নিত্যপণ্যের লাগামছাড়া দাম সরকারকে আমলে নিতে হবে?
বিবিসি২৪নিউজ,ড.আরিফুর রহমান: বাজারে নিত্যপণ্যের লাগামছাড়া দামে ক্রেতারা প্রতিনিয়ত নাজেহাল হচ্ছেন। চাল, ডাল, তেল, ব্রয়লার মুরগি, চিনি, লবণ, আটা-ময়দা-সব পণ্যই বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। মাছ-মাংস, সব ধরনের সবজি, আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম তো লাগামছাড়া। নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, একদিন আগেও এক কেজি আলুর দাম যেখানে ৪৫ টাকা ছিল, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এ অবস্থা প্রায় সব পণ্যের ক্ষেত্রেই। ফলে সংসারের বাড়তি খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সব শ্রেণির মানুষ। বাজার করতে এসে ক্রেতারা বলছেন, ঘরে নেওয়ার জন্য কী কিনব তা ভেবে ঘাম ঝরছে। এমন অবস্থায় অনেকেই বাধ্য হয়ে বাজারের ফর্দে কাটছাঁট করে পণ্য কিনে ঘরে ফিরছেন।
মূল্যস্ফীতির ফলে মানুষের ব্যয় বাড়লেও আয়ের ক্ষেত্রেও যদি সামঞ্জস্য থাকত, তাহলে এ সমস্যা ভয়াবহ রূপ নিত না। বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যয় বাড়লেও আয় বাড়েনি। ফলে মানুষ টিকে থাকার জন্য সঞ্চয় ভেঙে অথবা ঋণ করে খাচ্ছে। কিন্তু যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, তাদের সঞ্চয়ও নেই, কেউ ধারও দেয় না। এ অবস্থায় তারা সন্তানদের পড়ালেখা, চিকিৎসা খরচ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তাতেও না কুলালে খাবার খরচ কমিয়ে তিন বেলার পরিবর্তে এক বেলা খেয়ে দিন পার করছেন। যদিও এক্ষেত্রেও বাস্তবতা নিষ্ঠুর! কারণ সিন্ডিকেটের থাবা এখন গরিবের খাবারেও পড়েছে। উৎপাদন ও সরবরাহ ঠিক থাকলেও কারসাজি করে বাড়ানো হয়েছে ডাল, আলু ও ডিমের দাম। ফলে নিম্নআয়ের মানুষের খাবারের তালিকায় এখন ডাল, আলুভর্তা ও ডিমের জোগান দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে পণ্যের দাম হু হু করে বাড়লেও বাজার মনিটরিংয়ের অভাব স্পষ্ট।
বস্তুত গত কয়েক বছর ধরেই নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ঠুনকো অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাজার তদারকিতে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতার পর যখন পণ্য আমদানির ঘোষণা আসে, দেখা যায় দ্রুত সেই পণ্যের দাম কিছুটা কমে আসে। এদিকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রান্তিক পর্যায়ে উৎপাদনকারীরা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হন। আবার খুচরা বাজারে সেই পণ্যই ক্রেতারা অস্বাভাবিক মূল্যে কিনতে বাধ্য হন। মাঝে মধ্যস্বত্বভোগীরা সিন্ডিকেট গড়ে বিশাল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়, যা মোটেই কাক্সিক্ষত নয়। অভিযোগ রয়েছে, বাজার পর্যবেক্ষণে জড়িত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশের কারণেই এসব অসাধু ব্যবসায়ী পার পেয়ে যায়। অন্যান্য দেশে বাজারে কোনো পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির আগেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সিন্ডিকেটের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আগাম সতর্ক করে দেয়। আমাদের দেশে এ রীতি আছে কিনা তা সংশ্লিষ্টরাই ভালো বলতে পারবেন। নিকট অভিজ্ঞতা থেকেই এ ধরনের বিশেষ সংস্থাকে কার্যকর করা দরকার। সেই সঙ্গে বাজার ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার পাশাপাশি কারসাজিতে জড়িতদের চিহ্নিত করে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে, এটাই কাম্য।