বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০২৩
প্রথম পাতা » আইন-আদালত | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বিচারপতি ইমদাদুল হককে সতর্ক করলেন প্রধান বিচারপতি
বিচারপতি ইমদাদুল হককে সতর্ক করলেন প্রধান বিচারপতি
বিবিসি২৪নিউজ,আদালত প্রতিবেদক ঢাকা: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিনের জামিন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। আদালত তাদের জরিমানাও স্থগিত করেন। একই সঙ্গে দুজনের সাজার বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট।
এ মামলার শুনানিতে ‘দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’ বলে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে মন্তব্য করেন আদালত। মঙ্গলবার বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের একক বেঞ্চ ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আদিলুর ও নাসিরের করা আপিলের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি নিয়ে এই মন্তব্য করেন। অপরদিকে দেশকে জাহান্নামের সঙ্গে তুলনা করা বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদ শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন প্রতিবেদন মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে অবহিত করেছেন তিনি। প্রধান বিচারপতি মঙ্গলবার দুপুরের পর বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদকে তার খাসকামরায় ডেকে সতর্ক করেন। তিনি (প্রধান বিচারপতি) আরও সতর্কভাবে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য তাকে (বিচারপতি) পরামর্শ দেন। এ সময় আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরাও উপস্থিত ছিলেন।
এক দশক আগের ঘটনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের (আইসিটি) ৫৭ ধারার মামলায় ১৪ সেপ্টেম্বর আদিলুর ও নাসিরকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তারা কারাগারে আছেন। সাইবার ট্রাইব্যুনালের ১৪ সেপ্টেম্বর দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে আপিল করেন আদিলুর ও নাসির। একই সঙ্গে তাদের জামিন ও জরিমানা স্থগিত চাওয়া হয়। মঙ্গলবার বিষয়টি আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে শুনানির জন্য।
আদিলুর ও নাসিরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, রুহুল আমিন ভূঁইয়া ও মো. আহসানুজ্জামান ফাহিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম। ক্রমানুসারে বিষয়টি উঠলে আদালত কক্ষে থাকা ডায়াসের (আইনজীবী যেখানে দাঁড়িয়ে শুনানি করেন) সামনে গিয়ে দাঁড়ান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী।
তখন আদালত কক্ষে আসন (যেখানে আইন কর্মকর্তারা বসেন) থেকে দাঁড়িয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদেরও বক্তব্য আছে।’ তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘তাদের (আপিলকারীদের) আইনজীবীদের আগে বলতে দিন। আপনি আগেই লাফ দিয়ে উঠছেন কেন?…দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।’
পরে আদিলুর ও নাসিরের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানিতে বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় (আপিলকারীদের) দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। আদালত বলেন, ‘কী জন্য দিয়েছে?’ তখন এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘৫৭(২) ধারায় সাজা দিয়েছে।’ আদালত বলেন, ‘জামিনের আবেদন দিয়েছেন কি?’ তখন এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘জামিনের আবেদনও রয়েছে।’ এরপর শুনানিতে অংশ নিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম বলেন, তাদের (আদিলুর ও নাসির) বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দেওয়া, অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘তাহলে তাদের (আদিলুর ও নাসির) কম সাজা দিলেন কেন? তাহলে তো যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া উচিত ছিল। দুই বছর দিলেন কেন?’ পরে আদালত আদিলুর ও নাসিরের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে তাদের জরিমানা স্থগিত ও জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম বলেন, আদালতের মন্তব্যের বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে অসত্য-বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে আদিলুর ও নাসিরের বিরুদ্ধে মামলাটি হয়েছিল।
দেশকে জাহান্নামের সঙ্গে তুলনা করে শপথ ভেঙেছেন বিচারপতি : দেশকে জাহান্নামের সঙ্গে তুলনা করা বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদ শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন। এ বিষয়ে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে অবহিত করেছেন তিনি।
জানতে চাইলে তিনি জানান, উচ্চ আদালতের একজন বিচারপতি হিসাবে তিনি শপথ করেছেন, সংবিধান ও আইন সংরক্ষণ করবেন এবং রাগ-অনুরাগের বশবর্তী না হয়ে সবার প্রতি সমান আচরণ করবেন। এই অঙ্গীকার থেকে কখনো বিচ্যুত হবেন না। কিন্তু বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদ মামলার শুনানিতে দেশকে জাহান্নামের সঙ্গে তুলনা করে শপথ ভঙ্গ করেছেন। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। রাষ্ট্রের একজন প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসাবে বিষয়টি আমি প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে অবহিত করেছি।