মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হামাস
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনাকে সমর্থন করে জাতিসংঘের প্রস্তাব গ্রহণ এবং বিস্তারিত আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস।
এর আগে সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তোলা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়।
সোমবার স্থানীয় সময় বিকালে (বাংলাদেশ সময় মধ্যরাত) নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪ সদস্য দেশের ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়। রাশিয়া এই প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল, তবে তারা ভেটো দেয়নি।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে তিনটি শর্ত উল্লেখ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে তিন ধাপে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। হামাস ইতোমধ্যে এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বলেছেন, তারা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন এবং বিস্তারিত আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। তবে ইসরায়েল এই প্রস্তাবটি মেনে চলবে তা নিশ্চিত করতে হবে ওয়াশিংটনকে।
আবু জুহরি বলেন, ‘গাজা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার এবং ইসরায়েলে জেলে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে গাজায় বন্দি জিম্মিদের মুক্তির শর্তও মেনে নিয়েছে হামাস।’
হামাসের এই সিনিয়র কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন এবং অবিলম্বে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে দখলদারিত্বকে (ইসরায়েল) বাধ্য করাই হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আসল পরীক্ষা।’
মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলছে ইসরায়েলে এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। নিরাপত্তা পরিষদের উত্থাপিত প্রস্তাবেই বলা হয়েছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং হামাসকেও এতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তিন ধাপের এই প্রস্তাবের প্রথম ধাপে— ছয় সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েলের সেনারা গাজার সমস্ত জনবহুল অঞ্চল থেকে সরে যাবে। শর্তানুযায়ী ওই সময়ের মধ্যেই হামাস ৭ অক্টোবরের হামলায় আটক করা আরও কিছু ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। পাশাপাশি ইসরায়েলকেও কিছু ফিলিস্তিনি জেলবন্দিকে মুক্ত করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপে সমস্ত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে। অন্যদিকে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনাবাহিনী সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে নেবে।
তৃতীয় ধাপে গাজায় নতুন করে ভেঙে পড়া ঘরবাড়ির পুনর্গঠন শুরু হবে। মানুষের কাছে আরও বেশি করে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।
ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র দেশে-বিদেশে প্রবল চাপের মুখে রয়েছে। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির একাধিক প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বাইডেন প্রশাসন সমালোচনার মুখে পড়েছিল। এবার নিজস্ব উদ্যোগে এমন প্রস্তাব এনে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন বাইডেন।
তবে বাইডেন এর আগেও বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তুলেছেন। কিন্তু হামাস স্বাগত জানালেও প্রতিবারই নেতানিয়াহু তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
গতকাল সোমবারের প্রস্তাবকেও হামাস স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল।
এদিকে হামাস ইসরায়েলের কাছে যুদ্ধের স্থায়ী অবসানের যে দাবি করছে ইসরায়েল একাধিকবার সেটি পুরোপুরি নাকচ করে দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে শান্তি পরিকল্পনা কার্যকর করা কঠিন হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। কারণ গাজায় হামাসকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার আগে ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ করতে প্রস্তুত নয়। এর মধ্যে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য মধ্যপন্থি নেতা বেনি গ্যান্টজ পদত্যাগ করায় কট্টরপন্থিদের ওপর নেতানিয়াহুর নির্ভরতা আরও বেড়েছে। কট্টরপন্থিদের চাপে নেতানিয়াহু এই প্রস্তাব মেনে নেন কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্র এর আগে জানিয়েছে হামাস সমর্থন জানালে এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের আশা দেখছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলেছেন। এই তথ্য জানিয়ে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘যদি যুদ্ধবিরতি চান, ‘‘হ্যাঁ’’ বলতে হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগ করুন।’
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, ‘গাজায় চলমান যুদ্ধের ইতি টানতে নতুন যে যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে, হামাস রাজি থাকলে ইসরায়েলও সেটি মেনে নিবে বলে আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র।’
মার্কিন গণমাধ্যম এবিসি নিউজকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে জন কিরবি বলেছেন, ‘যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাস রাজি হলে ইসরায়েলও “হ্যাঁ বলবে’’। আমরা এখন হামাসের কাছ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।’
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেছেন, ‘আজ আমরা শান্তির পক্ষে ভোট দিয়েছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, হামাস এই শর্ত মেনে নিলে ইসরায়েলও সম্মতি জানাবে। বিষয়টি নিয়ে সপ্তাহান্তে দুই পক্ষের সঙ্গেই আলোচনা চালিয়েছে মধ্যস্থতাকারীরা।