দেশে পানি-বিদ্যুতে দুর্ভোগের উন্নতি জরুরি!
ড.আরিফুর রহমান: দেশব্যাপী তীব্র দাবদাহের এ সময়ে পানি ও বিদ্যুৎ সংকটে নাকাল হচ্ছে রাজধানীবাসী। জানা যায়, মোহাম্মদপুর, ভাষানটেক ও আগারগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানি সংকট চলছে। পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় পানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। নগরবাসীর অভিযোগ-বিকল্প পানির গাড়ি চেয়েও সহজে পানি পাচ্ছেন না তারা; যদিও ঢাকা ওয়াসার দাবি-পানি সংকটের কথা জানামাত্রই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন তারা। অপরদিকে গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি রাজধানীতেও বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। বলার অপেক্ষা রাখে না, পানি ও বিদ্যুতের এ সংকট জনজীবনে দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে শিল্প খাতের উৎপাদন। গ্রামাঞ্চলে বিঘ্নিত হচ্ছে সেচকাজ।
এ বছর দেশে গরমের তীব্রতা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে তীব্র দাবদাহে হিট স্ট্রোকে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। এ অবস্থায় সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা অসুস্থ ব্যক্তি, শিশু ও বেশি বয়স্কদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে ঘরেও স্বস্তিতে নেই মানুষ। অন্যদিকে জীবিকার তাগিদে সাধারণ মানুষকে বাইরে বের হতেই হচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষের এছাড়া কোনো উপায়ও নেই। তারা রোদে পুড়ে, ঘাম ঝরিয়ে শ্রমের বিনিময়ে যে টাকা রোজগার করে, তাই দিয়েই তাদের পরিবার-পরিজনসহ জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। পানি সংকটের কষ্টটা তাদেরই বেশি। গরমে অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। এ সময় পান করার সুপেয় পানির সহজলভ্যতা জরুরি। অবশ্য ঢাকা ওয়াসা বলছে, পথচারীদের সুবিধার জন্য জনসমাগমস্থলে বিনামূল্যে খাবার পানির ব্যবস্থা করেছেন তারা। তবে বলা বাহুল্য, এ ধরনের ব্যবস্থা চাহিদার তুলনায় খুবই সীমিত। বাসাবাড়িতেও পানি সংকটের কষ্ট কম নয়।
গ্রীষ্মকালে পানির চাহিদা এমনিতেই বেড়ে যায়। এ সময় মানুষ বেশি পরিমাণে পানি পান করে এবং গোসল করে। তার ওপর এবার তীব্র গরমের প্রভাব পড়েছে পানি উৎপাদনে। এ সময় পানির স্তর নিচে নেমে যায়। বিদ্যুৎ সংকটেরও প্রভাব পড়ে পানি সরবরাহে। এ অবস্থায় পানির সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা কঠিন বৈকি। তবে যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সহনীয় করা সম্ভব। এ জন্য পানির অপচয় ও এ খাতের দুর্নীতি রোধ করতে হবে। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে অপচয় বন্ধের পাশাপাশি অবৈধ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করা প্রয়োজন। বস্তুত দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি নেই। জানা যায়, সোমবার রাতে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে। এ সময় ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। তবে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সঞ্চালন ও সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি হয়নি। সমস্যাটা মূলত সরবরাহ ব্যবস্থায়। সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি ছাড়াও বিদ্যুৎ সরবরাহে চরম অব্যবস্থাপনারও অভিযোগ রয়েছে। এসব সমস্যা দূর করা গেলে বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান হতে পারে। তাই এ দিকটিতে অবিলম্বে দৃষ্টি দেওয়া দরকার। নয়তো পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও এর সুফল পাবে না মানুষ ও শিল্প খাত।