রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪
প্রথম পাতা » আফ্রিকা | আর্ন্তজাতিক | শিরোনাম | সাবলিড » এমভি আবদুল্লাহ: জলদস্যুদের ঘিরে রেখেছে আন্তর্জাতিক বাহিনী
এমভি আবদুল্লাহ: জলদস্যুদের ঘিরে রেখেছে আন্তর্জাতিক বাহিনী
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সোমালিয়া উপকূলে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও এর ২৩ নাবিককে জিম্মি করে রাখা জলদস্যুদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে আন্তর্জাতিক বাহিনী ও সোমালি পুলিশ।
দস্যুদের সঙ্গে ভূমির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান শুরু করেছে সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড পুলিশ। শুক্রবার সোমালিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পান্টল্যান্ডের নুগাল পুলিশ বিভাগের কমান্ডারের বরাত দিয়ে বিবিসি এ খবর দিয়েছে।এর আগে ইইউর একটি যুদ্ধজাহাজ দস্যুকবলিত জাহাজের কাছাকাছি অবস্থান করে পাহারা দিচ্ছে এবং হেলিকপ্টারে জাহাজটিকে ঘিরে চক্কর দিচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে।
এদিকে চাপ মোকাবিলায় জলদস্যুরাও নিচ্ছে নানা কৌশল। হামলা মোকাবিলায় এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে বিমান বিধ্বংসী ‘কামান’ কিংবা স্টেনগানের মতো ভারী অস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে। আকাশের দিকে তা তাক করে রাখার একটি ছবিও প্রকাশ করেছে সেখানকার একটি গণমাধ্যম।
সরকারি, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বাহিনী ও জলদস্যুদের অনড় এবং পালটাপালটি এ অবস্থানের কারণে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, এ মুহূর্তে মুক্তিপণ দিয়েই নাবিকদের মুক্ত করা হবে নাকি অভিযানের মাধ্যমে এমভি রুয়েনের মতো জাহাজের নাবিক উদ্ধার ও জলদস্যুদের আটক করা হবে সেটিই দেখার বিষয়।
এ ক্ষেত্রে নাবিকদের জীবন বিপন্ন হওয়ার শঙ্কাও তৈরি হচ্ছে। যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, নাবিক ও জাহাজের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেভাবেই উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
জাহাজের মালিকপক্ষও জিম্মিদের যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধারে তাদের সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে ঈদের আগে তাদের মুক্ত করা যাবে কিনা এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি স্বজনদের। এতে স্বজনরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
সোমালিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পান্টল্যান্ডের নুগাল পুলিশ বিভাগের কমান্ডারের বরাত দিয়ে বিবিসি বলেছে, আন্তর্জাতিক বাহিনী সাগরে দস্যুদের ঘিরে ফেলেছে। অপরদিকে ভূমির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে কাজ করছে সোমালি পুলিশ।
এখন দস্যুদের সামনে দুটি উপায়, হয় সোমালি পুলিশের হাতে আত্মসমর্পণ করা, না হয় কিছুদিন আগে এমভি রুয়েন নামের একটি জাহাজ থেকে দস্যুদের যেভাবে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই একই রকম পরিণতি ভোগ করা।
অবশ্য এ ক্ষেত্রে মুক্তিপণ ছাড়াই জিম্মি নাবিকরা মুক্তি পাবেন নাকি তাদের জীবন বিপন্ন হওয়ার শঙ্কা আরও বাড়ছে সে বিষয়টি নিয়ে দোলাচল শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি আরও সংকটের দিকে যাচ্ছে কিনা তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।
শুক্রবার নাবিকদের জাহাজে থাকা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়েছে। প্রায় সব নাবিকই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন এমভি আবদুল্লাহর মালিকপক্ষসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।
নাবিকরা জানিয়েছেন, জাহাজে পানির সমস্যা হচ্ছে। দিনে এক ঘণ্টা তাদের পানি ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে। জাহাজটির অদূরে একটি বিদেশি জাহাজ টহল দেওয়ায় নাবিকদের বেশিরভাগ সময় ব্রিজে নিয়ে রাখা হচ্ছে। নাবিকরা ভালো আছেন বলেও তাদের পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন।
নাবিকদের স্বজনদের দেওয়া হচ্ছে সান্ত্বনা: জাহাজের মালিকপক্ষ জিম্মি নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের শনিবার বিকালে বারিক বিল্ডিং মোড়ে কেএসআরএমের প্রধান অফিসে ডেকে পাঠিয়েছে। সেখানে এসআর শিপিংয়ের সিইও মেহেরুল করিম তাদের সান্ত্বনা দেন।
জিম্মি উদ্ধারে সব রকম প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে এবং দ্রুত তাদের মুক্ত করে আনতে পারবেন বলে আশ্বস্ত করেন। সেখানে উপস্থিত জিম্মি নাবিকদের এক স্বজন এদিন সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, মুক্তিপণ দিয়েই জিম্মিদের ছাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা চলছে বলে তাদের জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য: শনিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জেলায় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সমন্বয় সভা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, গতবার যখন এমভি জাহান মনি হাইজ্যাক হয়েছিল তাদের মুক্ত করতে ১০০ দিন সময় লেগেছিল। এখন যত দ্রুত সম্ভব তাদের মুক্ত করার চেষ্টাই আমরা করছি। নাবিক ও জাহাজের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেভাবেই আমরা উদ্ধার করার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, জাহাজের মধ্যে কয়লা আছে, কয়লা একটি দাহ্য পদার্থ। সুতরাং এমন কিছু করা যাবে না, যাতে করে দাহ্য পদার্থ হুমকির সম্মুখীন হয়, জাহাজের ক্ষতি হয়। সেভাবেই আমরা এগোচ্ছি।
এমভি আবদুল্লাহতে বিমানবিধ্বংসী অস্ত্র মোতায়েন: সোমালি জলদস্যুরা জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে বিমানবিধ্বংসী অস্ত্র বসিয়েছে বলে এক্সে (টুইটার) এক পোস্টে তথ্য দিয়েছে দ্য ডেইলি সোমালিয়া।
২০ মার্চ দেওয়া ওই পোস্টে কাপড়ে ঢাকা একটি ভারী অস্ত্রের ছবি দিয়ে বলা হয়েছে, এমভি আবদুল্লাহতে বিমানবিধ্বংসী অস্ত্র বসানো হয়েছে।