রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » উত্তেজনা কমাতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া
উত্তেজনা কমাতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্প্রতি উত্তেজনা বেড়ে গেছে। এ উত্তেজনা থেকে পরিস্থিতি বিপজ্জনক সংঘাতের দিকে মোড় নিতে পারে। তাই উত্তেজনা কমাতে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলুসভ ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লয়েড অস্টিন ফোনালাপ করেছেন। গত শুক্রবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সম্ভাব্য উত্তেজনার ঝুঁকি কমানোর বিষয় নিয়ে দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলোচনা করেছেন।
উত্তেজনা নিরসনে বেলুসভের পক্ষ থেকে অস্টিনকে ফোন দেওয়া হয়। সম্প্রতি জার্মানিতে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনার বিষয়টি জানানো হলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে। জার্মানিতে সর্বশেষ দূরপাল্লার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছিল স্নায়ুযুদ্ধের সময়। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়, জার্মানিতে যদি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়, তবে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার মতো দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে।
এ ফোনালাপের বিষয়ে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, নিরাপত্তা হুমকি প্রতিরোধ এবং সম্ভাব্য উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকি কমানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।এদিকে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে পেন্টাগনের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাবরিনা সিং বলেন, ফোনালাপের সময় অস্টিন দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ চালু রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে উত্তেজনা সত্ত্বেও উভয় পক্ষ মাঝেমধ্যে ফোনালাপ করেছে। সর্বশেষ গত জুন মাসের শেষের দিকে কিয়েভকে অস্ত্র দেওয়ার ব্যাপারে ওয়াশিংটনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে মস্কো। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে যোগাযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ৭৫তম সম্মেলনে গত বুধবার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জার্মানিতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে হোয়াইট হাউসের এ পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলা হয়, ওয়াশিংটন নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধ সৃষ্টির জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং ইউক্রেনের সংঘাতে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাটোর তিন দিনব্যাপী ৭৫তম শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিনে বলা হয়, জার্মানিতে ২০২৬ সাল থেকে দূরপাল্লার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি এক যৌথ বিবৃতিতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণাটি দেয়।
ঘোষণা অনুযায়ী, জার্মানিতে পর্যায়ক্রমে টমাহক ক্রুজ, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র–বিধ্বংসী স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল বা এসএম-৬ ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হবে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব ক্ষেপণাস্ত্র আছে, সেগুলোর চেয়ে এসবের পাল্লা অনেক বেশি। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র নিষিদ্ধ করে ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু পাঁচ বছর আগে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যায়।নতুন হুমকিকে সামরিকভাবে মোকাবিলা’ করা হবে জানিয়ে রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেন, ‘এটা ধারাবাহিক উসকানির একটি যোগসূত্র মাত্র।’ ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে ভয় দেখাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন এই রুশ মন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির যৌথ বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের বিষয়টিকে প্রাথমিকভাবে সাময়িক সিদ্ধান্ত বলে বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ন্যাটো ও ইউরোপের সমন্বিত প্রতিরোধের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নিজের মাটিতে দূরপাল্লার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ন্যাটো সম্মেলনে জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চায়, আমরাও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ও সংগ্রহ করি। এ বিষয়ে জার্মানি ও ইউরোপের অন্য দেশগুলোকে উৎসাহ দিতেই যুক্তরাষ্ট্র এটি করেছে।’
পুতিনের হুমকি
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ন্যাটো জোটের সম্প্রসারণ ও অস্ত্র মোতায়েন নিয়ে আগেই হুমকি দিয়ে রেখেছেন। গত মাসে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেন, রাশিয়া কখনোই পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করবে না—পশ্চিমা বিশ্বের এমন অনুমান ভুল। পুতিন সতর্ক করে আরও বলেন, ‘রাশিয়ার পারমাণবিক নীতিকে হালকাভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। যদি এসব পশ্চিমা দেশ রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায়, তাহলে আমাদেরও একই ধরনের আচরণ করার অধিকার রয়েছে।’ এমনটাই মন্তব্য করেছেন পুতিন। তিনি বলেন, এমনটা হলে পরিস্থিতি খুবই জটিল হবে।