বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশ-চীন ২১ দলিল সই, ৭ প্রকল্প ঘোষণা
বাংলাদেশ-চীন ২১ দলিল সই, ৭ প্রকল্প ঘোষণা
বিবিসি২৪নিউজ, কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা: বিদ্যমান সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ থেকে ‘বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশদারিত্বে’ উন্নীত করতে ২১টি দলিল সই করেছে বাংলাদেশ ও চীন। দলিলগুলোর মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) নবায়ন। একই সঙ্গে আরো সাতটি প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার বেইজিংয়ের গ্রেট হলে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রিমিয়ার লি ছিয়াংয়ের উপস্থিতিতে দলিলগুলো সই হয়।
সেখানেই নতুন প্রকল্পগুলো ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর আগে গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য গ্রেট হল অব দ্য পিপলে পৌঁছালে তাঁকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল প্রাঙ্গণে পৌঁছালে চীনের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে স্বাগত জানান।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় মূলত রোহিঙ্গা ইস্যু, ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং চীনের প্রিমিয়ার নথি বিনিময় প্রত্যক্ষ করেন। বাসস জানায়, দলিলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ চায়না মিডিয়া গ্রুপের (সিএমজি) সঙ্গে সমঝোতা স্মারক ও সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার সঙ্গে একটি চুক্তিতে সই করেন। অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাতে সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা, ষষ্ঠ ও নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণ, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়ে চুক্তি সই হয়। স্বাক্ষরিত দলিলগুলো হলো ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক।
চায়না ন্যাশনাল ফিন্যানশিয়াল রেগুলেটরি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনএফআরএ) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে ব্যাংকিং এবং বীমা নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক। বাংলাদেশ থেকে চীনে তাজা আম রপ্তানির জন্য উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত (ফাইটোস্যানিটারি) উপকরণ বিষয়ে একটি প্রটোকল। এ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন নীতি সহায়তা ক্ষেত্রে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে দুই দেশ। বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সহায়তা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। বাংলাদেশে প্রকল্পে চায়না-এইড ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের ‘সম্ভ্যাবতা সমীক্ষা’ বিষয়ে আলোচনার একটি ‘সাইনিং অব মিনিটস (কার্যবিবরণী)’ও সই হয়েছে।
চীনের সহায়তায় ষষ্ঠ বাংলাদেশ-চায়না মৈত্রী সেতু সংস্কার প্রকল্পের চিঠি বিনিময় করেছে দুই দেশ। নাটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা পার্ক প্রকল্পে চায়না-এইড কনস্ট্রাকশনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বিষয়ে চিঠি বিনিময় হয়।
গতকালের বৈঠক শেষে চীনের সহায়তায় নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু প্রকল্প বিষয়ে চিঠি বিনিময় করেছে দুই দেশ। মেডিক্যাল সেবা এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সহযোগিতা শক্তিশালী করতে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ ও চীন।
বাংলাদেশ ও চীন গতকাল অবকাঠামোগত সহযোগিতা জোরদারে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। ‘গ্রিন অ্যান্ড লো-কার্বন’ উন্নয়ন বিষয়ে সহযোগিতা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে দুই দেশ। বন্যার মৌসুমে ইয়ালুজাংবু (ব্রহ্মপুত্র) নদের হাইড্রোলজিক্যাল তথ্য বাংলাদেশকে দেওয়ার বিধিবিষয়ক সমঝোতা স্মারক নবায়ন করেছে বাংলাদেশ ও চীন।
গণমাধ্যম খাতে সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ ও চীন গতকাল ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। এগুলো হলো—চীনের জাতীয় বেতার ও টেলিভিশন প্রশাসন এবং বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, সিএমজি ও বাসস, সিএমজি ও বিটিভি, সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি ও বাসস এবং সিনহুয়া ও বিটিভির মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
বাংলাদেশ ও চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করেছে। টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বিষয়েও একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
দুই দেশ গতকাল সাতটি ঘোষণাপত্র সই করেছে। এগুলো হলো—চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সমাপ্তি, চীন-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি ত্বরান্বিতকরণ নিয়ে আলোচনা শুরু, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি প্রকল্পের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের আধুনিকীকরণের সমাপ্তি, ডাবল পাইপলাইন প্রকল্পের সঙ্গে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের ‘ট্রায়াল রান’ সমাপ্তি, রাজশাহী ওয়াসা সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালু, শানদং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক এবং বাংলাদেশে লুবান ওয়ার্কশপ নির্মাণের ঘোষণা।