হাসিনা-মোদি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক: যা জানা গেছে?
সম্পাদকীয়: বিশ্বের শিল্পোন্নত ও বিকাশমান অর্থনীতির জোট জি-২০-এর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের আমন্ত্রণে নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার বিকালে নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত দেড় ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে দুই নেতা উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান গভীর সম্পর্ক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি একে আরও এগিয়ে নিতে একমত হয়েছেন। বৈঠকের আগে দুদেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে। সেগুলো হলো কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনপিসিআই-এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক। তৃতীয় চুক্তিটির ফলে আশা করা যায় টাকা ও রুপির মধ্যকার লেনদেন আরও সহজ হবে।
জানা যায়, অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত দুই নেতার ওই বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ অবস্থা নিশ্চিতকরণে অবদান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বৈঠকের পর টুইটারে (বর্তমানে এক্স) পোস্ট দিয়ে নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। গত ৯ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক। এবারের আলোচনায় কানেক্টিভিটি, বাণিজ্যিক সংযুক্তি এবং আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।’
প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরের ফলে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টিও চূড়ান্ত হতে পারে। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে ভারতীয় গ্রিড ব্যবহারে দিল্লির সম্মতি দরকার বিধায় এক্ষেত্রে ত্রিপক্ষীয় (বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল) চুক্তির প্রয়োজন। এছাড়া বিদ্যুৎ আমদানিতে শুল্ক নির্ধারণের অমীমাংসিত বিষয়টিরও নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। নেপাল শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ফলে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ও অমীমাংসিত শুল্ক হার-এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ (রোববার) বৈঠকে বসছে এ সংক্রান্ত ‘মন্ত্রিসভা কমিটি’। এ বিষয়টি আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে এ কারণে যে, চুক্তি অনুযায়ী নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি হলে সেটি হবে অপেক্ষাকৃত সস্তা। কারণ নেপালে উৎপাদিত বিদ্যুৎ হচ্ছে জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে ভারতের অবস্থান এবং অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। নানা ক্ষেত্রে দুদেশের সম্পর্ক দৃঢ় হলেও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি, সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধের মতো কিছু বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। আশার কথা, দুই দেশের শীর্ষ নেতার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিস্তাসহ অমীমাংসিত ইস্যুগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কাজেই প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানিবণ্টন, সীমান্তে হত্যা বন্ধ এবং বিশেষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার (ভারত থেকে যে কোনো পরিস্থিতিতে জরুরি পণ্য আমদানি) বিষয়ে আশানুরূপ অগ্রগতি হবে, এটাই প্রত্যাশা।