শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » আমার প্রথম প্রশ্ন? আমাদের ওপরে কেন ভিসা নীতি ও স্যাংশন, প্রধানমন্ত্রী
আমার প্রথম প্রশ্ন? আমাদের ওপরে কেন ভিসা নীতি ও স্যাংশন, প্রধানমন্ত্রী
বিবিসি২৪নিউজ, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলছে তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘কথা নেই বার্তা নেই আমাদের ওপরে কেন ভিসা নীতি ও স্যাংশন দিতে চাচ্ছে। কি কারণে? আর মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার নিয়ে বললে আওয়ামী লীগই বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য আন্দোলন করেছে, রক্ত দিয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান শতরূপা বড়ুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা সংস্করণের ওয়েবসাইটে সাক্ষাৎকারের ভিডিও পোস্ট করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করা, গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য নিয়মিত তাগিদ দিয়ে আসছে, শতরূপার এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার প্রথম প্রশ্ন? হঠাৎ কথা নয় বার্তা নাই আমাদের ওপরে কেন ভিসা নীতি ও স্যাংশন দিতে চাচ্ছে। কি কারণে? মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার নিয়ে যদি বলে আমরা (আওয়ামী লীগ) বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য কত আন্দোলন করেছি, রক্ত দিয়েছি।’
‘অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য যত রকম সংস্কার করার দরকার তার সবই তো আমরা করেছি। ছবিসহ ভোটার তালিকা এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও মানুষের ভোটারের বিষয় সচেতন করা সবই তো আমরা করেছি। ‘আমার ভোট আমি দিবো যাকে খুশি তাকে দিব’ এই স্লোগান তো (আওয়ামী লীগ) আমি দিয়েই মানুষকে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অধিকাংশ সময় আমাদের দেশ মিলিটারি শাসন করেছে। তাদের সময় ভোট দেওয়া লাগেনি, তারা ভোটের বাক্স ভরে নিয়ে গিয়ে রেজাল্ট ঘোষণা করেছে। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করে আমরা একটি সুস্থ নির্বাচনের পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ ভোট সম্পর্কে অনেক সচেতন এটাও আমরা করেছি। সেক্ষেত্রে এ ধরনের স্যাংশন দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা সংস্থা, সেটা র্যাব হোক, পুলিশ হোক, কেউ যদি কোনো রকম অন্যায় করে সেটার বিচার হয়। এ বিচারে কেউ রেহাই পায় না। কেউ যদি কোনো রকম অতিরিক্ত কিছু করে সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের সংবিধান অনুযায়ী তার বিচার করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেখানে কি কারণে এরকম স্যাংশন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় গ্রহণ করার পর থেকে দেশে যত রকম নির্বাচন হয়েছে সবগুলো নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাতে মানুষ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে। বিভিন্ন সময় এটা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলার চেষ্টাও করছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তার ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতন। কেউ ভোট চুরি করলে তাদের ক্ষমতায় থাকতে দেয় না।’
‘১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল, দেড় মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ জনগণের আন্দোলনের তোপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। আবার ২০০৬ সালে ১ কোটি ৯৬ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করেছিল। সেই ভুয়া ভোটারদের নিয়ে যখন খালেদা জিয়া নির্বাচন করার ঘোষণা দিল তখন কিন্তু ইমারজেন্সি সরকার আসে। সেই নির্বাচন কিন্তু বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের দেশের মানুষ ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতন। অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এটা আওয়ামী লীগের দাবি ছিল। আন্দোলন করে সেটা বাস্তবায়ন করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন দিচ্ছে আরও স্যাংশন দিতে পারে এটা তাদের ইচ্ছা। আমাদের দেশের মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার, গণতন্ত্রের অধিকার, মৌলিক অধিকার, শিক্ষার অধিকারসহ সকল অধিকার আওয়ামী লীগ সরকারই নিশ্চিত করেছে। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এখন এই বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ নাই, মানুষের মধ্যে হাহাকার নেই। এমনকি বাংলাদেশে এখন বেকারত্বের হার মাত্র ৩ শতাংশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি করে দিয়েছি সেক্ষেত্রে মানুষ চাইলেই এখন কাজ করে খেতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরাই বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন-অগ্রগতি করেছি। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে আমরা কারিগরি শিক্ষার প্রতি জোর দিয়েছি। কাজ করে যেন খেতে পারে, বেকার যেন না থাকে। সেক্ষেত্রে আমেরিকা স্যাংশন দিয়ে যদি ভয়ভীতি দেখায়, ঠিক আছে আমেরিকা আসবে না। বাংলাদেশে এখন যথেষ্ট পরিমাণ কর্মসংস্থান আছে। তারপরও দেখি আমেরিকা স্যাংশন দিয়ে কি করে।’