ শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে নিজেদের ক্যাম্পাসে ফিরে যান। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপমান করায় রাতে শাহবাগে জড়ো হন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে সোমবার বেলা তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে কর্মসূচির ডাক দেন।

রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ : রোববার রাতের ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার দুপুর থেকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকেন ঢাবির শিক্ষার্থীরা। ধীরে ধীরে সেখানে জড়ো হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত ১০-১২ হাজার শিক্ষার্থী। বিকাল ৩টার পর সেখান থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমবেত হন। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘কে রাজাকার কে রাজাকার, তুই রাজাকার তুই রাজাকার’, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্র কারও বাপের না’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘আমার স্বাধীন বাংলায়, একের কথা চলে না’, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’, ‘লাখো শহিদের রক্তে কেনা, দেশটা কারও বাপের না’ অ্যাকশন-অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, হামলা-মামলা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা কোটা সংস্কারের একদফা দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছিলাম। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শিক্ষার্থীদের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি বাদে সবাইকে রাজাকারের নাতি-নাতনি বলে আখ্যায়িত করেছেন, যা অত্যন্ত অপমানজনক। আমরা এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই এবং এই বক্তব্য দ্রুত এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানাই।’

আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে কোটা সংস্কারের একদফা নিয়ে আন্দোলন করছি। কিন্তু আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে না। আমরা ক্লান্ত হইনি। আমরা আমাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে আরও কঠোর আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হব।

সারজিস আলম বলেন, আপনারা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি আমাদের সঙ্গে থাকেন কোনো বাধাই আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। ইতোমধ্যেই দেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য কলেজগুলো আন্দোলন শুরু করেছে। তিনি বলেন, ৫৬ শতাংশ কোটা কোনো যৌক্তিক সমাধান নয়, এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই কোটার যৌক্তিক সংস্কার। তাই দ্রুত সংসদের জরুরি অধিবেশন ডেকে এই কোটার যৌক্তিক সমাধান করুন।

ঢাকা মেডিকেলে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : কোটা সংস্কার ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আসেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রীর করা বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান। পরে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে পুনরায় ঢামেক ক্যাম্পাসে ফিরে যান।

নতুন বাজার-কুড়িলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যান চলাচল ব্যাহত : রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় আন্দোলন করেন বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকশ শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করলে নতুন বাজার এলাকায় যান চলাচল বন্ধ থাকে। এছাড়া কুড়িল এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের কারণে কুড়িল থেকে এয়ারপোর্টগামী সড়ক ও কুড়িল থেকে রামপুরাগামী সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। বিকাল ৪টার পর থেকে নতুন বাজার থেকে কুড়িল বিশ্বরোডগামী রাস্তায় যান চলাচল শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ দেখা যায়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে আসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে জবি ক্যাম্পাসের কাঁঠালতলা থেকে একটি মিছিল প্রধান ফটক দিয়ে বের হয়ে টিএসসির দিকে যায়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মেহেরুন্নেসা নিদ্রা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে আঘাত করেছে। এর প্রতিবাদে আমরা বিক্ষোভ মিছিল করছি। আমাদের মিছিলটি টিএসসি রাজু ভাস্কর্যে যাবে।

ঢাবি ছাত্রলীগের তিন নেতার পদত্যাগ : রোববার রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত ছাত্রলীগ থেকে তিন নেতা পদত্যাগ করেছেন। তারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখার গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক মাছুম শাহরিয়ার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখার মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক রাতুল আহামেদ ওরফে শ্রাবণ এবং আইন অনুষদ শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আশিকুর রহমান ওরফে জিম। তারা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

ঢাবিতে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় রোববার মধ্যরাতে ফোরজি নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আন্দোলনের পরপর মধ্যরাত থেকে তারা মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না।

রাজাকার স্লোগান রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল- আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান : নিজেদের রাজাকার বলে স্লোগান দেওয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতি গভীর অসম্মান প্রদর্শন বলে মন্তব্য করেছে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এ ধরনের স্লোগানধারীদের অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনটি। সোমবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাজ্জাদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান শাহীন এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান।

আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে শক্ত ব্যবস্থা- ডিএমপি কমিশনার : কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভঙ্গ করা হলে তা শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান। সোমবার সকালে রাজধানীর লালবাগে হোসাইনি দালান ইমামবাড়ায় পবিত্র আশুরা উদযাপন ও তাজিয়া মিছিল উপলক্ষ্যে ডিএমপির নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। কমিশনার বলেন, আদালত যে আদেশ দেবেন তার প্রতি শ্রদ্ধা থাকা এবং তা মেনে নেওয়া প্রতিটি নাগরিকের একান্ত কর্তব্য। আদালতের নিয়ম মানতে আমরা বাধ্য।

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ঢাবি ক্যাম্পাসে এনে হামলা করছে। বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ জন কর্মী আহত হয়েছেন। আন্দোলন দমন করার জন্য ছাত্রলীগ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের আন্দোলন চলবে। চিকিৎসা শেষ করেই আমরা ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মিছিল বের করব।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘অবমাননাকর’ আখ্যা দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুর পৌনে ১টা থেকে ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। কর্মসূচিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। রোববার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে আসা এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচি পালন করেন।

আন্দোলনকারীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, আপনারা কি শুনেননি, এরপরই বলা হয়েছে ‘কে বলেছে কে বলেছে, সরকার সরকার।’ আপনাদের কি আলাদা করে স্যাটায়ার বা সার্কাজমের ক্লাস নিতে হবে? তারা কেউ রাজাকার নন, তারা দেশপ্রেমিক। রাজাকার বলে তাদের মনোবল ভেঙে দিতে পারবেন না। তারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন। তাদের এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক ও ছাত্র হিসাবে আমাদের দাবি উত্থাপন করতে রাজপথে এসেছি। কিন্তু আমাদের সে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন তখনই হবে, যখন মেধাবীদের মূল্যায়ন করা হবে। দাবি আদায় না হলে আমরা রাজপথ ছাড়ব না। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি নও, আমি নই, রাজাকার’, ‘কে বলেছে, কে বলেছে, সরকার সরকার’, ‘এক দুই তিন চার, মেধাবীরা রাজাকার’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘পুলিশ দিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’, ‘লড়াই হবে সেখানে, বাধা আসবে যেখানে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এর আগে রোববার রাতে একই দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ও প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাত সোয়া ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন তারা। এর আগে রাত পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। রাত সোয়া ১২টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় প্রধান ফটকটি তালাবদ্ধ থাকলে সেটি ভেঙে মহাসড়কে যান আন্দোলনকারীরা।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় : প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে রোববার রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শেষে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর সোমবার দুপুর ৩টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ববির গ্রাউন্ড ফ্লোরে ফের বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। এরপর মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার ও কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবি জানান।

শিক্ষার্থীরা বলেন, অধিকার চাইতে গিয়ে তাদের ‘রাজাকার’ বানিয়ে দেওয়া হলো। বাংলাদেশে কি ৯৯ শতাংশ মানুষ রাজাকার। কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবিতে তাদের আন্দোলন এবং তাদের অবমাননা করা হয়েছে।

হাবিপ্রবি: সোমবার দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে হাবিপ্রবির প্রধান ফটকে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের আন্দোলন শুরু করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু হয়ে ১নং এবং ২নং ফটক প্রদক্ষিণ করে।

মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকসংলগ্ন বটগাছের নিচে অবস্থান করে মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় প্রায় আধা ঘণ্টা বন্ধ ছিল দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কে যান চলাচল। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এরপরও মিছিল করেন আন্দোলনকারীরা। শিক্ষার্থীরা বলেন, যতদিন কোটার সঠিক সংস্কার হবে না, ততদিন তাদের আন্দোলন চলবে।

---গাইবান্ধা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাইবান্ধার উদ্যোগে সমন্বয়ক মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে ১নং রেলগেটে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহসমন্বয়ক জয়নুল ইসলাম, বিশ্বজিত রায় প্রমুখ। নেতারা বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, অপমানজনক বক্তব্য প্রত্যাহার ও সব শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নারী, প্রতিবন্ধী, অনুন্নত জনপদ, অনগ্রসর জাতিসত্তা ও বঞ্চিত শ্রেণির জন্য যৌক্তিক মাত্রায় কোটা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ জানান।

টেকেরহাট (মাদারীপুর) : কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে মাদারীপুরে পদযাত্রা করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা ১টার দিকে মাদারীপুর সরকারি কলেজ ও আহমাদিয়া কামিল মাদ্রাসাসহ একাধিক কলেজের শিক্ষার্থীরা পদযাত্রায় অংশ নেন। এর আগে বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা পৌর শহরের মাদারীপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে কোটাবিরোধী স্লোগান দেন। পরে আরও কয়েকটি কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পদযাত্রা করে প্রধান ফটকে গিয়ে শেষ করেন। এ সময় উভয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি তুলে দেন। মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশীদ খান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।

হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) : চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজার বালুর মাঠ থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি একাধিকবার পুরো বাজার প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্বরোড এলাকায় গিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে রূপ নেয়। সেখানে ৫ মিনিট অবস্থান করার পর হাজীগঞ্জ-ফরিদগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পংকজ কুমার দে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে অবস্থান কর্মসূচি ভেঙে আবারও বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল কলেজ, হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

জয়পুরহাট : কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি কটূক্তির প্রতিবাদে জয়পুরহাটে জেলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সোমবার সকালে জয়পুরহাট শহরের মাছুয়া বাজার এলাকায় অবস্থিত জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহিদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানে গিয়ে শেষ হয়। পরে তারা ওই ময়দানের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় : সোমবার বিকাল ৩টায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ছাত্র আন্দোলন চত্বর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে এসে শেষ হয়।

এদিকে এ ঘটনার পর কুবি শাখা ছাত্রলীগ রাজাকারবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ করেন বিকাল ৫টায়। বিক্ষোভ মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়।



আর্কাইভ

আগের লেনদেনে ফিরছে ব্যাংক
রাঘববোয়ালদের ধরতে সরকার কঠোর উদ্যোগ নিচ্ছে: অর্থ উপদেষ্টা
সরকারের সুস্পষ্ট আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে
সীমান্তে পিঠ দেখাবেন না, বিজিবিকে কঠোর নির্দেশনা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে জয়ে ফিরলো ব্রাজিল
গাজায় মা-শিশুর পোলিও টিকা কর্মসূচির মধ্যেই ইসরায়েলের হামলা, নিহত ২৭
জাতিসংঘে সার্ক নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান ড. ইউনূস
বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম, দিশেহারা সাধারণ মানুষ!
সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান গ্রেপ্তার
গণভবনকে জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত