শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | ইউরোপ | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » রাশিয়ার সম্পদ থেকে ইউক্রেনকে ৫০ বিলিয়ন ডলার দেবে জি-৭
রাশিয়ার সম্পদ থেকে ইউক্রেনকে ৫০ বিলিয়ন ডলার দেবে জি-৭
বিবিসি২৪নিউজ,ইইউ প্রতিনিধি: রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ থেকে ইউক্রেনকে ৫০ বিলিয়ন ডলার ব্যবহার করতে দিতে সম্মত হয়েছে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭। এটি দেওয়া হবে ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তার জন্য।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এটা রাশিয়াকে আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া যে ‘আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি না’, তবে মস্কো এর পাল্টা হিসেবে ‘সর্বোচ্চ বেদনাদায়ক’ পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
এই অর্থ চলতি বছর শেষ হওয়ার আগে পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম কিন্তু এটিকে দেখা হচ্ছে ইউক্রেনকে যুদ্ধ ও দেশটির অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা হিসেবে।
ইতালিতে জি-৭ সামিটে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং বাইডেন ১০ বছর মেয়াদী একটি দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। চুক্তিটিকে কিয়েভ ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
এই চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক ও প্রশিক্ষণ সহায়তা দেবে কিন্তু এখানে ওয়াশিংটন সৈন্য পাঠিয়ে সহায়তা করবে এমন কোন প্রতিশ্রুতি নেই।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোতে রাশিয়ার প্রায় ৩২৫ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ফ্রিজ বা জব্দ করা আছে। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর এসব জব্দ করা হয়।
এসব সম্পদ থেকে বছরে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার সুদ আসে। জি-৭ এর পরিকল্পনা অনুযায়ী এই তিনি বিলিয়ন ডলার আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সরিয়ে ইউক্রেনের ৫০ বিলিয়ন ডলারের ঋণের বার্ষিক সুদ হিসেবে পরিশোধ করা হবে।
ইতালির পুগলিয়াতে এবারের জি-৭ সামিট হচ্ছে। সেখানেই এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, এই ৫০ বিলিয়ন ডলার ইউক্রেনের জন্য ব্যবহার করা হবে এবং রাশিয়াকে আরেকবার বার্তা দেয়া হচ্ছে যে ‘আমরা পিছপা হচ্ছি না’।
তিনি বলেন পুতিন “আমাদের অপেক্ষা করিয়ে রাখতে পারবে না, তিনি আমাদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করতে পারবেন না এবং আমরা যুদ্ধে জয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ইউক্রেনের পাশে আছি”।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আমেরিকা ও অন্য সহযোগী দেশগুলোকে তাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
নতুন নিরাপত্তা চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা সত্যিকার অর্থেই ঐতিহাসিক দিন এবং আমাদের স্বাধীনতার পর (১৯৯১) এটাই ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী চুক্তি।
জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, জাপান, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এসব দেশ ইউক্রেনকে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে।
চুক্তিটির প্রশংসা করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক একে ‘গেম চেঞ্জিং’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মে মাসে ইউক্রেনকে ৬১ বিলিয়ন ডলারের যে সামরিক সহায়তার কথা বলেছিলো যুক্তরাষ্ট্র তার তুলনায় এই ৫০ বিলিয়ন ডলারকে বড় সহায়তা হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে।
তবে কিয়েভে কেউ কেউ নগদ অর্থ সহায়তার জন্য চেষ্টা করছিলো। তারা চেয়েছিলো শুধু সুদ নয়, বরং জি-৭ দেশগুলোতে আটকে থাকা তিনশ বিলিয়ন ডলারের পুরোটাই ছাড়া দেয়া হোক। কিন্তু ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটি নাকচ করে দিয়েছে।
তবে যেহেতু এই অর্থ চলতি বছর শেষ হওয়ার আগে পৌঁছাবে না সে কারণে চলমান যুদ্ধে এর প্রভাব পড়বে সামান্যই।
এখনকার জন্য ইউক্রেন আরও অস্ত্রের দরকার বলে জানিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা সামলাতে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দরকার। একই সাথে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এফ-১৬ যুদ্ধবিমানও চাইছে তারা।
ইউক্রেন আশা করছে এগুলো এবারে গ্রীষ্মেই সেখানে পৌঁছাতে শুরু করবে। জি-৭ বৈঠকে জেলেনস্কি বলেছেন নতুন নিরাপত্তা চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানের বিষয়টি রয়েছে।
এই ঋণ চুক্তিকে ইউক্রেনের জন্য বড় ধরণের প্রতীকী বিষয় মনে করা হচ্ছে। কারণ দেশটির ওপর আগ্রাসন চালানো দেশকেই অর্থ দিতে বাধ্য করা হবে। আর এটা শুধু দেশটির পুনর্গঠনেই নয় বরং ইউক্রেনের নিজেকে আত্মরক্ষার জন্যও।
জেলেনস্কির একজন উপদেষ্টা বলেছেন, রাশিয়াকে শাস্তি দিতে পশ্চিমাদের এই পদক্ষেপ যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। যদিও এই ঋণের কারণে ইউক্রেন থেকে রাশিয়া সরে আসবে এমনটির সম্ভাবনা কম। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশী সম্পদ জব্দ করা আছে বেলজিয়ামে।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দেশগুলো রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করে ইউক্রেনকে দিতে পারে না।
জি-৭ এর সিদ্ধান্ত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাকারোভা ‘সর্বোচ্চ বেদনাদায়ক’ পাল্টা পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন